ঘুরে দাঁড়াল দেশের রফতানি আয়
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সর্বশেষ অর্থবছরের রফতানি আয়ে মহামারীর সঙ্কটের মধ্যেও বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর তথ্য পাওয়া গেছে। এক বিলিয়নের মাইলফলক অতিক্রম করা খাতগুলোর মধ্যে হোম টেক্সটাইলের প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি। মহামারীর মধ্যেও সদ্য সমাপ্ত ২০২০-২০২১ অর্থবছরের রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধিসহ কয়েকটি ইতিবাচক সূচকের দেখা মিলেছে। যদিও সামগ্রিক রফতানি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এখনো সাড়ে পাঁচ ভাগ পিছিয়ে। বাংলাদেশ গত ৩০ জুন শেষ হওয়া অর্থবছরে মোট তিন হাজার ৮৭৫ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের (৩৮ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন) পণ্য রফতানি করেছে।
অন্য একটি সূত্রে প্রকাশ,পণ্য ও সেবাখাত মিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সদ্যবিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে অর্জিত ৪৫ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের চেয়ে এই লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার বা ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেশি। মোট লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে পণ্যখাতে ৪৩ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার ও সেবাখাতে ৭ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার অনলাইন প্লাটফর্মে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এসব তথ্য জানান বলে
বাসস’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশ ও দেশের বাইরে কোভিড অতিমারি এবং আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এবারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫১ বিলিয়ন ডলার। রপ্তানির এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সহায়তা দেয়া হবে বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, কোভিড পরিস্থিতির মধ্যে বিদায়ী অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে আমরা ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পেরেছি। এতে আমরা আশান্বিত এবার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলো, সেটা অর্জন করা সম্ভব হবে।
টিপু মুনশি বলেন, কোভিড স্বত্ত্বেও বাংলাদেশের রপ্তানি খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে এই খাতে প্রণোদনাসহ প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা দেয়া হচ্ছে। রপ্তানি পণ্যের বহুমূখীকরণ ও বাজার সম্প্রসারণে নেয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। তিনি রপ্তানি আয়ের নতুন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যবসায়ীসহ রপ্তানি সংশ্লিষ্টদের নিকট সহায়তা কামনা করেন। তিনি বলেন, সবাই মিলে আন্তরিকভাবে কাজ করলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কঠিন হবে না। তিনি বলেন, সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি অন্যান্য পণ্যের রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে যা অত্যন্ত ইতিবাচক। তিনি বলেন, পোশাকের পাশাপাশি লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, আইসিটি, লেদার ও লেদারগুডস, প্লাস্টিক এবং কৃষিজাত পণ্য রপ্তানির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। তাই পণ্য বহুমূখীকরণের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নসহ নানা উদ্যোগ সরকার গ্রহণ করেছে।
প্রসঙ্গত বিদায়ী অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার। অর্জিত হয়েছে ৪৫ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার, যা এর আগের ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি। পণ্য রপ্তানির লক্ষ্য ছিল ৪১ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে অর্জিত হয়েছে ৩৮ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার, অর্থ্যাৎ লক্ষ্যমাত্রার ৯৪ দশমিক ৫৬ ভাগ অর্জিত হয়েছে। সেবাখাতের ৭ বিলিয়ন ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৬ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার বা ৯৫ ভাগ অর্জিত হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের জন্য নিটওয়্যার পোশাকখাতের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার, ওভেন পোশাক শিল্পে ১৫ দশমিক ৬২ বিলিয়ন, হিমায়িত ও তাজা মাছ ৫০০ মিলিয়ন, কৃষি পণ্য ১১০৪ মিলিয়ন, পাট ও পাটজাত পণ্য ১৪৩০ মিলিয়ন, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য ১০৩১ মিলিয়ন, হোম টেক্সটাইল ১৩৭০ মিলিয়ন এবং পাদুকা রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রার নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০০ মিলিয়ন ডলার।