আল্লাহর রাসুল মুহাম্মদ (সা.)-এর বয়স যখন চল্লিশ, তখন আল্লাহ সব মানবজাতির প্রতি রহমত হিসেবে তাঁকে ‘সমস্ত মানুষের জন্য সুসংবাদদাতা’ রূপে প্রেরণ করেন। আল্লাহ তাঁর আগে যত নবী প্রেরণ করেছেন, সবার সঙ্গে তাঁর এমন একটা অঙ্গীকার ছিল যে তিনি তাঁর প্রতি বিশ্বাস আনবেন, তাঁর সত্যতা সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবেন, তাঁর প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তাঁকে সাহায্য করবেন এবং তাঁর এই নির্দেশ, যারাই আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস আনবে, তাদের কাছে পৌঁছে দেবেন। এবং তারা সবাই অনুরূপভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করে গেছেন। আল্লাহ মুহাম্মদ (সা.)–কে বললেন, যখন আল্লাহ নবীদের অঙ্গীকার নিয়েছিলেন, তখন (তিনি বলেছিলেন) এই কিতাব ও হিকমত যা কিছু দিলাম, তার শপথ, তোমাদের কাছে যা আছে তার সমর্থক রূপে একজন রাসুল আসবে, তখন তোমরা তাকে বিশ্বাস করবে এবং সাহায্য করবে।
তিনি বললেন, ‘তোমরা কি রাজি আছ? গ্রহণ করেছ আমার এই অঙ্গীকার?’ তাঁরা বললেন, ‘আমরা গ্রহণ করলাম।’ তিনি বললেন, ‘তবে তোমরা এর সাক্ষী থাকো এবং আমিও তোমাদের সঙ্গে সাক্ষী রইলাম।’ এমনি করে আল্লাহ সব নবীর অঙ্গীকার আদায় করেছিলেন যে তাঁরা তার সত্য সাক্ষ্য দেবেন এবং তাঁর প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তাঁকে সাহায্য করবেন। তাঁরা (নবীগণ) সেই দায়িত্ব অর্পণ করে গেছেন, দুই একেশ্বরবাদী ধর্মে যারা তাঁদের প্রতি বিশ্বাস এনেছিল।
[তাবারির ভাষ্য: জনৈক লোক আমাকে একটা হাদিস বলেছিলেন সাদ ইবনে আবু আরুবার বরাত দিয়ে। সাদ সেটা পেয়েছিলেন আবুল জালদ বংশের কাতাদা ইবনে দিয়ামা আস-সাদুসির কাছ থেকে। সেই লোককে আমি সন্দেহ করি না। তিনি বলেছিলেন, ফুরকান নাজিল হয় ১৪ রমজান রাতে। অন্যরা বলেন, ‘না, তা নয়, নাজিল হয়েছিল ১৭ রমজানে।’ এর সমর্থনে তারা আল্লাহর কালামে সমর্থন খোঁজে, ‘আমরা আমাদের সেবকের কাছে আল-ফুরকানের দিনে যা নাজিল করেছি, সেই দিন দুই দলের দেখা হয়েছিল। কিন্তু সে তো রাসুল (সা.) এবং বহু-ঈশ্বরবাদীদের বদরের সাক্ষাৎকার। তা সংঘটিত হয়েছিল ১৭ রমজান তারিখে।’]
উরওয়া ইবনে জুবায়েরের সূত্রে আল-জহুরি বলেছেন, আয়েশা (রা.) তাঁকে বলেছেন যে আল্লাহ যখন মুহাম্মদ (সা.)–কে নবুয়তের সম্মানে ভূষিত করতে মনস্থ করলেন, তাঁর মাধ্যমে তাঁর সব বান্দার ওপর করুণা বর্ষণের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। নবুয়তের প্রথম যে চিহ্ন রাসুল (সা.)–এর ওপর তিনি আরোপ করেছিলেন, তা হলো সত্যিকারের দিব্যদৃষ্টি। তাঁর ঘুমের মধ্যে ভোরের আলোর মতো উজ্জ্বল আলো ফুটে উঠত তার মধ্যে। আয়েশা (রা.) বলেছিলেন, আল্লাহ তাঁকে নির্জনতা ভালোবাসার প্রবৃত্তি দিয়েছিলেন, নির্জনতার মতো এমন আর কিছুই তিনি ভালোবাসতেন না।
