শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০২:৪৪ পূর্বাহ্ন

লকডাউন বাড়লো আরো সাত দিন

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ৩০ মে, ২০২১

রবিবার (৩০ মে) মধ্যরাতে শেষ হওয়া বিধিনিষেধ (লকডাউন) আগামী ৬ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে আজ এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে। গতকাল রবিবার (৩০ মে) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব রেজাউল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপণে বলা হয়েছে, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে চলমান শর্তাবলী বহাল রেখে বিধিনিষেধের মেয়াদ আগামী ৬ জুন (রবিবার) মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়ানো হলো।
উল্লেখ্য, গত ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ৭ দিনের কঠোর লকডাউন শুরু হয়। পরে পাঁচ দফা লকডাউন বা বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ গত ২৩ মে থেকে ৩০ মে রবিবার মধ্যরাত পর্যন্ত বিধিনিষেধ বাড়িয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে আন্তঃজেলা বাস, লঞ্চ এবং ট্রেনসহ সব ধরনের গণপরিবহন চলার অনুমতি দেওয়া হয়। একইসঙ্গে হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো আসন সংখ্যার অর্ধেক মানুষকে বসিয়ে সেবা দেওয়ার অনুমতি পায়। বর্তমানে সরকারি বেসরকারি স্বায়ত্বশাসিত অফিস আদালত ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। তবে বিশেষ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ সরকারের নির্বাহী আদেশে সীমিত পরিসরে খোলা রয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিধিনিষেধ বাড়ানো বা তুলে দেওয়ার বিষয়ে সরকার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কারণ করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শঙ্কা হয়ে ঝুলে আছে। সবকিছু একেবারে খুলে দিয়ে মানুষের বেপরোয়া আচরণ নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে বিপর্যয় হতে পারে। আবার অফিস-আদালত দীর্ঘদিন বন্ধ করে রাখাও ক্ষতির কারণ হচ্ছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন সরকার। এখন সীমান্ত এলাকাগুলোতে লকডাউন দেওয়া হচ্ছে। সেটা বহাল রাখার সঙ্গে বেশি সংক্রমিত এলাকায় লকডাউন আরোপ করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনের ক্ষেত্রে জোর দেওয়াসহ কিছু বিধিনিষেধ তো থাকবেই। দেশে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় চলমান লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে।
ঈদের পরে সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী রবিবার মধ্যরাত পর্যন্ত বিধিনিষেধ থাকার কথা। নতুন করে বিধিনিষেধে কিছু উল্লেখ থাকছে কিনা সেটি জানতে প্রজ্ঞাপন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। উল্লেখ্য, শুরু থেকে প্রায় ৪৯ দিন দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও গত এক সপ্তাহ ধরে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে আন্তজেলাসহ সব ধরনের গণপরিবহন (বাস, ট্রেন ও লঞ্চ) চলছে। এর আগে বিধিনিষেধে একই জেলার মধ্যে গণপরিবহন চলতে পারতো। এক জেলা থেকে আরেক জেলায় গণপরিবহন বন্ধ ছিল।
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির ফলে ভারতের সীমান্তবর্তী সাত জেলায় লকডাউনের সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিশেষজ্ঞ কমিটি। রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্য–বিষয়ক কমিটির একজন সদস্য রোববার বলেছেন, শনিবার এক বৈঠকে বিশেষজ্ঞ কমিটি নওগাঁ, নাটোর, সাতক্ষীরা, যশোর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া ও খুলনা জেলায় লকডাউনের সুপারিশ করেছে। এসব জেলায় সংক্রমণ বেশি। এ ছাড়া নোয়াখালী ও কক্সবাজারের সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে কমিটি।
বিশেষজ্ঞ কমিটি এ সুপারিশ রোববার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানাবে। মন্ত্রণালয়ে রোববার বিকেলে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে সাত জেলার লকডাউনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ২৪ মে রাত থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় এক সপ্তাহের লকডাউন দেয়া হয়েছে। এদিকে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী চলমান সীমিত পর্যায়ের লকডাউন রোববার রাত ১২টায় শেষ হচ্ছে। তা আরো বাড়ানো হবে কি না সে বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানা যায়নি। একাধিক কর্মকর্তা মনে করছেন যে ঢিলেঢালা লকডাউন নিয়ে যত আলোচনা-সমালোচনাই হোক, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এটি ভালো কাজ করছে। তাই এটি আরো কিছুদিন চলা প্রয়োজন।
ভিয়েতনামে ভারত-ব্রিটেন মিশ্রণে করোনার হাইব্রিড ধরন শনাক্ত: প্রতিনিয়ত খোলস পাল্টাচ্ছে করোনাভাইরাস। এবার ভারতীয় স্ট্রেইন ও ব্রিটিশ স্ট্রেইনের মিশ্রণে হাইব্রিড ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে ভিয়েতনামে। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী নুয়েন থান লং শনিবার জানিয়েছেন, নতুন মিশ্রণ ভ্যারিয়েন্টটি বাতাসে ভেসে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম। অন্য ভ্যারিয়েন্টগুলোর থেকে অনেক বেশি সংক্রামক। খবর বিবিসির। প্রথম থেকেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখেছিল ভিয়েতনাম। এ পর্যন্ত মোট সংক্রমণ মাত্র ৬ হাজার ৩৯৬। মোট মারা গেছে মাত্র ৪৭ জন। কিন্তু এ বছরের এপ্রিল থেকে ছবিটা ভিন্ন। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রমণ।
