সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করার পাশাপাশি লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘সমাজ উন্নয়নে মৃত্যুঞ্জয়ী জিয়া’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। জিয়াউর রহমানের ৪০তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে জিয়া পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি এ সভার আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার পরিকল্পিতভাবে, পরিকল্পিত ওয়েতে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করছে। লুট করছে, লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে। এমন নয় যে তারা ইচ্ছে করে করছে।
তিনি বলেন, মেগা প্রজেক্টের সবচেয়ে বড় সমস্যা যেটা, সেটা হলো- গণলুট। ১০ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট হয়ে যাচ্ছে ৫০ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট। এভাবে তারা মেগা প্রজেক্টগুলোকে টাকা বানানোর প্রজেক্ট হিসেবে নিয়েছে। অন্যদিকে দেখুন প্রত্যেকটি জায়গায় এমন এমন কাজ করা হচ্ছে, সেখানে ওই কাজের কোনো দরকারই নেই।
স্বাস্থ্য খাত করুণ অবস্থায় রয়েছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখন পর্যন্ত করোনার টিকার কোনো নিশ্চয়তা নেই। টিকার নিশ্চয়তা হবেও না। এই জন্যে যে যারা এই স্বাস্থ্যখাতের সঙ্গে জড়িত, টিকার সঙ্গে জড়িত, তারা সবাই দুর্নীতিতে জড়িত। এত বড় দুর্নীতি করছে, যে দুর্নীতির মাধ্যমে মানুষের জীবনকে মূল্যহীন করে তুলছে। আজকে বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে দেখলে দেখব- মানুষের জীবনের কোনো মূল্য নেই, কোনো নিরাপত্তা নেই। খবরের কাগজ খুললেই দেখতে পাবেন ভয়াবহ গুম, হত্যার ঘটনা।
তিনি বলেন, কৃষিপণ্যের মার্কেটিংয়ের জন্য কোনো ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। কয়েকদিন আগে একজন কৃষক মাথায় হাত দিয়ে বলেছেন, এত সবজি উৎপাদন করলাম, কিন্তু বাজারজাত করতে পারছি না। সরকার কি পারে না আমাদের এ পণ্য বাজারজাত করতে?
দেশ যখন অন্ধকারের মধ্যে ছিল সেই সময় জিয়াউর রহমান জাতিকে আলোর পথ দেখিয়েছিলেন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছিলেন জিয়াউর রহমান। একটা রাজনৈতিক সংস্কারেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। গণমাধ্যমসহ সব বিষয়ে জিয়াউর রহমান অবদান রেখেছেন।
আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মো. আব্দুল কুদ্দুসের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, জিয়াউর রহমান আমাদের মর্যাদা দিয়েছেন, কাজ দিয়েছেন। এমন কোনো কাজ নেই, যেখানে তিনি অবদান রাখেননি। যারা আজ ক্ষমতায় আছে, তারা কথায় কথায় তাকে (জিয়াউর রহমান) নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে নিজেদের অসম্মানিত করছে, হাসির পাত্র হচ্ছে তারা।
সভায় বক্তারা শহীদ জিয়ার আদর্শ ও কর্মকা- বিশদভাবে তথ্য তুলে ধরেন। তারা বলেন, দেশ পরিচালনায় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন জিয়াউর রহমান। তিনি বাংলাদেশের উন্নয়নে সব বিষয়ে কাজ করেছেন। তার আদর্শ ধারণ করে সামনের পথ চলা উচিত। তিনি অল্প সময়ে দেশকে সুসংগঠিত করে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।
সরকার দিন দিন দানবীয় রূপ ধারণ করছে:
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় পুলিশ দিয়ে হামলা করে বিরোধী মতের নেতাকর্মীদেরকে জখম, গুলি করে পঙ্গ করা হচ্ছে। আর এসব করার মাধ্যমে জণমনে আতংক সৃষ্টি করে এই মাফিয়া সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতা র্দীঘায়িত করার সকল অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এই উদ্দেশ্য পূরণে সরকার দিন-দিন দানবীয় রূপ ধারণ করছে। তিনি সরকারের এই আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
গতকাল সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
বিবৃতিতে চট্টগ্রামে ছাত্রদল নেতা সাইফুল ইসলামকে গ্রেফতারের পর তার পায়ে গুলি এবং তার বাম পা কেটে ফেলায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান বিএনপি মহাসচিব। এ ঘটনাকে ‘অমানবিক ও নিষ্ঠুর’ আচরণ উল্লেখ করে দোষী ব্যক্তিদের বিচার দাবি করেন তিনি। একই সঙ্গে সাইফুল ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, পুলিশ গত ১৭ জুন ছাত্রদল চট্টগ্রাম মহানগরীর সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামকে চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকা থেকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করে তার পায়ে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে। পরবর্তীতে তার অবস্থা আশংকাজনক হলে ঢাকার পঙ্গু পাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পঙ্গু হাসপাতালে তার বাম পা কেটে ফেলতে হয়েছে।
তিনি বলেন, এই বিভৎস, নৃশংস পৈশাচিক ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব দেশের মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা বিধান করা। সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য ক্ষমতাসীনদের তুষ্ট করার লক্ষে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উপর অন্যায় এবং বেআইনীভাবে যত্রতত্র নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা, নির্যাতন ও পঙ্গু করা এখন যেন তাদের নিত্য দিনের কর্ম হয়ে দাড়িয়েছে। পুলিশ ছাত্র নেতা সাইফুলের উপর যে পৈশাচিক কর্মযজ্ঞ ঘটিয়েছেন তা রাষ্ট্রীয় আইনে কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং মানবতা বিরোধী অপরাধ।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার নিজেদের অনৈতিক এবং কর্তৃত্ববাদী শাসন পাকাপোক্ত করতেই বিরোধী মতের নেতাকর্মী ও জনগণের ওপর হিংস্র আচরণ অব্যাহত রেখেছে। বিভিন্ন বাহিনীকে অন্যায়ভাবে নিজেদের হীন স্বার্থে অপব্যবহার করে সরকার তাদেরকে জনগণের মুখোমুখী দাঁড় করাচ্ছে। মানুষের কল্যাণে কাজ না করে ক্ষমতার দাম্ভিকতায় ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে দেশকে গভীর সঙ্কটে নিপতিত করছে। সারাদেশে গুম, খুন, অপহরন ও বিচারবর্হিভূত হত্যা চালিয়ে দেশকে ত্রাসের রাজ্যে পরিণত করেছে।