ইসলামের বিধি অনুযায়ী রোজা ৪ প্রকার। যেমন : ১. ফরজ ২. ওয়াজিব ৩. সুন্নত ৪.নফল। না বোধক রোজা দুই প্রকার। যেমন : ১. মাকরূহ ও ২. হারাম।
ফরজ রোজা : রমজানের রোজা ফরজ। মান্নত ও কাফ্ফারার রোজা ওয়াজিব।
সুন্নত রোজা : নবী করীম সা: নিজে যে রোজা পালন করেছেন এবং উম্মতকেও পালন করতে বলেছেন, সেটাই সুন্নত রোজা। এর মধ্যে রয়েছে- ১. আশুরার রোজা, মহররম মাসের ৯ ও ১০ তারিখ ২. আরাফার দিনের রোজা, ৩. আইয়্যামে বীজের রোজা। অর্থাৎ প্রত্যেক চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজ।
নফল রোজা : উপরোক্ত তিন প্রকার বাদে বাকি সব ইতিবাচক রোজাই নফল রোজা। যেমনÑ শাওয়াল মাসের ছয়টি ও অন্যান্য রোজা।
মাকরুহ রোজা : শুধু শনিবার কিংবা রোববার রোজা পালন করা মাকরুহ। আশুরার দিনে শুধু একটি রোজা মাকরুহ। স্বামীর অনুমতি ছাড়া নারীর নফল রোজা মাকরুহ।
হারাম রোজা : বছরের পাঁচ দিন রোজা পালন করা হারাম। ১. ঈদুল ফিতরের দিন, ২. ঈদুল আজহার দিন, ৩. আইয়্যামে তাশরিকের দিনসমূহ অর্থাৎ ১১, ১২, ১৩ জিলহজ।
যারা রমজান মাসে রোজা ভাঙতে পারেন :
১. রোগগ্রস্ত : কোনো ব্যক্তি রমজান মাসে রোগগ্রস্ত হলে রোজা ভাঙতে পারেন। তবে পরে সেগুলো কাজা করতে হবে।
২. মুসাফির : কেউ যদি রমজান মাসে কসর নামাজ পড়ার দূরত্বে সফর করেন, তবে তিনি রোজা ভাঙতে পারেন। তাকেও পরে কাজা করতে হবে।
৩. নিফাস ও ঋতুবতী : সন্তান প্রসবের পর এবং মাসিক চলাকালে মহিলারা রোজা ভাঙবে। তবে পরে কাজা করতে হবে।
৪. গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারিণী : বড় ধরনের স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা থাকলে মহিলারা রোজা ভাঙতে পারে এবং প্রতিটি রোজার জন্য একজন মিসকিন খাওয়াতে হবে।
৫. অক্ষম : বৃদ্ধ বয়স বা এমন রোগাগ্রস্ত ব্যক্তি যার সুস্থ হয়ে ওঠার আশা নেই, এমন ব্যক্তিরা রোজা ভেঙে প্রতিটি রোজার জন্য একজন মিসকিন খাওয়াতে পারে।
রমজান ও রোজা
রমজান মাস মুসলমানের জন্য আল্লাহর বিরাট নিয়ামত। এ মাস কল্যাণ ও সৌভাগ্যপূর্ণ। এটি হচ্ছে নেক কাজের মৌসুম। এই মৌসুমে নেক কাজ করার সুযোগ অনেক বেশি। তাই একজন মোমিন নিজে ঈমান ও আমলকে উন্নত করার জন্য ১১ মাস অপেক্ষা করে। যারা বেশি বেশি নেক কাজ করে এই মাসকে কাজে লাগাতে পারে, তারা কতই না সৌভাগ্যবান! পক্ষান্তরে, যারা এই মাসকে কাজে লাগাতে পারে না, তারা অবশ্যই হতভাগ্য।
