চলছে রণক্ষেত্রে যাওয়ার মহড়া। অতি শিগগিরই দেখা হবে হক (সাহাবা রা:) ও বাতিলের (কাফের)। রাসূল সা:-এর ঘোষণা, সবাই যেন সামর্থ্য অনুযায়ী জিহাদের জন্য দান করে। শুরু হয়ে গেল দান করার প্রতিযোগিতা। কে কার থেকে বেশি দান করে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অতি নিকটতম ব্যক্তি হতে পারে। সে যুগে উসমান রা: ছিলেন ধনাঢ্য সাহাবি। উসমান রা:, ওমর রা:সহ সকল সাহাবী নিজেদের সাধ্য মতো দান করতে লাগলেন। অন্যদিকে হজরত আবু বকর রা: ঘরের আসবাবপত্র সব নিয়ে এলেন।
রাসূল সা: দেখে জিজ্ঞাসা করেন, ‘হে আবু বকর! তুমি পরিবার পরিজনের জন্য কী রেখে এসেছে? প্রশ্নোত্তরে আবু বকর রা: বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি আমার পরিবার পরিজনের জন্য আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে রেখে এসেছি। সুবহান আল্লাহ! কিন্তু আমাদের থেকে দান করার প্রতিযোগিতা, উৎসাহ, উদগ্রীব প্রায় বিলুপ্তির পথে।
আল্লাহ তায়ালা সূরা বাকারার দ্বিতীয় নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন, ‘আমি তোমাদেরকে যে রুজি দান করেছি তা থেকে ব্যয় করো।’
মুত্তাকিদের একটি বৈশিষ্ট্য হলো- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যে সম্পদ দিয়েছেন, তা থেকে ব্যয় করা। ব্যয় শুধু আল্লাহর রাস্তায় করতে হবে। কোনো গুনাহের কাজে করলে গুনাহগার হবেন। যদি আপনি বলেন, কই? সূরা বাকারার এর দুই নম্বর আয়াতে দান করার কথা বলেছেন, আল্লাহর রাস্তায় দান করতে হবে এটা তো বলেনি? আপনার এই কথা গ্রহণযোগ্য হবে না।
যদি বলা হয়- অমুক দিন আমরা ট্যুরে যাবো। গন্তব্য কক্সবাজার বা রাঙামাটি। প্রতিজন এক হাজার টাকা করে দিতে হবে। যদি তুমি দিতে পারো, তাহলে তুমিও যেতে পারবে। লোকটি বলবে, টাকার জন্য তোমাদের চিন্তা করতে হবে না। টাকার ব্যবস্থা আমি করব। তোমরা আমার নামটি খাতায় তুলো। এখন সে এই টাকা যেকোনো পর্যায়ে ব্যবস্থা করবে।
যদি বলা হয়- অমুক শুক্রবারে অমুক স্কুলের মাঠে আমরা গানের আসর বসাব। এই আসরের জন্য একটি বড় অ্যামাউন্টের প্রয়োজন। তাই আপনাকে আমাদের সাহায্য করতে হবে। লোকটি বলবে, ঠিক আছে আমার নামে পাঁচ হাজার টাকা লিখো। এখন কেউ এসে যদি প্রশ্ন করে, আল্লাহ তোমাকে টাকা দিয়েছেন, ধন-রত্ন দিয়েছেন। তুমি গুনাহের কাজে কেন ব্যয় করলে?
প্রশ্নোত্তরে লোকটি বলবে, মানুষের কথা থেকে বাঁচার জন্য দিয়েছি আর কী। আর না হয় লোকে বলাবলি করবে, অমুক ব্যক্তির কাছে টাকা আছে। অথচ টাকা দেয় না। লোকটি কৃপণ।
যদি বলা হয়- অমুক শুক্রবার আমরা একটি মাহফিলের আয়োজন করব। মাহফিলের জন্য হিসাব করে দেখলাম একটি বড় অ্যামাউন্টের প্রয়োজন হবে। এতে আপনার সহযোগিতা একান্ত জরুরি। তখনই শুরু হয় ওজর। আমার অমুক হয়েছে, তামুক হয়েছে, ব্যবসায় লস হয়েছে, এখনো মালিক মাসের টাকা দেয়নি আরো যত কথা আছে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে কমবেশি ধন-দৌলত দিয়েছেন। কাউকে বেশি দিয়েছেন আবার কাউকে কম। তবে দান করার জন্য সবাইকে বলেছেন। যাকে আল্লাহ তায়ালা সম্পদ বেশি দিয়েছেন, তাকেও দান করার আদেশ দিয়েছেন। আর যাকে কম দিয়েছেন তাকেও দান করার আদেশ দিয়েছেন। আমার ধন-রত্ন কম আমি দান করব না, অমুকের বেশি সে দান করবে; এমনটা কখনো হবে না। যার যতটুকু সামর্থ্য আছে, দান করবে।
আমরা আমাদের টাকা ব্যাংকে জমা রাখি। যাতে কেউ চুরি করতে না পারে। টাকাগুলো যেন আমানতে থাকে। যখনই প্রয়োজন পড়ে, আমরা টাকা তুলে এনে খরচ করি। তদ্রুপ, আমাদের দান করা ধন-সম্পদও জমা থাকে। এই আমানত আল্লাহ তায়ালা আমাদের এমন এক কঠিন মুহূর্তে দেবেন যখন মানুষ এক মুহূর্তের জন্য অন্য একজনের দিকে দৃষ্টি দেয়ার সময় পাবে না। মা পালাবে সন্তান থেকে। স্ত্রী পালাবে স্বামীর থেকে। ভাই পালাবে ভাই থেকে। সবাই না চেনার ভান করবে। একটি নেকি কেউ কাউকে দেবে না, দিতে চাইবেও না। দুনিয়ার জমাকৃত টাকা প্রয়োজন মিটাতে খরচ করে ফেলি। কিন্তু, আল্লাহর কাছে জমাকৃত ধন-রত্নগুলো কিয়ামত পর্যন্ত বাকি থাকবে। সামান্য মাল এদিক-ওদিক হবে না।
দানের মধ্যে এখলাস জরুরি। নিয়ত সহিহ রাখা জরুরি। আর না হয় লাঠিও ভাঙবে সাপও মরবে না। আখলাসবিহীন আমাদের দান বেকার যাবে। তাই নিয়তকে সহিহ করা জরুরি।