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বাণিজ্য সচিব সচিব তপন কান্তি ঘোষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান, রপ্তানিমূখী তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. সিদ্দিকুর রহমান, বিকেএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম, টেনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ, বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
ঘুরে দাঁড়াল দেশের রফতানি আয়: ডয়েচে ভেলে সূত্রে প্রকাশ,রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সর্বশেষ অর্থবছরের রফতানি আয়ে মহামারীর সঙ্কটের মধ্যেও বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর তথ্য পাওয়া গেছে। এক বিলিয়নের মাইলফলক অতিক্রম করা খাতগুলোর মধ্যে হোম টেক্সটাইলের প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি। মহামারীর মধ্যেও সদ্য সমাপ্ত ২০২০-২০২১ অর্থবছরের রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধিসহ কয়েকটি ইতিবাচক সূচকের দেখা মিলেছে। যদিও সামগ্রিক রফতানি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এখনো সাড়ে পাঁচ ভাগ পিছিয়ে। বাংলাদেশ গত ৩০ জুন শেষ হওয়া অর্থবছরে মোট তিন হাজার ৮৭৫ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের (৩৮ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন) পণ্য রফতানি করেছে। আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১০ ভাগ বেশি। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে চার হাজার ১০০ কোটি ডলার রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও সার্বিক চিত্র দেখে অনেকটা আশান্বিত হওয়ার কথা জানান শিল্প মালিক ও রফতানিকারকরা। বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের এপ্রিলে যখন মহামারী হানা দেয় তখন আমরা কারখানা লম্বা সময় বন্ধ রেখেছিলাম। তবে এবার আরো খারাপ পরিস্থিতির মধ্যেও মালিক-শ্রমিকেরা সাহস করে উৎপাদন প্রক্রিয়া চালু রেখেছেন। সরকারও এ বিষয়ে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। এমন পরিস্থিতিতে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি মহামারীতে ঘুরে দাঁড়ানোর সূচক। তিনি বলেন, পোশাক খাত গত কয়েক মাসে অনেকটা ‘কাভার’ করেছে গত বছরের চেয়ে সাড়ে ১২ ভাগ প্রবৃদ্ধি রয়েছে। তবে মহামারী শুরুর আগের পরিস্থিতির সাথে তুলনা করলে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে এখনো ৭ দশমিক ৮৪ ভাগ পিছিয়ে আছি।
নিট পোশাক ইতোমধ্যে প্রি-কভিড অবস্থায় ফিরেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের তুলনায় দশমিক ৪৪ ভাগ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ওভেনে এখনো ১৬ ভাগের মতো পিছিয়ে আছি। আমরা অর্ডার পাচ্ছি, ইউরোপ-আমেরিকাতে সব মার্কেট খুলে গেছে। ইপিবির সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মোট রফতানি আয়ের ৮১ ভাগই এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এছাড়া পাট ও পাটপণ্য, চামড়া ও চামড়াপণ্য, হোম টেক্সটাইল, প্লাস্টিক পণ্য, কৃষিপণ্য রফতানিতে আয় ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে তিনি হাজার ১৪৫ কোটি ৬৭ লাখ ডলারের পোশাক পণ্য রফতানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১২ দশমিক ৫৫ ভাগ বেশি। গত অর্থবছরে ১১৬ কোটি ১৯ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি হয়েছে। এর আগের অর্থ বছরের চেয়ে যা ৩১ দশমিক ৬৩ ভাগ বেশি। এ ছাড়া ১১৩ কোটি ২০ লাখ ডলারের হোম টেক্সটাইল রপ্তানির পর এই খাতে ৪৯ দশমিক ১৭ ভাগ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এক বিলিয়নের মাইলফলক অতিক্রম করা খাতগুলোর মধ্যে হোম টেক্সটাইলের প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি। বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান সার্বিক রফতানি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেন, লেদার আগের চেয়ে ভালো করেছে। পাট, কৃষিপণ্য ও হোম টেক্সটাইল এক বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক ক্রস করেছে। ভবিষ্যতে ফার্মাসিউটিক্যাল খাতও অনেক ভালো করবে বলে আশা করেন তিনি।