সাকাফি বংশের আবদুল মালিক ইবনে উবায়দুল্লাহ ইবনে আবু সুফিয়ান ইবনে আল-আলা ইবনে জারিয়ার ছিল অসাধারণ স্মরণশক্তি। তিনি কোনো এক প-িতের কাছ থেকে শুনে আমাকে বলেছিলেন যে আল্লাহ যখন রাসুল (সা.)-এর ওপর তাঁর নবুয়তের রহমত নাজিল করার নিয়ত করলেন, সেই সময় রাসুল (সা.) কাজ উপলক্ষে অনেক দূরে চলে যেতেন এবং দূরে সফর করতেন। চলে যেতেন সেই মক্কার সংকীর্ণ উপত্যকায়, উপত্যকার সুদূর অঞ্চলে, যেখানে দৃষ্টির সীমানায় কোনো বাড়িঘর ছিল না। যত পাথর তখন চোখে পড়ত তাঁর, যত গাছ চোখে পড়ত, সবাই বলত, ‘সালাম আলায়কুম, হে রাসুলুল্লাহ।’ শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) ডানে তাকাতেন, বাঁয়ে তাকাতেন, পেছনে তাকাতেন। কাউকে দেখতে পেতেন না। দেখতেন শুধু গাছ আর পাথর। এমনি করে দেখতেন আর শুনতেন। দেখতেন, শুনতেন এবং ওখানে থেকে যেতেন; আল্লাহর যতক্ষণ মর্জি হতো, ততক্ষণ তিনি থাকতেন। তারপর রমজান মাসে তিনি যখন হেরা পাহাড়ে ছিলেন, জিবরাইল (আ.) এলেন আল্লাহর রহমতের বাণীর উপহার নিয়ে। আল-জুবায়েরের পরিবারের একজন মক্কেল ওয়াহাব ইবনে কায়সান আমাকে বলেছেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে আল-জুবায়েরকে লেথাই বংশের উবায়দ ইবনে উমায়র ইবনে কাতাদাকে বলতে শুনেছি, উবায়দ, জিবরাইল এসে কেমন করে রাসুল (সা.)-এর প্রথম নবুয়ত প্রদান করলেন, তা আমাদের কাছে বলুন। উবায়দ আমার সামনে সব ঘটনা আবদুল্লাহর কাছে বর্ণনা করলেন। সে বর্ণনা হলো: রাসুল (সা.) অনালোকিত যুগের কুরাইশ রীতি অনুযায়ী এক মাসের জন্য হেরা পর্বতে নির্জনে তাহানুছ করতে যেতেন। তাহান্নুছ হলো ধর্মীয় ধ্যানমগ্নতা। আবু তালিব বলেন: সাউর এবং যিনি তাঁর বুকে শক্ত করে সাবিরকে স্থাপন করেছেন, তার শপথ এবং যাঁরা হেরা পাহাড়ে আরোহণ করে অবরোহণ করেছেন, তাঁদের শপথ। ওয়াহাব ইবনে কায়সান আমাকে বলেছেন, উবায়দ তাঁকে বলেছেন: প্রতিবছর রাসুলুল্লাহ (সা.) সেই মাসে নির্জনবাসে যেতেন, প্রার্থনা করতেন, যেসব দরিদ্র লোক তাঁর কাছে আসতেন, তাঁদের তিনি খাবার দিতেন। নির্জনবাসের এক মাস পর তিনি ফিরে আসতেন। কিন্তু প্রথমেই তিনি ঘরে প্রবেশ করতেন না, যেতেন কাবাঘরে, সাতবার অথবা যতবার আল্লাহর ইচ্ছা হতো ততবার প্রদক্ষিণ করতেন কাবাঘর। তারপর যেতেন নিজের ঘরে। যে বছর আল্লাহ তাঁকে রাসুল রূপে মনোনীত করলেন, সে বছর পর্যন্ত এই চলল। সে বছরে রমজান মাসে আল্লাহ তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁর ওপর রহমত নাজিল করলেন, সে বছর ও তাঁর অন্যান্য বছরের অভ্যাসমতো তিনি গিয়েছিলেন হেরা পর্বতে। তাঁর সঙ্গে ছিল তাঁর পরিবার। রাত হলো। এই সেই রাত, যে রাতে আল্লাহ তাঁকে সম্মানিত করলেন। তাঁকে নবুয়ত প্রদান করলেন, তাঁর এবং তাঁর মাধ্যমে তাঁর সব বান্দাকে রহমত করলেন। জিবরাইল (আ.) তাঁর কাছে নিয়ে এলেন আল্লাহর ফরমান।
রাসুলে করিম (সা.) বলেছেন, তিনি আমার কাছে এলেন। তিনি এলেন একটি রেশমি কাপড়ের আচ্ছাদন নিয়ে। কী যেন কী লেখা ছিল সেই আচ্ছাদনে। বললেন, ‘পড়ুন।’
আমি বললাম, ‘কী পড়ব?’ তিনি সেই আচ্ছাদন দিয়ে এমন জোরে আমাকে চাপ দিলেন, মনে হলো সেই বুঝি আমার মৃত্যু। তারপর ছেড়ে দিলেন। আবার বললেন, ‘পড়ুন!’
