দেশে হু হু করে করোনায় মৃত্যু বাড়লেও রাজধানীর নির্ধারিত কবরস্থানে দাফনের চাপ নেই। এর আগে করোনার ছোবলে মৃতের সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী হলেও কবরস্থানে যে কর্মব্যস্ততা ছিল, এবার আগের চেয়ে মৃত্যু বাড়লেও সেই ব্যস্ততা আর নেই। অগ্রিম কবর খুড়ে রাখার প্রযোজনও পড়ছে না। এর কারণ দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে ঢাকার বাইরে বেশিরভাগ রোগী মারা যাচ্ছেন। আর ঢাকাতে যারা মারা যাচ্ছেন তাদেরও নিজ জেলায় গ্রামের বাড়িতে দাফন করার সুযোগ আছে।করোনায় মৃত ব্যাক্তিদের জন্য রাজধানীতে একমাত্র নির্ধারিত স্থান মিরপুর রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন কবরস্থান। আয়তন ৯৬ একরের এই কবরস্থানটি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। এর এর ৮ নম্বর ব্লকটি করোনায় মৃতদের জন্য সংরক্ষিত। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মাসের শুরুর পাচঁ দিনে ঢাকায় অর্ধশতাধিক মানুষ মারা গেলেও মাত্র ৫টি লাশ দাফন করা হয়েছে।আগের মাস জুনে ১৮ জনের লাশ দাফন করা হয়। এরআগে গত মে মাসে ১৭ জন করোনা আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন করা হয়েছে। আর গত এপ্রিল মাসে ২০১ জন করোনা আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন করা হয়েছিল।
এপ্রিলে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এই কবরস্থানে ব্যাপক কর্মতৎপরতা বেড়ে গিয়েছিল। গোরখোদকদের কবর খুড়ার চাপ কমাতে একটি ভেকু (এক্সক্যাভেটর) নিয়োজিত করা হয়েছিল। কিন্তু এখন সেই তোলনায় গোরখোদকদের কোন কর্মব্যস্ততাই নেই। এ বিষয়ে সোমবার ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান সমাজ কল্যাণ ও বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন-উল-হাসান বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আগের মতো এখন আর কবরস্থানে লাশ দাফনের চাপ নেই। তার কারণ করোনায় ঢাকার বাহিরেই অধিকাংশ মানুষ মারা যাচ্ছেন। আবার যারা ঢাকায় মারা যাচ্ছেন তাদের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করার সুযোগ আছে। এ কারণে অনেকেই লাশ নিয়ে ঢাকার বাহিরে চলে যাচ্ছেন।
রায়েরবাজার কবরস্থানের দায়িত্বে থাকা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সমাজ কল্যাণ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, নতুন মাস জুলাইয়ে আজ (৫জুলাই) আমরা ৫ জনের লাশ দাফন করেছি। বুঝতেই পারছেন কোন চাপ নেই। আগে থেকে কবর প্রস্তুত করেও রাখা হচ্ছে না। কেউ মারা গেলে এবং বুকিং নিশ্চিত করলে আমরা কবর প্রস্তুত করি। সংশ্লিষ্ট কবরস্থানের দায়িত্বে থাকা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সহকারী সমাজ কল্যাণ কর্মকর্তা আব্দুল হাই তালুকদার বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, এমন সময়ে আগে গোরখোদকরা ব্যস্ত সময় পার করতেন। কবর খুঁড়ে খুঁড়ে ক্লান্ত হয়ে পরতেন। এখন সেই চিত্র নেই। চাপ না থাকলেও আমাদের প্রস্তুতির ঘাটতি নেই।
রায়েরবাজার কবরস্থানের দায়িত্বে থাকা সিনিয়র মোহরার আব্দুল আজিজ বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আমরা দিনে একটি বা দুইটি করোনায় মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন হচ্ছে। করোনা রোগীদের তোলনায় সাভাবিক মৃত ব্যক্তিদের লাশ দাফনের চাপ বেশি।
করোনার মৃত ব্যক্তির কবরের পরিসংখ্যান: রায়েরবাজার কবরস্থানে এখন পর্যন্ত সাড়ে ১২০০ জনের মৃত ব্যক্তির কবর দেয়া হয়েছে। শুরুতে খিলগাঁও তালতলা সরকারি কবরস্থানে করোনায় মৃতদের দাফন করা হতো। সেখানে ১৯০ জন কবর দেয়ার পর বিভিন্ন সমস্যার কারণে স্থগিত রাখা হয়। রায়েরবাজার কবরস্থানে পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ২৭ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ৯ জন এবং মার্চে ৫৫ জনের করোনার লাশ দাফন করা হয়। অন্যদিকে ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে ৪০ জন, নভেম্বর মাসে ৫১ জন ও ডিসেম্বর মাসে ৬৬ জনের লাশ দাফন করা হয়।