করোনায় বিপর্যস্ত পুরো বিশ্ব। স্থবির হয়ে গেছে সব কর্মকা-। চরম আঘাত এসেছে অর্থনীতিতে। বিশ্বের মতো বাংলাদেশকেও বেশ ধাক্কা দিয়েছে এই প্রাণঘাতী ভাইরাস। অর্থনীতির গতি সচল রেখেছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সচল ছিল দেশের অন্যতম অর্থকরী চা শিল্প। খোলা ছিল চা বাগান ও কারখানা। এতে বাগান মালিকদের পাশাপাশি বেঁচেছে শ্রমিকদের জীবন। চা শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনায় চা বাগান বন্ধ রাখলে পথে বসতে হতো তাদের। বিশেষ করে চরম খাদ্য সংকটে পড়ত এ শিল্পের দেড় লাখ শ্রমিক ও তাদের পরিবার। আশার কথা হচ্ছে, খোলা রাখার পরও এখন পর্যন্ত চা বাগানের কেউ করোনা আক্রান্ত হয়নি।গত জুনের শেষ দিকে চায়ের রাজধানী খ্যাত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ও হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার বিভিন্ন চা বাগান ঘুরে দেখেছে জাগো নিউজ। এসময় চা শিল্পের বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে কথা হয়। তারা প্রধানমন্ত্রীর চা বাগান খোলা রাখার সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার আমতলী টি স্টেটের শ্রমিক নয়ন (৩২) জানান, বাগান পরিষ্কার করার দায়িত্ব তার। খড়ি তোলেন। ৮ ঘণ্টা ডিউটি। দৈনিক ১২০ টাকা পান। ছয় সদস্যের পরিবার তার এই আয়ে চলে। এই আয়ে চলতে কষ্ট হয়। কাজ বন্ধ থাকলে খুবই কষ্ট, অভাব দেখা দেয়। কাজ থাকলে খাবারের জোগান হয়, না চললে নেই। একই বাগানের শ্রমিক মাধাই (৫০), চা বাগানে ওধুষ দেন। দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করেন, ১২০ টাকা করে পান। করোনায় ৬ ঘণ্টা কাজ করেছেন। মালিক সব কিছু চালিয়ে নিয়েছেন। খাবার বা আয়ে কোনো সমস্যা হয়নি। পুরো বাগানে সাড়ে ৬ হাজার লোক কাজ করে। যে আয় তাতে কোনো রকম চলে যায়।
এ বাগানে চা-পাতা তোলেন রিবিকা (৪৫)। তিনি বলেন, দৈনিক ২৪ কেজি পাতা তুললে ১১৮ টাকা পাই। এ দিয়ে সংসার চালাতে কষ্ট তো হবেই। জিনিসপত্রের যে দাম। অসুস্থ হলে তো ইনকাম নেই। অবশ্য চিকিৎসা আছে। করোনায় চা বাগান সচল রাখার বিষয়ে রিবিকা বলেন, ‘শেখ হাসিনা আমাদের সুযোগ করে দিয়েছেন। ওকে দোয়া করবো না? ও আছে বলে আমরা অনেক সুখে আছি। তাকে কখনো নিন্দা করবো না।’ আরেক চা শ্রমিক স্বপ্না (৩৫)। দুই মেয়ে, স্বামীসহ তার চারজনের সংসার। স্বামী-স্ত্রী দুজনই চা বাগানে কাজ করেন। দৈনিক কাজে ১২০ টাকা করে পান। এই টাকায় সংসার চালাতে কষ্ট হয়। সব কিছুর দাম বেশি। শিশুরা স্কুলে গেলে অন্তত ৫ টাকা করে দেয়া লাগে। খরচ অনুযায়ী আয় কম। কাজ বন্ধ থাকলে তো বাঁচার উপায় নেই। আমতলী চা বাগানের ব্যবস্থাপক সোহেল রানা পাঠান বলেন, এখন পর্যন্ত করোনায় একজন চা শ্রমিকও আক্রান্ত হয়নি। করোনা চা শিল্পকে ছুঁতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা সব সচল রেখেছি। যে কারণে মালিকদের পাশাপাশি শ্রমিকরাও বেঁচে গেছে। তিনি বলেন, করোনায় চা বাগান বন্ধ থাকলে পথে বসতে হতো। বাগান জঙ্গল হয়ে চাষের অনুপোযোগী হয়ে যেত। মালিক ও শ্রমিক উভয়ে চরম সংকটে পড়ত। সোহেল রানা জানান, তার বাগানে ৩০০ শ্রমিক কাজ করে। এছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ের লোক ও তাদের পরিবারের সদস্যসহ দুই হাজার মানুষের একটি পরিবার। সবার জীবন ও জীবিকা এই বাগানের ওপর। এটি সচল থাকলে এখানকার সবার জীবনই সচল থাকে।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ইস্পাহানির জেরিন টি স্টেটের ম্যানেজার সেলিম রেজা বলেন, আমরা মনে করি, চা বাগানের উন্নয়ন, প্রোডাকশন ও চায়ের মানোন্নয়নের পাশপাশি চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন অবশ্যই করতে হবে। তারা ভালো থাকলে বাগান ভালো থাকবে, প্রোডাকশন বৃদ্ধি পাবে। সেই ব্রত নিয়ে কোম্পানির নির্দেশনায় আমরা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করি। চা শিল্পের কার্যক্রম লকডাউনেও চলমান রাখায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশে চায়ের চাহিদা বেড়েছে। রফতানি চাহিদাও আছে। আমাদের লোকাল চাহিদা বাড়ায় রফতানি কমেছে। উৎপাদন আগের জায়গায় স্থির রয়েছে। আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে।
হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, জেলায় ২৪টি বড় চা বাগান রয়েছে। সেখানে যে চা শ্রমিক রয়েছে, প্রধানমন্ত্রী তাদের প্রতি সুদৃষ্টি দিয়েছেন। তাদের বিভিন্ন ভাবে মানবিক সহায়তা করছেন। পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতিতে সবকিছু বন্ধ থাকলেও চা বাগান একদিনের জন্যও বন্ধ ছিল না।
চা শ্রমিকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিয়মিত কাজ করতে পেরেছেন। যে কারণে তাদের আহারে বা কর্মসংস্থানে কোনো সমস্যা হয়নি। আমরাও চেষ্টা করে যাচ্ছি, প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী তাদের পাশে দাঁড়ানোর। তাদের যেন কোনো রকমের অর্থ, কর্মসংস্থান বা অন্য কোনো সমস্যা না হয়, সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। উল্লেখ্য, সরকারি হিসাব মতে, দেশে মোট ১৬৭টি চা বাগান। ২০১৯ সালে রেকর্ড পরিমাণ ৯৬.০৭ কেজি এবং ২০২০ সালে ৮৬.৩৯ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়। এছাড়া ২০২০ সালে রেকর্ড পরিমাণ ২.১৭ মিলিয়ন কেজি চা রফতানি হয়।- জাগো নিউজ