শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৪০ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
জব্দ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর রিট আরেক হত্যা মামলায় সাবেক বিচারপতি মানিককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে মানহানির মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান উৎপাদনে ফিরলো কর্ণফুলী পেপার মিল ২০৫০ সালের মধ্যে ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণে দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, দলবল নিয়ে ঘুরছেন পার্কে পিআইবির নতুন ডিজি ফারুক ওয়াসিফ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আবদুল্লাহ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পোশাক শিল্প আইন আপনার হাতে তুলে নেয়ার কারো কোনো অধিকার নেই :স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বললেন মির্জা ফখরুল

বিএসএফের বাধায় বন্ধ রয়েছে ফেনীর বিলোনিয়া স্থলবন্দরের উন্নয়ন কাজ

মিজানুর রহমান ফেনী :
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১ জুলাই, ২০২১

ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের বাধায় থমকে আছে মুক্তিযুদ্ধের বহুল স্মৃতিবিজড়িত ফেনীর বিলোনিয়া স্থল বন্দরের কোটি টাকার অবকাঠামোগত উন্নয়নের এক-তৃতীয়াংশের কাজ। দেশের আমদানি-রপ্তানি গতিশীল ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে আন্ত: বাণিজ্য বাড়ানোর লক্ষ্যে দেশের স্থলবন্দরগুলোর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার যৌথভাবে দেশের ছয়টি স্থলবন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পরিকল্পনা হাতে নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের ২০ এপ্রিল অনেকটা ঢাকঢোল পিটিয়ে ১০ একর জায়গায় প্রায় ৩৭.৪০ কোটি টাকা ব্যায়ে অবকাঠামোগত উন্নয়নমূলক কাজের ভিত্তিপ্রস্তরস্থাপন করেন তৎকালীন নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ও ফেনীর তৎকালীন জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুজ্জামান , স্থানীয় সাংসদ শিরিন আক্তার সহ সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা। প্রকল্পের বরাদ্দকৃত প্রায় ৩৭.৪০ কোটি টাকার বিনিময়ে উন্নয়নমূলক কাজগুলোর মধ্যে ছিল ওয়্যার হাউজ, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, ওপেন স্ট্যাক ইয়ার্ড, পারকিং-ট্রান্সশীপমেন্ট ইয়ার্ড, ট্রান্সশিপমেন্ট শেড, ভবন নির্মাণ, ড্রেন, টয়লেট কমপ্লেক্স, ওয়েব্রীজ স্কেল, পানি সরবরাহ, বৈদ্যুতিকরণ, ওয়াচ টাওয়ার, ফায়ার ফাইটিল স্থাপন। আগামী বছরের জুন মাসকে প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ধরা হলেও উদ্বোধনের ৩ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি সাদৃশ্য না হওয়ায় প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখবে কি না তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। প্রথম পর্যায়ে জায়গা অধিগ্রহণ নিয়ে স্থানীয় লোকদের আপত্তির মুখে পড়ে প্রকল্পের কাজ বন্ধ রেখে নির্ধারিত সময়ের পরে শুরু করা হলেও দ্বিতীয় পর্যায়ে দফায় দফায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বাধার মুখে পড়ে প্রকল্পটি। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায় বিভিন্ন বাধাবিঘœ ডিঙিয়ে এখন পর্যন্ত কাজের প্রায় ২০ ভাগ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। প্রকল্পের নির্ধারিত স্থানের ৭০ থেকে ৭৫ অংশ সীমান্তের দেড়শ গজের ভিতরে হওয়ায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের পক্ষ থেকে ওই কার্যক্রম পরিচালনায় বাধা আসে। দু’দেশের যৌথ সিদ্ধান্তে বন্দরের কাজ শুরু হলেও ভারত নিজে চুক্তি না মেনে আন্তর্জাতিক সীমানার দোহাই দিয়ে বাংলাদেশের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। এনিয়ে দু-দেশের মধ্যে মৌখিক কথা হলেও কোনো সুফল মিলেনি বলে জানায় বন্দর কর্তৃপক্ষ। দু’পক্ষের এহেন টানাপোড়নে এখন রীতিমতো সীমান্তে আতংক বিরাজ করছে বলে