ছোট্ট দেশটিতে মোট সংক্রমণের অর্ধেকের বেশি (৩৬০০ জন) হয়েছে এপ্রিল মাসে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী নুয়েন বলেন, আমরা জিন সিকোয়েন্সিং করছিলাম। তাতে এক করোনা রোগীর দেহে এমন একটি স্ট্রেন মিলেছে, যেটি ভারতীয় ও ব্রিটেন স্ট্রেইনের মিশ্রণ। আরও ভেঙে বললে, এটি আসলে ছিল ব্রিটিশ স্ট্রেইন। তার সঙ্গে মিশেছে ভারতীয় স্ট্রেইন। ভিয়েতনামের একটি দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছেÍ খুব শিগগির আনুষ্ঠানিকভাবে স্ট্রেইনটির বিষয়ে ঘোষণা দেবে সরকার।
এ পর্যন্ত সাতটি স্ট্রেইন চিহ্নিত হয়েছে ভিয়েতনামে। বি.১.২২২, বি.১.৬১৯, ডি৬১৪জি, বি.১.১.৭ (ব্রিটিশ স্ট্রেইন), বি.১.৩৫১, এ.২৩.১ এবং বি.১.৬১৭.২ (ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট)।
নতুন মিশ্র ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে এ পর্যন্ত যা জানা গেছে অন্য স্ট্রেইনগুলোর থেকে অনেক বেশি সংক্রামক। খুব তাড়াতাড়ি প্রতিলিপি (রেপ্লিকেটেড) গঠন করতে পারে এটি। নুয়েন বলেন, এই কারণে ভিয়েতনামের বিভিন্ন অংশে অল্প সময়ের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এটি। ভাইরাসের এহেন ভয়াবহ মিউটেশন, নতুন নতুন স্ট্রেইন তৈরি ও সংক্রমণ ক্ষমতা বৃদ্ধির মুখে একমাত্র আশা টিকাদান। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা পরের ঢেউয়ে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হবে ছোটরা। আমেরিকা ও কানাডায় ইতোমধ্যে কিশোর-কিশোরীদের টিকাদান শুরু হয়ে গেছে। এবার ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ) ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সিদের জন্য ফাইজার-বায়োএনটেকের কোভিড প্রতিষেধকটিকে ছাড়পত্র দিল।
করোনায় স্কুল বেশি দিন বন্ধ রাখা দেশের তালিকায় বাংলাদেশ: করোনাভাইরাসের কারণে এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে বিশ্বের ১৬ কোটিরও বেশি শিশুর স্কুল। সম্প্রতি ইউনিসেফের দেয়া প্রতিবেদনে এক বছর ধরে বন্ধ রাখা ১৪টি দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশও। আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে একথা উল্লেখ্য করা হয়েছে।
এ দিকে চলতি বছরের ৩ মার্চ জাতিসঙ্ঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) করোনায় স্কুল বন্ধ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বের ১৬ কোটি ৮০ লাখেরও বেশি শিশুর স্কুল এক বছর ধরে পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। ওই প্রতিবেদনের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ‘বিশ্বব্যাপী ১৪টি দেশের বেশির ভাগ স্কুল গত বছরের মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে। দেশগুলোর দুই-তৃতীয়াংশ দক্ষিণ অ্যামেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের। এসব দেশে প্রায় ৯ কোটি ৮০ লাখ স্কুলগামী শিশুর ওপর এর প্রভাব পড়েছে। তবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা ১৪টি দেশের মধ্যে সব চেয়ে বেশি সময় ধরে স্কুল বন্ধ রেখেছে পানামা। এ ছাড়া প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, বিশ্বব্যাপী ব্যক্তিগত শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ হারিয়েছে তিন-চতুর্থাংশের বেশি শিশু অর্থাৎ প্রায় ২১ কোটি ৪০ লাখ বা প্রতি সাতজনের মধ্যে একজন শিশু। এ দিকে প্রতিবেদনে যে পরিসংখ্যান দেখানো হয়েছে তাতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ২২ শতাংশ শিশুর শিক্ষা করোনাকালে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। স্কুলগুলো আবার খোলার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়ার প্রয়োজনীয়তার প্রতি বিভিন্ন দেশের সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণে নিউইয়র্কে জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরে প্যান্ডেমিক ক্লাসরুম উদ্বোধন করেছে ইউনিসেফ।
পানামার পর এল সালভাদর, বাংলাদেশ ও বলিভিয়ার স্কুল বেশি দিন বন্ধ আছে। মার্চে স্কুল খুলে দেয়ার কথা থাকলেও বাংলাদেশে এখনো বন্ধ সব স্কুল। ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর বলেছেন, ‘বিশ্বব্যাপী শিক্ষাক্ষেত্রে লকডাউন ভয়াবহ জরুরি অবস্থার সৃষ্টি করেছে। যতই দিন যাচ্ছে, শিশুরা স্কুলে যাওয়ার সুযোগ না পেয়ে ততই পিছিয়ে পড়ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকা শিশুদের চরম মূল্য দিতে হচ্ছে।’ শিশুদের স্কুল বন্ধ রাখার পরিণতি ধ্বংসাত্মক বলে মনে করছে ইউনিসেফ। সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে থাকা এবং যারা দূরশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায় না, তারা আর কখনো ক্লাসরুমে ফিরতে না পারার এবং এমনকি বাল্যবিয়ে বা শিশুশ্রমে সম্পৃক্ত হওয়ার ক্রমবর্ধমান ঝুঁকিতে রয়েছে। ইউনেস্কোর সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, পুরোপুরি ও আংশিকভাবে স্কুল বন্ধ থাকার কারণে বিশ্বব্যাপী ৮৮ কোটি ৮০ লাখের বেশি শিশুর পড়াশোনা অব্যাহতভাবে বাধার মুখে পড়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com