মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৪৫ অপরাহ্ন

করোনাভাইরাস মহামারির তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গেছে: ডব্লিউএইচও

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই, ২০২১

করোনাভাইরাস মহামারির তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গেছে। আমরা এখন এর প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছি বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। তারা বলেছে, এবারের ঢেউয়ে বড় আতঙ্কের কারণ হতে পারে অতিসংক্রামক ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। বার্তা সংস্থা এএনআইয়ের বরাতে এসব তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। গত বুধবার ডব্লিউএইচও প্রধান তেদ্রোস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস বলেছেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবেৃ আমরা বর্তমানে [করোনা মহামারির] তৃতীয় ঢেউয়ের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছি।’ তার মতে, করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারের পাশাপাশি সামাজিক গতিশীলতা এবং প্রমাণিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অসামঞ্জস্য ব্যবহার বৃদ্ধির বড় ভূমিকা রয়েছে।
গ্যাব্রিয়েসুস জানান, ভাইরাসটি বিকশিত হওয়া অব্যাহত রেখেছে, যার মাধ্যমে অধিক সংক্রামক ধরনগুলো তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ১১১টির বেশি দেশে পৌঁছে গেছে। আমরা ধারণা করছি, এটি শিগগিরই বিশ্বজুড়ে করোনার সবচেয়ে প্রভাবশালী ধরন হিসেবে আবির্ভূত হবে, যদি না তা ইতোমধ্যেই হয়ে গিয়ে থাকে।’
গত সপ্তাহে টানা চতুর্থ সপ্তাহের মতো বিশ্বজুড়ে করোনা সংক্রমণের হার বাড়তে দেখা গেছে। এর মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ছয়টি অঞ্চলের মধ্যে একটি বাদে সবগুলোতেই রেকর্ড সংখ্যক সংক্রমণ হয়েছে। টানা ১০ সপ্তাহ কমার পর সম্প্রতি করোনায় মৃত্যুও ফের বাড়তে শুরু করেছে। করোনার এই ভয়াবহতা ঠেকাতে টিকাদানের বিকল্প নেই বলে মনে করিয়ে দিয়েছেন ডব্লিউএইচও প্রধান। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিটি দেশের অন্তত ১০ শতাংশ মানুষকে করোনা টিকার আওতায় আনতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আহ্বানের কথাও ফের উল্লেখ করেন তিনি।
অন লাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউন ‘স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরামর্শই মানছে না সরকার!’ শিরোনামে আকেটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হলো:চলতি জুলাই মাসকে ‘কঠিন’ বলে আখ্যায়িত করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। অধিদফতর বলছে, জুনে যত রোগী শনাক্ত হয়েছিল, সে পরিমাণ শনাক্ত হয়েছে জুলাইয়ের ১৪ দিনে। সংক্রমণ ও মৃত্যুর এ গতি আরও বাড়বে যদি সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া না হয়। এ অবস্থায় পশুর হাট না বসানোর সুপারিশ করেছিল অধিদফতর। কিন্তু শনিবার (১৭ জুলাই) থেকে রাজধানীতে বসছে হাট।
গত ২৪ ঘণ্টায় (১৪ জুলাই) দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২১০ জন। এ নিয়ে টানা চতুর্থ দিনের মতো দেশে একদিনে মৃত্যু ২০০-এর বেশি। গতকাল (১৩ জুলাই) ২০৩ জন, ১২ জুলাই ২২০ জন ও ১১ জুলাই ২৩০ জনের মৃত্যুর কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর।
গত এক সপ্তাহের মধ্যে শেষের চারদিন বাদ দিলেও মৃত্যুর সংখ্যা কম নয়। ১০ জুলাই মারা যান ১৮৫ জন, ৯ জুলাই ২১২ জন ও ৮ জুলাই ১৯৯ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে অধিদফতর। ১৪ জুলাইসহ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ছাড়িয়েছে ১৭ হাজার।
দেশে করোনার সংক্রমণ গত ডিসেম্বরে কমে এলেও এ বছরের মার্চে ঊর্ধ্বমুখী হয়। গত প্রায় এক মাস ধরে পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক অবস্থায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে, সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় সবচেয়ে বেশি রোগী যেসব দেশে শনাক্ত হচ্ছে তাদের মধ্যে বাংলাদেশ অষ্টম। মৃত্যুর তালিকাতেও তাই।
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার গত ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করে। কিন্তু আগামীকাল ১৫ জুলাই ভোর থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত আটদিন বিধিনিষেধ শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এই শিথিল বিধিনিষেধ নিয়ে খোদ শঙ্কা প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। অধিদফতর জানাচ্ছে, এতে দেশব্যাপী সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর মনে করে বিধিনিষেধ শিথিল করায় সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।’
তিনি আরও জানান, ‘জুনে এক লাখ ১২ হাজার ৭১৮ জন রোগী শনাক্ত হয়েছিল। জুলাইয়ের ১৪ দিনে আমরা এত রোগী পেয়ে গেছি। এই মাসের আরও ১৬ দিন বাকি আছে।’ ‘স্বাস্থ্যবিধি ও প্রতিরোধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আরও দুই সপ্তাহ এমন মৃত্যু চলতে পারে। এমনকি এ প্রবণতা টানা তিন সপ্তাহও গড়াতে পারে।’ বলেন অধ্যাপক রোবেদ আমিন।
বিধিনিষেধ শিথিল নিয়ে আপত্তি রয়েছে জাতীয় কারিগরি পরার্মশক কমিটিরও। কমিটির একাধিক সদস্য শঙ্কার কথা জানিয়ে বলেছেন, এই শিথিলতার সুযোগে সংক্রমণ কোথায় যাবে তা আঁচ করা মুশকিল। এদিকে, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে এবার রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে ১৯টি অস্থায়ী পশুর হাট বসছে। এ ধরনের হাট না বসানোর সুপারিশ করেছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম গত ৫ জুলাই বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর সুপারিশ করছে কোরবানির হাট ফিজিক্যাল না করে অনলাইনে করতে।
গতবছর পশুর হাট বসায় সংক্রমণ বেড়ে গিয়েছিল বলে মনে করিয়ে দেন তিনি। সেটার কারণে পরে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বেশ সময় লেগেছিল।
গতবছরও ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে পশুর হাট না বসানোর সুপারিশ করেছিল কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এদিকে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেক বলেন, ‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট অন্য ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে বেশি আগ্রাসী। তারপরও মানুষ লকডাউন মানতে চায় না। এ কারণেই সংক্রমণ বাড়ে। তার প্রমাণ হাসপাতালের রোগীর সংখ্যা। প্রায় সব হাসপাতালে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত রোগী, আইসিইউ বেডও কম।’
‘স্বাস্থ্য বিভাগ সবসময় বলে এসেছে, স্বাস্থ্যবিধি না মানা হলে হাসপাতালে জায়গা দেওয়া যাবে না।’ এমনটা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ঈদের অনুভূতির কথা মেনে এমনটা করেছে। সকলেই জানে দেশে করোনার পরিস্থিতি কেমন। কিন্তু মানুষের দাবিতে, দোকানদারের দাবিতে সরকার লকডাউন খুলে দিলো। এখন মানুষের দায়িত্ব হলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।’ মন্ত্রী আরও বলেন, ‘লকডাউন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একা দেয় না। আরও ১০টা মন্ত্রণালয় আছে। সবারটা মিলিয়ে একটা সিদ্ধান্ত সরকার জানিয়ে দেয়। আর সরকারকে তো আমরাই কেবল পরামর্শ দিচ্ছি না, অন্য মন্ত্রণালয়ও দিচ্ছে।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com