অনেক দেশের চেয়ে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভালো করলেও টিকা সংকটে ভুগছে বাংলাদেশ। প্রথমে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে তিন কোটি ডোজের চুক্তি করলেও এর মধ্যে মাত্র ৭০ লাখ পেয়েছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে চীনের সিনোফার্মের সঙ্গে দেড় কোটি ডোজ টিকা ক্রয়ের চুক্তি চূড়ান্ত করা হয়েছে। কিন্তু সরকারের একজন কর্মকর্তা এর দাম প্রকাশ করলে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সিনোফার্মের বিষয়ে চুক্তি সই হয়েছে জানালেও চীনের পক্ষ থেকে এখনও কিছু বলা হয়নি। এ অবস্থায় বাংলাদেশ চীনের আরেকটি কোম্পানি সিনোভ্যাক এবং রাশিয়ার স্পুটনিকের সঙ্গে টিকা আনার ব্যাপারে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘সিনোভ্যাক ইতোমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেয়ে গেছে এবং আমরাও জরুরি অনুমোদন দিয়েছি। ফলে চীনের এ কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করতে কোনও বাধা নেই।’ তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার স্পুটনিক-ফাইভ কেনার ক্ষেত্রে অন্তত দুই রাউন্ড ডকুমেন্ট আদান-প্রদান হয়েছে। এখন আমরা মুখোমুখি বসে বিষয়টি চূড়ান্ত করতে পারবো।’ বাংলাদেশ ঠিক পথে আছে কিনা জানতে চাইলে মোমেন বলেন, ‘আমরা ঠিক পথেই ছিলাম, কিন্তু ওই (সিনোফার্ম এর) দামের ব্যাপারটা প্রকাশ হওয়ার ফলে কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় আছি। এছাড়া আমরা ঠিক পথেই আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। জাতীয় স্বার্থে সাংবাদিক, সরকারি কর্মকর্তাসহ সবার দায়িত্ববোধ থাকা উচিত।’
সেরামের বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘এখন ভারত সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সবাইকে টিকা দেবে। ফলে এ বছরের টিকা পাওয়াটা কিছুটা মুশকিল হবে। তবে অন্যান্য জায়গা থেকে যদি টিকা সরবরাহ বেড়ে যায়, তাহলে অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে।’ আমেরিকার টিকা যদি ভারত পেয়ে যায় বা তাদের নিজস্ব কোনও টিকা যদি বাজারে চলে আসে তাহলে তাদের টিকা সংকট অনেকটা দূর হয়ে যাবে এবং তখন সেরামের টিকা পাওয়ার সময়টা আরও এগিয়ে আসবে বলে তিনি জানান। ‘এখন যে অবস্থায় আছে সেটি যদি অপরিবর্তিত থাকে তাহলে হয়তোবা ডিসেম্বরে পাবো, তবে টিকার সরবরাহ বেড়ে গেলে আরও দ্রুত পাওয়া যাবে।’Íবলেন মোমেন।
বাংলাদেশের ভঙ্গুরতা আছে: পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘অন্যান্য অনেক দেশের চেয়ে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে আছে, কিন্তু পরিস্থিতি যেকোনও সময়ে ভিন্ন পথে মোড় নিতে পারে। আমাদের ভঙ্গুরতা আছে, কারণ আমরা ভারত দ্বারা পরিবেষ্টিত। সেখানে যদি নতুন কোনও ভ্যারিয়েন্ট বা তৃতীয় ওয়েভ আসে তখন আমাদের সেটি আঘাত করতে পারে।’
বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে যোগাযোগ কোনও দেশ বিচ্ছিন্ন করেনি এবং বর্তমান বিশ্বে সম্পূর্ণভাবে যোগাযোগ বন্ধ করার সুযোগ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ কিছুটা সীমিত করেছি এবং আমাদের কয়েক হাজার লোক সেখান থেকে প্রবেশ করেছে। প্রথমদিকে সংক্রমণ কম ছিল। মোট আট হাজারের মধ্যে ২২ জনের মতো সংক্রমিত হয়েছে। কিন্তু ইনফর্মলি কিছু লোকজন হয়তোবা গিয়েছে, যেটি আমরা আটকাতে পারিনি। সে কারণে এখন সীমান্তবর্তী এলাকায় সংক্রমণ অনেক বেড়ে গেছে। ভারতে এখন অনেক সংক্রমণ কমে গেছে এবং আশা করি, এই মাসে আমরাও ইতিবাচক কিছু দেখতে পাবো।’ ভারতে সংক্রমণ কম থাকার কিছু সুবিধা আছে জানিয়ে মোমেন বলেন, ‘এর একটা মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব রয়েছে। এছাড়া অনেক দেশ আছে, যারা ভৌগোলিকভাবে ভারতকে বিবেচনায় নিয়ে থাকে। অন্য দেশগুলো যখন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেয় তখন হয়তো তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল ভারত, কিন্তু পরে বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলোকেও এর সঙ্গে জুড়ে দেয় তারা।’-বাংলাট্রিবিউন