প্রতি বছর সরকারিভাবে বৃক্ষ রোপণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও বছরে কী পরিমাণ গাছ কাটা হচ্ছে তার কোনও হিসাব কারও কাছেই নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গাছ লাগাতে বা কাটতে কারও কোন অনুমতি প্রয়োজন হয় না। সঙ্গত কারণে এই হিসাব রাখারও কেউ নেই। পরিবেশ রক্ষায় সরকার মাটির উপরিভাগ কেটে যত্রতত্র পুকুর খনন বন্ধ করেছে। পুকুর খনন করতে গেলে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। আবার জলাশয় ভরাট করতে হলেও একইভাবে প্রশাসন এবং পরিবেশ অধিদফতরের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। গাছ কাটার ক্ষেত্রেও এমন কোন বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা গেলে অকারণে নিধনের হাত থেকে জীবন বেঁচে যেত অনেক বৃক্ষের। যাতে পরিবেশের টেকসই উন্নতি হতো।
সরকার প্রতিবছরের মতো এবারও বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে বৃক্ষরোপণ অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে। একইসঙ্গে চলছে মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রায় ১ কোটি গাছ রোপণের কর্মসূচি। এই গাছ রোপণের পাশাপাশি যাতে গাছ নিধনও বন্ধ হয় সেই বিষয়ে জোর দিয়েছেন পরিবেশবাদীরা। গাছ নিধনে তারা চান কঠোর আইনের প্রয়োগ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে একটি করে ওয়ার্ড রয়েছে। এসব ওয়ার্ডে একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি রয়েছেন। সরকার চাইলে খুব সহজে এদের কাজে লাগিয়ে প্রতিটি গ্রামের গাছের একটি হিসাব বের করতে পারে। একইসঙ্গে এসব গাছের বয়সও বের করা যায়। এরপর এগুলোর বিষয়ে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা যেতে পারে। স্থানীয় মসজিদের ইমাম, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে এই কাজ করানো যেতে পারে। তারা বলছেন, সারাদেশের বৃক্ষের একটি চিত্রের সঙ্গে কোন এলাকায় কতটুকু সরকারি জমি রয়েছে, সেখানে কী পরিমাণ গাছ লাগানো যেতে পারে তাহলেই পরিবেশের টেকসই উন্নতি সম্ভব হবে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, গাছ রোপণ খুব ভাল উদ্যোগ। তবে গাছ রোপণের পাশাপাশি অনেক পুরানো গাছগুলো বাঁচানোও জরুরি। পরিবেশ ও প্রতিবেশ বাঁচাতে নতুন গাছের জন্ম যেমন জরুরি তেমনি পুরানো গাছও ইকো সিস্টেমের একটি অংশ। তাই সেগুলো বাঁচাতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, শুধু গাছ রোপণ করলেই হবে না সেগুলো যেন পরিবেশ উপযোগী গাছ হয়। ফল ফুল দেয়, পাখিরা বসে। তাহলে ইকোসিস্টমের ওপর এর প্রভাব পড়বে।
বিশ্বব্যাপী পরিবেশ দূষণ রোধ ও পরিবেশ সংরক্ষণে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবছরের মতো এবারও ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসাবে পালন করছে সারাবিশ্বের মানুষ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও দিবসটি পালন করছে। এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘ইকোসিস্টেম রেস্টোরেশন বা ‘প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার, হোক সবার অঙ্গীকার’। এ বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানসহ সকল জাগতিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত গাছপালা, পশুপাখি অতি আহরণের ফলে জীববৈচিত্র্য এবং প্রতিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। বর্তমানের উৎপাদন পদ্ধতি এবং ভোগবাদী জীবনযাপন অব্যাহত থাকলে ধরিত্রীর প্রতিবেশ ব্যবস্থা অচিরেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। আমাদের সকলকেই তাই প্রতিবেশ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারে এখনই এগিয়ে আসতে হবে। এ প্রেক্ষাপটে এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষে দেশজুড়ে বৃক্ষরোপণসহ বিভিন্নমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেন। একই ধারাবাহিকতায় সরকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পূর্বক বাসযোগ্য টেকসই পরিবেশ নিশ্চিতকরণে নিরলসভাবে কাজ করছে। তিনি জানান, জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসাবে দেশব্যাপী বিনামূল্যে এক কোটি বৃক্ষের চারা রোপণের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে যা পরিবেশ সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে। দিবসটি উপলক্ষে আজ জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ২০২১ এর উদ্বোধন ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বেলা ১টায় গণভবনে ‘সোনালু’ ,‘জাম’, ‘আমড়া’ ও ‘ডুমুর’ গাছের ৪টি চারা রোপণের মাধ্যমে এই অভিযানের উদ্বোধন করেন।
পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানায়, ‘মুজিববর্ষে অঙ্গীকার করি, সোনার বাংলা সবুজ করি’ প্রতিপাদ্যে এবারের জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান-২০২১ উদযাপন করা হবে। এ শ্লোগান মুজিববর্ষে বৃক্ষরোপণের অঙ্গীকার বাংলাদেশকে সবুজে শ্যামলে ভরিয়ে দিতে সর্বস্তরের জনসাধারণকে উজ্জীবিত করবে।
জানতে চাইলে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, গাছ শুধু রোপণ করলেই হবে না সেগুলো সঠিকভাবে সঠিক জায়গায় রোপণ করা হচ্ছে কিনা তাও দেখা দরকার। রোপণের পরের পরিচর্যার কাজ সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা তাও মনিটরিং জরুরি।