এক নজরে রমজান : ১. রমজান মাসের একটি নফল আদায় অন্য মাসের একটি ফরজ আদায়ের সমান (বায়হাকি)। ২. রমজান মাসে একটি ফরজ আদায় অন্য মাসে ৭০টি ফরজ আদায়ের সমান (বায়হাকি)। ৩. রমজান সবরের মাস, আর সবরের বিনিময় জান্নাত (বায়হাকি)। ৪. রমজান পারস্পরিক সহানুভূতি প্রকাশের মাস (বায়হাকি)। ৫. রমজান মাসে মুমিনের রিজিক বৃদ্ধি পায় (বায়হাকি)। ৬. রোজাদারকে ইফতার করালে সমান পরিমাণ সওয়াব পাওয়া যাবে অথচ রোজাদারের সওয়াব কাটা হবে না (বায়হাকি)। ৭. রোজাদারকে তৃপ্তিসহকারে খাওয়ালে হাউজে কাউসারের পানি পান করতে পারবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত পিপাসা লাগবে না। ৮. রমজানের প্রথম দশক রহমত, দ্বিতীয় দশক মাগফিরাত এবং শেষ দশক জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের। ৯. জান্নাতে ৮টি গেটের মধ্যে একটির নাম রাইয়ান, যে গেট দিয়ে রোজাদার ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না (বুখারি ও মুসলিম)। ১০. ঈমান ও আত্মসমালোচনার সাথে (নেকি লাভের আশায়) ইবাদত করলে আগের গুনাহখাতা মাফ হয়ে যাবে (বুখারি ও মুসলিম)। ১১. রোজাদারের জন্য দুটি সময় খুশিরÑ একটি হলো ইফতার করার সময়, অন্যটি আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের সময় (বুখারি ও মুসলিম)। ১২. রোজা সুপারিশ করে বলবে, হে আল্লাহ, আমি তাকে পানাহার ও প্রবৃত্তির দাবি পূরণে বাধা দিয়েছি, তার জন্য আমার সুপারিশ কবুল করুন। কুরআন বলবে, হে আল্লাহ আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বাধা দিয়েছি, তার জন্য আমার সুপারিশ কবুল করুন (বায়হাকি)। ১৩. রোজাদার ইফতার না করা পর্যন্ত ফেরেশতারা তার জন্য গুনাহ মাফের দোয়া করতে থাকে। ১৪. এ মাসে শয়তানদের শিকল দিয়ে বাঁধা হয়। ১৫. রমজানের প্রতি রাতে রোজাদারদের মুক্তি দেয়া হয়। ১৬. রমজান মাস বেশি দান সাদকা করার মাস। ১৭. রমজান মাস কুরআন নাজিলের মাস। ১৮. রমজান মাস কুরআন বিজয়ের মাস। ১৯. রমজান মাসের ওমরাহ একটি হজের সমান। ২০. রোজাদার ব্যক্তি শ্রমিকদের মতোই শেষ রমজানে পারিশ্রমিক লাভ করে। ২১. শাওয়ালের মাসের ৬টি নফল রোজা রাখলে পূর্ণ বছরের সওয়াব পাওয়া যায়। ২২. শেষ রাতের সাহরি (খাবার) বরকতময়। ২৩. তারাবিহ ও তাহাজ্জুদের কিয়াম দ্বারা অতীতের গুনাহ মাফ হয়ে যায়। ২৪. রোজা ত্রুটিমুক্ত করার জন্য ফিতরা আদায় করা হয়। ২৫. রমজানে শারীরিক রোগ-ব্যাধি দূর হয়ে যায়। ২৬. রোজা রাখলে নিন্দা গিবত চর্চা বন্ধ হয়ে যায়। ২৭. রমজানে তওবার দ্বারা গুনাহ মাফ হয়ে যায়। ২৮. রমজানে ক্ষুধা-পিপাসার ব্যথা অনুভবে মমত্ব ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি হয়। ২৯. রমজানের রোজার পুরস্কার আল্লাহ তায়ালা ঈদের দিনে দিয়ে খুশি করেন। ৩০. সমুদ্রের মাছও রোজাদারের জন্য দোয়া করে। ৩১. রমজানে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি সৃষ্টি হয়। লেখক : কবি, সাবেক শিক্ষক, অর্কিড স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সাভার, ঢাকা