মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০৬ পূর্বাহ্ন

এমনি এমনি আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়বে না : বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ৯ জুন, ২০২১

এমনি এমনি আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়বে না,মেধা ও প্রজ্ঞার লড়াইয়ের মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে আনতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নেতাকর্মীদের যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ করতেই হবে। এরা (আওয়ামী লীগ) এমনি এমনি আপনাকে ক্ষমতায় নিয়ে আসবে না। এরা একেবারেই ডিক্টেটর বনে গেছে। নির্বাচন করে এরা কোনোদিন জিততে পারবে না। এরা নির্বাচন নিয়ে তামাশা করবে। কিন্তু সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে নিজেদেরকে জয়ী করবে।’
গতকাল বুধবার (৯ জুন) সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় জিয়াউর রহমানের ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বই প্রদর্শনী ও আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন করে কখনো আওয়ামী লীগ জিততে পারবে না জেনেই স্বৈরাচারী কায়দায় ক্ষমতায় টিকে আছে। নির্বাচনের সময় আসলেই জনগণকে ধোঁকা দিয়ে তারা নির্বাচনী খেলা তৈরি করে।
বিএনপিকে নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ওদের কথার কী উত্তর দেব, ওদের কথায় তো ঘোড়াও হাসে। কখন কী বলে না বলে, তারা নিজেরাও জানে না।
তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদকে উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘মিথ্যা কথা প্রচার করতে করতে ওরা এখন জিয়াউর রহমানকে মুক্তিযোদ্ধা তো দূরের কথা, জিয়াউর রহমানকে পাকিস্তানের চর বানিয়েছেন। উনি (হাসান মাহমুদ) এমনভাবে কথা বলেন- জোরেও বলেন না, রাগ করেও বলেন না। ঠা-া মেজাজে কথা বলেন- শুনে মনে হয় সত্যি কথাই বলছেন। আজকে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও তারা ইতিহাসকে এভাবে বিকৃত করে চলেছেন।’
তিনি বলেন, ‘দেশে এখন করোনা আর আওয়ামী লীগ সরকার এই দুই দানব সকল কিছুকে তছনছ করে দিচ্ছে। ফলে আমরা বাধাগ্রস্ত হচ্ছি। এটাকে জয় করতে হবে। এই জয় করেই এগিয়ে যেতে হবে।’ জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের সভাপতি আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মো. জহির দীপ্তির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল প্রমুখ।
জয়ী হবো, আশাহত হবেন না : আন্দোলনে ‘জয়ী হবো’ উল্লেখ করে নেতাকর্মীদের আশাহত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে অনেকে বলে, কী ভাই কিছু হবে? এটা যখনই মনে করবেন তখনই বুঝবেন যে, আপনি শেষ। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান একটা শ্লোগান দিচ্ছেন না যে, যদি তুমি ভয় পাও তাহলে তুমি শেষ, আর তুমি যদি রুখে দাঁড়াও তুমিই বাংলাদেশ।’ গত মঙ্গলবার (৮ জুন) বিকেলে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪০তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিত আনজুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলিম নকির সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, মহানগর উত্তরের আতিকুল ইসলাম মতিন, জিএম শামসুল হক, এবিএমএ রাজ্জাক প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি এই সভার আয়োজন করে। ফখরুল বলেন, ‘একজন মানুষ মরে যায় কখন? সে যখন আশা হারায়। হোপস, এই হোপস নিয়ে আমাদের থাকতে হবে। একটি সত্য আপনাদের মনে রাখতে হবে যে, এই দেশের শতকরা ৯০ জন মানুষ আপনাদের পক্ষে আছে, যেখানেই যাবেন দেখবেন…। একটা কথা আমি বলতে পারি, আমরা জয়ী হবোই। আমাদেরকে সামনের দিকে এগোতে হবে।’
নিজের মোবাইল ফোন দেখিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অনেক সময় নাই, আমি আপনাদের দেখাতে পারতাম যে, একজন রিকশাওয়ালা কী বলছেন। একজন ঠেলাগাড়ি চালায় তিনি কী বলছেন। গাইবান্ধায় একজন সবজি বিক্রি করেন, তিনি কী বলছেন। এগুলো কোনো কিছু বানানো নয়, তাদের মনের কথাগুলো তারা বলছেন যে, এই সরকার আমাদের কী দেখবে? নিজের দেখেই তো কুল কিনারা পায় না। আমাদের তো দেখে না কেউ।’ ‘আজকে হাজার হাজার কোটি টাকার মেগা প্রজেক্ট করতেছেন, মেগা প্রজেক্টে পাঠাচ্ছেন। এই যে মহাখালীতে সাতলাবস্তি পুঁড়ে গেল, তাদের জন্য কোনো প্রজেক্ট তৈরি করে না।’ বলেন ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘উত্তর মহানগরকে আমি অনুরোধ করতে চাই, শুধু পদ-পদবির জন্য দৌঁড়াবেন না। কমিটি হয়ে গেলে হারিয়ে যাবেন না, হারিয়ে যেন আমরা না যাই এবং এবার আমরা যেন চেষ্টাটা করি, সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টাটা করি। বাকী তো উনার হাতে, সব উপরওয়ালার হাতে। আমরা বিশ্বাস করি, সঠিক পথে থাকলে, ঠিক পথে থাকলে বিজয় আমাদের অনিবার্য।’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য খ-ন করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গণতন্ত্রকে হত্যা করছে কারা? আওয়ামী লীগই গণতন্ত্রকে বারবার হত্যা করছে। যে সংবিধান ১৯৭২ সালে আপনাদের দ্বারা তৈরি, সেই সংবিধানকে কেটে ছিঁড়ে সবকিছু শেষ করে দিয়েছে কে? আওয়ামী লীগ আপনারা। যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আপনারা ১৭৩ দিন হরতাল করলেন, লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষকে মারলেন, বুকের উপরে উঠে নাচলেন, সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে কে সরালো? আওয়ামী লীগ, এই শেখ হাসিনা, প্রধানমন্ত্রী। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিলেন আপনারা।’
ফখরুল বলেন, ‘জনগণ ভোটের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উপায়ে সরকার নির্বাচন করবে-সেই অধিকারই তো এখন নাই। এখন কী হচ্ছে? শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। আমি তাদের আবারও বলছি যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান আবার আনুন। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে, সেই পথ রুদ্ধ করবেন না। তার পরিণতি গোটা বিশ্বের জানা। গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হতে হবে। তা না হলে এর ফল খুব খারাপ।’ দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে ‘বাতিঘর’ উল্লেখ করে তার আদর্শ অনুসরণ করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের পরামর্শ দেন তিনি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com