অভিযুক্ত এএসআই সুভাষ চন্দ্রের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন
‘কথা ছিল এবারের কোরবানির ঈদে পশু কোরবানি দেব। বাবা আর আমি একসঙ্গে কোরবানির পশু কিনতে যাব। কিন্তু তার আগেই বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। করোনা উপসর্গ দেখা দেয়ায় গত এক সপ্তাহ ধরে বাড়িতে চিকিৎসা চলছিল। তিন-চারদিন আগে হঠাৎ করে বাবার শ্বাসকষ্ট শুরু হলে চিকিৎসক অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে বলেন।’ ‘শহরের এক ব্যবসায়ী আমাকে অক্সিজেন দান করেন। কয়েক দিন ধরে বাবার অক্সিজেন চলছিল। বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) সকালে সেই সিলিন্ডারে অক্সিজেন শেষ হয়ে গেলে আমি দ্রুত মোটরসাইকেল নিয়ে শহরে অক্সিজেন রিফিল করতে আসি। তবে অক্সিজেন রিফিল হলেও সময়মতো তা নিয়ে বাড়িতে পৌঁছাতে পারিনি। অসুস্থ বাবার শেষ যাত্রার আগে একটু অক্সিজেন দরকার ছিল। তীব্র শ্বাসকষ্টে ছটফট করতে করতে আমার বাবা পৃথিবী ছেড়েছেন। অথচ সেই সময় আমি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে। টাকার জন্য পুলিশের এক এএসআই আমাকে দুই ঘণ্টা রাস্তায় আটকে রাখল।’ গতকাল শুক্রবার (৯জুলাই) সকালে কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন অক্সিজেনের অভাবে পিতৃহারা সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈচনা গ্রামের ওলিউল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘এ সময় আমার পকেটে ছিল মাত্র ৫০০ টাকা। ২৭০ টাকা দিয়ে অক্সিজেন রিফিল করে বাড়ি ফেরার পথে শহরের হাটের মোড় এলাকায় পুলিশ আমাকে পথ আটকে মোটরসাইকেলের কাগজ দেখতে চাই। কাগজপত্র সব ঠিক ছিল। ভুলে বাড়িতে রেখে গিয়েছিলাম। কাগজ দেখাতে না পারায় পুলিশের এএসআই সুভাস আমার কাছে টাকা দাবি করেন। তার চাহিদামত টাকা দিতে না পারায় সেখানে দুই ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। পরে ২০০ টাকা দিয়ে বাড়ি ফিরে দেখি আমার বাবা আর নেই। আমি ওই পুলিশের বিচার চাই।’ তিনি জানান, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) বিকেলে বাবার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমার কাছ থেকে বিষয়টি শুনেছেন। এ বিষয়ে আমি লিখিত অভিযোগ দায়ের করবো।’
জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আলি নুর খান বাবুল বলেন, ‘এই জরুরি মুহূর্তে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে কেউ বাইরে ঘুরতে বের হয় না। ওই ব্যক্তির কাছে অক্সিজেন সিলিন্ডার ছিল। তিনি বারবার অনুরোধ করার পরও তাকে টাকার জন্য দুই ঘণ্টা আটক রাখা হয়। ঘটনাটি অমানবিক।’ বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি। সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হুসেইন বলেন, ‘এই ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা আগামী তিন দিনের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করবেন। এখনও তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্তে দোষী হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ এ বিষয়ে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) সজিব খান বলেন, ‘অভিযুক্ত এএসআই সুভাষের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা কাজ শুরু করেছে।’ এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, অসুস্থ বাবার জন্য সিলিন্ডার নিয়ে যাওয়ার পথে শহরের ইটাগাছা হাটের মোড়ে পুলিশের এক এএসআই ছেলেকে দু’ঘণ্টা আটকে রাখায় অক্সিজেনের অভাবে ওই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) সকালে করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ওই বৃদ্ধের নাম মো. রজব আলী মোড়ল (৬৫)। তিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈচনা গ্রামের বাসিন্দা।