জানায় স্থানীয়রা। এমতাবস্থায় প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে আর শ্রমিকদের মজুরি নিয়েও শঙ্কায় আছেন খোদ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পিবিএল টপ লাইনের কর্ণধার ফয়সাল হায়দার। এই দুইবছরের মাঝে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়ার আশংকাও প্রকাশ করেন তারা। অন্যদিকে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকায় নষ্ট হতে যাচ্ছে খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকা নির্মাণাধীন সামগ্রী। দ্রুত সময়ের মধ্যে দু-দেশের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিদের সমঝোতার মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহা করে কার্যক্রম সম্পন্ন করার সুযোগ করে দেওয়ার দাবী জানিয়েছেন ঠিকাদার। এবিষয়ে জানতে চাইলে ফেনীর জায়লস্করস্থ ১৯ বিজিবির অধিনায়ক লে.কর্ণেল আব্দুর রহিম দৈনিক খবরপত্রকে জানান, উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত জায়গার কিছু অংশ সীমান্তের দেড়শ গজের ভিতরে পড়ায় সেটি ব্যাতিত বাকী কার্যক্রম চলছে। তিনি বলেন, বরাদ্দকৃত ১০ একর জায়গার মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ জায়গা ভিতরে পড়ায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের পক্ষ থেকে মৌখিক ভাবে কাজ বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। তবে প্রতিত্তোরে বিজিবি থেকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য মৌখিকভাবে সুপারিশ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। তবে বিএসএফ তাদের ঊর্ধ্বতন মহলের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে জানায়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পিবিএল টপ লাইনের কর্ণধার ফয়সাল হায়দার বলেন, বরাদ্দকৃত ১০ একর জায়গার ভিতর প্রায় ৭ থেকে সাড়ে ৭ একর জায়গার কাজ ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা বিভিন্ন সময় বিজিবি সহ মাপার মধ্য দিয়ে বন্ধ করে দেয় ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা। প্রকল্পের শুরু অর্থাৎ ২০১৯ সাল থেকেই সেখানে কাজ করতে বিএসএফ থেকে বাধা দেওয়া হয় বলে জানান তিনি। প্রকল্পের জন্য দেওয়া ১০ একর জায়গার ৭০ শতাংশই সীমান্তের দেড়শ গজের ভিতরে, বাকী আড়াই একর জায়গায় কাজ এরইমধ্যে সম্পন্ন হওয়ার পথে রয়েছে বলে জানান ফয়সাল হায়দার। ফয়সাল হায়দার বলেন, দিল্লিতে ভারত-বাংলাদেশের প্রতিনিধির যৌথ সভায় দু-দেশই দেড়শ গজের ভিতরে কাজ করতে পারবে চুক্তি হলেও এই ক্ষেত্রে সেটা মানছেন না তারা। বরাদ্দকৃত ওই সাত থেকে সাড়ে সাত একর জায়গায় নির্মাণাধীন সামগ্রী রাখা হলেও সীমান্তরক্ষীরা তা সরিয়ে নিতে তোড়জোড় শুরু করেন। এমতাবস্থায় কাজে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে প্রকল্পটি। বিলোনিয়া স্থলবন্দর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ ইব্রাহিম ভূইয়া জানান, প্রকল্পের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া ভুমির অর্ধেকেরও বেশি সীমানা ঘেঁষা, বাকী জায়গায় কাজ এরইমধ্যে শেষ হয়েছে বলে জানান তিনি। দু-দেশের মধ্যকার সমোঝোতা না হওয়ায় নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে বেগ পেতে হচ্ছে ঠিকাদারকে। ব্যবহার না হওয়ায় ও খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকায় নষ্ট হচ্ছে অনেক টাকার নির্মাণ সামগ্রী। দ্রুত সময়ে এর সমাধা না করলে ঠিকাদাররা লোকসানের মুখে পড়বে বলেও জানান তিনি। এদিকে বন্দরের কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও শ্রমিকরা জানায়, পুরো সীমান্ত এলাকায় ভারতীয়দের বাড়িঘর থাকলেও দেড়শ গজের মধ্যেও এপাড়ের মানুষদের বাগান করতেও বিএসএফ’র বাধার মুখে পড়তে হয়। দেড়শ গজের বাইরে গিয়ে কাজ করতে বললেও তারা নিজেরাই তার ভিতরে কাজ করেছে বলেও জানায় স্থানীয়রা। সীমান্তে চলমান দু-দেশের এই টানাপড়েনকে ঘিরে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সীমান্তে সেনা মোতায়েনের ও দাবী জানান এলাকাবাসী।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com