আমি বললাম, ‘কী পড়ব?’ তিনি আবার আমাকে জোরে ওই কাপড় দিয়ে চেপে ধরলেন। আবার আমার মনে হলো, এই আমার মৃত্যু। তিনি আমাকে ছেড়ে দিলেন। আবার বললেন, ‘পড়ুন।’
আমি বললাম, ‘কী আমি পড়ব?’ তৃতীয়বারের মতো তিনি আমাকে সেই বস্তু দিয়ে চেপে ধরলেন, আমার মনে হলো, এই আমার মরণ। আবার বললেন, ‘পড়ুন।’
আমি বললাম, ‘আমি তাহলে কী পড়ব?’ কথাটা এবার আমি বললাম তাঁর কাছ থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য, যাতে আবার তিনি তেমনি চেপে না ধরেন। তিনি বললেন:
পড়ুন আপনার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন, যিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন রক্তপি- থেকে। পড়ুন, আপনার প্রতিপালক মহামহিম, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে, যা সে জানত না। আমি পড়লাম। তিনি প্রস্থান করলেন। আমার মনে হলো কথাগুলো আমার হৃদয়ে গাঁথা হয়ে আছে।
[তাবারির ভাষ্য: ভাবাবেগে উচ্ছ্বসিত কবি এবং জিনে-ধরা মানুষকে আমি দুই চোখে দেখতে পারতাম না। আমি তাদের মুখের দিকে তাকাতে পর্যন্ত পারতাম না। মনে মনে বললাম, আমিও কবি বা জিনে-পাওয়া মানুষ হলাম, আমাকে ধিক!-কুরাইশরা কোনো দিন আমার সম্পর্কে এমন কথা বলতে পারবে না। আমি পাহাড়ের চূড়ায় উঠে ওখান থেকে ঝাঁপ দেব। আমি আত্মহত্যা করব, সেই হবে আমার শান্তি। যা আমি ভাবলাম, তা-ই আমি কাজে পরিণত করতে গেলাম।]
আমি যখন পাহাড়ের মাঝামাঝি জায়গায় এসেছি, তখন আসমানের দিক থেকে ভেসে আসা একটি স্বর শুনলাম, ‘হে মুহাম্মদ! আপনি আল্লাহর রাসুল। আমি জিবরাইল বলছি।’ মাথা তুলে আকাশের দিকে তাকালাম, কে কথা বলছে দেখার জন্য, আর কী পরম বিস্ময়, মানুষের বেশে জিবরাইল ওখানে, দুই দিগন্তে দুই পা, বলছেন, ‘হে মুহাম্মদ! আপনি আল্লাহর রাসুল আর আমি জিবরাইল।’ স্থির নেত্রে আমি তাকিয়ে রইলাম তার দিকে।
[তাবারির ভাষ্য: আমি তখন আমার সিদ্ধান্তের কথা ভুলে গেলাম।] না যেতে পারলাম সামনে, না যেতে পারলাম পেছনে। তারপর আমি তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলাম। কিন্তু আসমানের যেদিকে তাকাই, যেখানে তাকাই, সেখানেই দেখি তাঁর মুখ। ঠিক আগের মতো। ওখানে আমি দাঁড়িয়ে রইলাম, সামনে গেলাম না, পেছনে গেলাম না। তারপর একসময় খাদিজা (রা.) আমার তালাশে লোকজন পাঠালেন, মক্কার সব উঁচু এলাকায় খোঁজাখুঁজি করে তারা ফিরে গেল খাদিজা (রা.)-এর কাছে। আমি যেখানে ছিলাম, সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম। তিনি (জিবরাইল) তারপর প্রস্থান করলেন আমার কাছ থেকে। আমি তাঁর কাছ থেকে। আমি ফিরে এলাম আমার পরিবারের কাছে।
