সরকারী বাঁধা উপেক্ষা করে জেলার গৌরনদী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরকারি খাল দখল করে স্থাপনা নির্মানের মহোৎসব শুরু হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের বাকাই বন্দরের পশ্চিম পার্শ্বে সরকারী রাস্তার পাশের গাছ কেটে খাল দখল করে ২০/২৫ টি স্থাপনা নির্মান শুরু করেছে স্থানীয় আওয়ামীলীগ, বিএনপির নেতাকর্মী ও এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি চরম বিরোধ থাকলেও বাকাই বাজারের খাল দখল করে স্থাপনা নির্মানের বিষয়ে এখানকার আওয়ামী লীগ-বিএনপি একাকার। দুই দলের নেতাকর্মীরা জনগুরুত্বপূর্ন খাল দখল করে স্থাপনা নির্মান করায় বোরো মৌসুমে সেচ সংকটে পড়তে হবে ওই এলাকার প্রায় অর্ধ লক্ষ কৃষকদের। স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, একটা সময়ে বাকাই বন্দর ও আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার, বাশাইল বাজারের কয়েক হাজার ব্যবসায়ী, ক্রেতা-বিক্রেতারা খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ভুরঘাটা-আগৈলঝাড়া ভায়া ঘোষেরহাট ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে খালটি দিয়ে পণ্য পরিবহন করতো। বর্তমানে ১৫টি গ্রামের অর্ধলক্ষ কৃষকদের ফসল উৎপাদনে খালটি ব্যাপক গুরুত্ববহন করে আসছে। অতি সম্প্রতি খালপাড়ের সরকারী সম্পদের উপর লোলুপ দৃষ্টি পরে দুইদলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের। তারই ধারাবাহিকতায় জনগুরুত্বের তোয়াক্কা না করে গৌরনদী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক রাজীব মাতুব্বর, খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ১নং ওয়ার্ড কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি কুদ্দুস মাতুব্বর, সদস্য আইয়ুব আলী হাওলাদার, আতা বালী, বাবুল বেপারী, আবুল মাতুব্বর, বাবুল শেখ, বিবেক গাইন, খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য মোঃ বাদল মিয়া, ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সম্পাদক প্রবাসী রিপন সরদার, ইউনিয়ন বিএনপির প্রচার সম্পাদক জিয়া ফকির, নুরুজ্জামান সরদারসহ দুই দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা খালের পাড়সহ খালের একাংশ দখল করে স্থাপনা নির্মান কাজ অব্যাহত রেখেছে। মাগুড়া-মাদারীপুর বোরো সেচ প্রকল্পের ম্যানেজার বলাল হোসেন, বয়সা সেচ প্রকল্পের ম্যানেজার শওকত হোসেন, মাগুড়া সেচ প্রকল্পের ম্যানেজার ইদ্রস হাওলাদার ও শফিকুর রহমানসহ ১০ জন ম্যানেজার জানান, এই খালের পানি সেচ দিয়ে গৌরনদী উপজেলার ইছাগুড়ি বাকাই, পূর্ব বাকাই মাগুড়া-মাদারীপুর, উত্তর মাগুড়া, দক্ষিন মাগুড়া, কুনিয়াকান্দি ও আগৈলঝাড়া উপজেলার বাশাইল, পূর্ব বাশাইল, রাজিহার, বাহাদুরপুর, দক্ষিন বাহাদুরপুর গ্রামের কমপক্ষে একশ’ প্রকল্পের মাধ্যমে ১০ হাজার একর জমিতে বোরো চাষাবাদ করা হয়। খালটি দখলের ফলে বোরো মৌসুমে পানির প্রবাহ কমে যাবে এবং বোরো চাষ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। জরুরী ভিত্তিতে খালটি দখলমুক্ত করার দাবি জানান তারা। গৌরনদী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক রাজীব মাতুব্বর জানান, খালটি সরকারি তবে আমি লিজ নিয়ে দোকান ঘর নির্মান করছি। খাঞ্জাপুর ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার জানান, সবাই দখল করে তাই আমরা তিন বন্ধু দোকান ঘর নির্মানের জন্য জায়গা দখল করেছি। ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক প্রচার সম্পাদক জিয়াউর রহমান ফকির জানান, বরিশাল জেলা পরিষদের উচ্চমান সহকারী মুজাহিদুল ইসলাম আমার নামে ৪০ ফুট খাল লিজ এনে দিয়েছে। তবে উচ্চমান সহকারী মুজাহিদুল লিজ এনে দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। দিইনি। লিজ নিয়ে বৈধভাবে দোকান নির্মানের কথা জানান অন্যান্য দখলকারীরা। খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আলম সেরনিয়াবাত জানান, খালটি সম্পূর্ন সরকারি জায়গায়। ব্যক্তি মালিকানার কোন সুযোগ নেই। গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলার প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষের জন্য খালটি জনগুরুত্বপূর্ন। অবৈধ দখলের ফলে খালটি সংকুচিত হয়ে আসছে। জরুরী ভাবে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করা প্রয়োজন। অপরদিকে উপজেলার সুন্দরদী গ্রামের নীলখোলা ও টরকী বন্দরের ছাগলহাটা সংলগ্ন এলাকায় সরকারী খাল দখল করে স্থাপনা নির্মান কাজ অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, নীলখোলা খালটি ত্রিশ ফুট চওড়া। তবে দখলের কারনে খালটি সঙ্কুচিত হয়ে সাধারণ মানুষের ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পরেছে। জানা গেছে, নীলখোলা খালের একাংশ দখল করে পাকা স্থাপনা নির্মান কাজ অব্যাহত রেখেছেন স্থানীয় জামাল হোসেনসহ একাধিক দখলকারীরা। জামাল হোসেনসহ অন্যান্য দখলকারীরা জানান, সরকারী খাল দখল নয় নিজেদের ক্রয়কৃত সম্পত্তিতে স্থাপনা নির্মাণ করছেন। বার্থী ইউনিয়ন তহসিলদার মিশেল আল সাদিক জানান, খাল দখলকারীদের বাঁধা দেয়া হয়েছে। তারা বাঁধা উপেক্ষা করে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়াও টরকী ছাগলহাটা এলাকার খাল দখলের বিষয়ে স্থানীয় বাবুল সরদার জানান, সোহাগ মাঝি গংরা খালের মধ্যে বালু ভরাট করে দখল করার চেষ্টা চালায়। পরে সে (বাবুল) রাস্তার পাশে টিন দিয়ে আটকে দিয়েছে। তবে স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রভাবশালীদের ম্যানেজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেখানে খালটি ভরাটের পাঁয়তারা করছেন দখলবাজ একটি মহল। গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস জানান, দখলদাররা যেই হোক না কেন কাউকে জনস্বার্থ বিরোধী কাজ করতে দেয়া হবে না। খালগুলো দখলমুক্তসহ দখলদারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।