পাখির ঠোটে চিঠি দিলাম, তুমি খুলে পড়ো, স্বপ্ন দেখে ভয় পেলে হাতটা চেপে ধরো- একটা সময় এমনি ভাবে প্রেমিক-প্রেমিকা তাদের মনের কথা আদান প্রদান করতে কবুতরের ঠোঁটে করে চিঠি পাঠিয়ে। আর সিনেমা-নাটকেও এমন চিত্র দেখা যেতো হর হামেশাই। কিন্তু তথ্য প্রযুক্তির যুগে এসে সেটি আর প্রযোজ্যের তালিকায় নেই। ঠিক সেই সময় আবারও পাখির ঠোটে দেখা মিললো প্রেমিক যুগলের নাম লেখা একটি টুকরো চিঠি। রোববার (৩১ মে) দুপুরে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার তেঘরিয়া গ্রামের কৃষক সন্তোস প্রামানিকের বাড়িতে হঠাৎ করেই এক অচিন পাখির আগমন ঘটে। ওই পাখির ঠোঁটে পাওয়া যায় হাতে লেখা আরবি ও বাংলা অক্ষরে কাগজের চিরকুট। যেখানে লেখা ছিল প্রেমিক- যুগলের নাম। তবে সেটি ছিল আরবি আর বাংলায় লেখা। তাতে লেখা ছিল নুশরাত জাহান বুলবুলি, মহব্বত হোসেন এবং মোছাঃ পারুল আক্তার, রিয়াজুল হোসেন জয়। এমন খবরটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। অচিন পাখিটি এক নজর দেখতে এলাকার শত শত নারী পুরুষ ও শিশুরা ভীড় জমাতে থাকে ওই বাড়িটিতে। পাখিটি দেখতে কবুতর বা ঘুঘুর মত মনে হলেও প্রাথমিক ভাবে পাখিটির নাম সঠিকভাবে বলতে পারেননি কেউ। অচিন পাখি বলেই ছিল মানুষের যত কৌতুহল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রচার হতে থাকে বিষয়টি নিয়ে। ওই বাড়ির মালিক নলডাঙ্গা উপজেলার তেঘরিয়া গ্রামের কৃষক সন্তোস প্রামানিক জানান, সোমবার দুপুরের দিকে হঠাৎ করেই ওই পাখিটি তাদের বাড়ির টিনের চালায় এসে বসে। এসময় তার স্ত্রী মানিকজান প্রথমে দেখতে পান এবং পাখিটিকে খাবার দেওয়ার কথা বললে পাখিটি টিনের চালা থেকে মাটিতে নেমে আসে। এসময় খাবার দিয়ে পাখিটিকে ধরে খাঁচায় বন্দি করেন তারা। পাখিটিকে খাঁচায় বন্দি করার সময় দেখতে পান ঠোঁটে হাতে লেখা আরবি ও বাংলা অক্ষরে লেখা কাগজের একটি চিরকুট। চিরকুটের নিচের অংশে বাংলা অক্ষরে লেখা দুই জন মেয়ে ও দুই জন ছেলের নাম রয়েছে। আর আরবি লেখা কেউ পড়তে পারেননি। খবরটি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে আশে পাশের গ্রামের নারী-পুরুষ ও শিশুরা এক নজর দেখতে ভীড় করেন। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এব্যাপারে বাংলাদেশ জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ফেডারেশন (বিবিসিএফ) কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ও স্থানীয় পরিবেশ কর্মী মোঃ ফজলে রাব্বী জানান, এটি একটি লাল রাজ ঘুঘু (জবফ পড়ষষধৎফ ফড়াব)। এই এলাকায় চিলা ঘুঘু দেখা গেলেও সচারাচর লাল রাজ ঘুঘুর দেখা মিলে না। বিষয়টি বাংলাদেশ জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ফেডারেশকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, সাধারনত উঠতি বয়সের তরুনরা তাদের প্রেমিকাকে পাওয়ার আশায় কবিরাজের সরনাপন্ন হয়। তখন কবিরাজরা বিভিন্ন সময় প্রেমিক যুগলের নাম আরবি বা বাংলায় লিখে পাখির ঠোটে দিয়ে উড়িয়ে দেয়। ধারনা করা হচ্ছে-হয়তো এমনটি হয়েছে। আগে পাখির ঠোটে চিঠিপত্র আদান প্রদান করা হলেও, এখন আর এমনটি চোখে পড়ে না। মাধনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মোঃ আমজাদ হোসেন দেওয়ান বলেন, বিষয়টি তিনি লোকমুখে শুনেছেন। বিস্তারিত তিনি কিছুই জানেন না। তবে বিষয়টি কৌতুহলী।