আমি খাদিজা (রা.)-এর কাছে এলাম; তাঁর পাশ ঘেঁষে বসলাম। তাঁর আরও কাছে ঘন হয়ে এলাম। খাদিজা (রা.) বললেন, ‘আরে আবুল কাসিম কোথায় ছিলেন আপনি? আল্লাহর কসম, আমি লোকজন পাঠিয়েছিলাম আপনাকে তালাশ করতে। মক্কার ওই দিকে উঁচু এলাকা তারা ঘুরে ফিরে এল।’
[তাবারির ভাষ্য: আমি তাকে বললাম, ‘সর্বনাশ আমার, আমি কবি হয়ে গেছি অথবা জিনে ধরেছে আমাকে।’ খাদিজা (রা.) বললেন, ‘ওই সব জিনিসের হাত থেকে রক্ষার জন্য আমি আল্লাহর আশ্রয় চাই, হে আবুল কাসিম। আল্লাহ আপনাকে ও রকম করবেন না, আপনার সত্যবাদিতা, আপনার বিশ্বস্ততা, আপনার সুন্দর চরিত্র এবং আপনার দয়ালু স্বভাবের খাতিরে। ওটা কিছুতেই হয় না, প্রিয় আমার। বোধ হয় কিছু দেখেছেন-টেখেছেন আপনি।’ আমি বললাম, ‘হ্যাঁ দেখেছি।]
তারপর আমি যা দেখেছি, তাঁকে তা বললাম। খাদিজা (রা.) তখন বললেন, ‘আনন্দ করুন, হে আমার পিতৃব্য ছেলে, মন প্রফুল্ল করুন। যাঁর হাতে খাদিজার প্রাণ তাঁর কসম, নিশ্চয়ই আমার আশা হচ্ছে, আপনি এই জাতির জন্য আল্লাহর নবী হবেন।’ তক্ষুনি তিনি উঠে পড়লেন। কাপড়চোপড় পরে রওনা হলেন চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবনে নওফেল ইবনে আসাদ ইবনে আবদুল উজ্জা ইবনে কুসায়ির উদ্দেশে। ওয়ারাকা খ্রিষ্টান হয়ে গিয়েছিলেন। বাইবেল ও ধর্মশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। তাওরাত আর বাইবেল যারা অনুকরণ করে, তাদের কাছ থেকে অনেক বিদ্যা আয়ত্ত করেছেন তিনি। তাঁর কাছে তিনি রাসুলে করিম (সা.) যা দেখেছেন, যা শুনেছেন সব বর্ণনা করলেন। ওয়ারাকা শুনে চিৎকার করে উঠলেন, ‘মারহাবা! মারহাবা! নিশ্চয়ই যাঁর হাতে ওয়ারাকার প্রাণ তাঁর কসম! আপনি যা বললেন তা যদি সত্য হয়, হে খাদিজা, তাহলে তাঁর কাছে পরমাত্মা নামুস (অর্থাৎ জিবরাইল) এসেছিলেন, যে জিবরাইল এর আগে এসেছিলেন মুসা (আ.)-এর কাছে। আরে তিনিই এই মানুষের নবী। তাঁকে প্রফুল্ল থাকতে বলবেন।’ খাদিজা (রা.) ফিরে এলেন রাসুলে করিম (সা.)-এর কাছে। ওয়ারাকা যা যা বলেছেন, সব তাঁকে বললেন। [তাবারির ভাষ্য: তাতে তাঁর ভয় কিছুটা প্রশমিত হলো।] এবং নির্জনবাস সমাপ্ত হলে পরে রাসুলে করিম (সা.) ফিরে এলেন মক্কায়। ফিরে এসে অভ্যাসমতো সর্বপ্রকার তাওয়াফ করলেন কাবাঘর। প্রদক্ষিণ করার সময় ওয়ারাকা এসে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন, বললেন, ‘ভ্রাতুষ্পুত্র, কী আপনি দেখেছেন এবং শুনেছেন আমাকে বলুন।’ নবী করিম (সা.) তাঁকে বললেন। সব শুনে ওয়ারাকা বললেন, ‘নিশ্চয়ই যাঁর হাতে ওয়ারাকার প্রাণ, তাঁর নামে শপথ, আপনি এই জাতির নবী। আপনার কাছে এসেছিলেন আল্লাহর দূত জিবরাইল, যিনি মুসার কাছেও এসেছিলেন। ওরা আপনাকে মিথ্যাবাদী বলবে, আপনাকে ঘৃণার চোখে দেখবে, আপনাকে তাড়িয়ে দেবে, আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। আমি যদি সেই দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকি, তাহলে আমি আল্লাহকে সাহায্য করব, কেমন সাহায্য করব, তা তিনি জানেন।’ ওয়ারাকা অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর একেবারে কাছে এসে তাঁর কপালে চুম্বন করলেন। রাসুল (সা.) এরপর চলে গেলেন আপন ঘরে। [তাবারির ভাষ্য: ওয়ারাকার কথা শুনে তাঁর আত্মবিশ্বাস বাড়ল, তাঁর উদ্বেগ কমল।] খাদিজা (রা.)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে আল-জুবায়ের পরিবারের একজন মুক্তি পাওয়া দাস ইসমাইল ইবনে আবু হাশিম আমাকে বলেছেন, খাদিজা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলেছিলেন, ‘হে আমার পিতৃব্য ছেলে, আপনার ঐশী দূত যখন আপনাকে দর্শন দিতে আসেন, তখন কি আপনি তাঁর আসা সম্পর্কে আমাকে জানাতে সক্ষম হবেন?’ তিনি বললেন, সক্ষম হবেন। খাদিজা (রা.) বললেন, এরপর তিনি এলে তাঁকে যেন রাসুল (সা.) জানান। সুতরাং, জিবরাইল যখন এলেন তাঁর কাছে, যেমন তিনি আসতেন প্রায়ই, রাসুলুল্লাহ (সা.) খাদিজা (রা.)-কে বললেন, এইমাত্র যিনি আমার কাছে এলেন, তিনি জিবরাইল।’ খাদিজা (রা.) বললেন, ‘উঠুন পিতৃব্য ছেলে, আসুন, আপনি আমার বাঁ ঊরুতে বসবেন।’ রাসুল (সা.) তা-ই করলেন।
খাদিজা (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘এখন আপনি তাঁকে দেখতে পাচ্ছেন?’
তিনি বললেন, ‘পাচ্ছি।’
খাদিজা (রা.) বললেন, ‘তাহলে আসুন, এবার আপনি আমার ডান ঊরুতে বসবেন।’
নবী করিম (সা.) তা-ই করলেন। খাদিজা (রা.) বললেন, ‘এখন আপনি তাঁকে দেখতে পাচ্ছেন?’ তিনি যখন বললেন তিনি এবারও দেখতে পাচ্ছেন, তখন খাদিজা রাসুলে করিম (সা.)-কে তাঁর কোলে উঠে বসতে বললেন। তা-ই করলেন রাসুলুল্লাহ (সা.)।
আবার জিজ্ঞেস করলেন রাসুল (সা.)-কে জিবরাইল (আ.)-কে তিনি দেখতে পাচ্ছেন কি না। রাসুলে করিম (সা.) বললেন, হ্যাঁ, তিনি দেখতে পাচ্ছেন। তখন খাদিজা (রা.) স্বরূপে আত্মপ্রকাশ করলেন, ঘোমটা সরিয়ে ফেললেন। তখনো রাসুলে করিম (সা.) তাঁর কোলে বসে। তখন তিনি প্রশ্ন করলেন, ‘এখন দেখতে পাচ্ছেন তাঁকে?’
রাসুলে করিম (সা.) বললেন, ‘না।’
খাদিজা (রা.) বললেন, ‘পিতৃব্য ছেলে, আনন্দ করুন, প্রফুল্ল হোন। আল্লাহর কসম, তিনি একজন ফেরেশতা, শয়তান নন।’
লেখক: ইবনে ইসহাক: ইবনে ইসহাকের পুরো নাম আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক বিন ইয়াসার। জন্ম ৭০৪ খ্রিষ্টাব্দে মদিনায়। তাঁর জীবনের সাধনা ছিল মহানবী (সা.)-এর জীবনী এবং তাঁর জীবৎকালে ইসলাম ধর্মের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় ঘটনার তথ্য সংগ্রহ ও সংকলন। সেই সাধনার ফসল তাঁর লিখিত গ্রন্থ ‘সিরাতে রাসুলুল্লাহ (সা.)’। এই লেখাটি এই গ্রন্থেরই আলফ্রেড গিয়োমের ইংরেজি অনুবাদ থেকে শহীদ আখন্দের অনুবাদকৃত। বাংলায় অনূদিত প্রথমা প্রকাশন’র বই থেকে সংকলিত।