লক্ষ্যটা ছিল নাগালের মধ্যেই। তবে ধারাবাহিক বিরতিতে উইকেট পড়ায় লক্ষ্যটা কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। ওয়ান ডাউনে নামা সাকিব আল হাসান ছিলেন অটল, দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সতীর্থরা যখন যাওয়া আসার মিছিলে ব্যস্ত, তখন তিনি ঢাল হয়ে দাঁড়ালেন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সাথে খ- জুটি দলের জয় ভিত গড়ে দেয়। সাইফউদ্দিনের সাথে অষ্টম উইকেট জুটি পাইয়ে দেয় দারুণ এক জয়। গত রোববার দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে ১৫৫ রানে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। এক ম্যাচ হাতে রেখে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতল টাইগাররা। এর মাধ্যমে এক যুগ পর জিম্বাবুয়ের মাটিতে সিরিজ করায়ত্ত করলো তামিম বাহিনী। সর্বশেষ সিরিজ জয় ছিল ২০০৯ সালে। সাকিবের ব্যাটেই বলতে গেলে এই সিরিজ জয়। তবে তার মনে আফসোসও রয়েছে। কারণ ৯৬ রানের তিনি ছিলেন অপরাজিত। ৫ বল হাতে থাকতে জিতে যায় বাংলাদেশ সাকিবের এক বাউন্ডারিতে।
আগে ব্যাট করতে নেমে জিম্বাবুয়ে করে ৯ উইকেটে ২৪০ রান। জবাবে বাংলাদেশ ৫ বল হাতে রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছায় ৭ উইকেট হারিয়ে। অনুমিতভাবে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পান সাকিব আল হাসান। জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা ভালোই ছিল। ধীরে সুস্থে এগুচ্ছিলেন তামিম ও লিটন। তবে পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে বিদায় নেন অধিনায়ক তামিম। অষ্টম ওভারে টেন্ডাই চাতারাকে টানা তিন বলে ফ্লিক করে তিনটি চার মারেন লিটন। তার জায়গায় বোলিংয়ে এসে দশম ওভারে তামিমকে থামান লুক জঙ্গুয়ে। পয়েন্টে ডাইভ দিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়কের ক্যাচ মুঠোয় জমান রাজা। ভাঙে ৩৯ রানের জুটি। ৩৪ বলে চারটি চারে ২০ রান করেন তামিম। রান আউটের হাত থেকে বেঁচে গিয়েও লাভ হয়নি লিটনের। টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। রিচার্ড এনগারাভাকে পুল করে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় ক্যাচ দিয়ে ফিরেন এই ওপেনার। চারটি চারে ৩৩ বলে ২১ রান করেন লিটন। থিতু হয়েও দুই ওপেনার পারেনি ইনিংস বড় করতে। ৪৬ রানে দুই উইকেট নেই তখন বাংলাদেশের। এমন পরিস্থিতিতে কিছুক্ষণ পর বিদায় নেন মোহাম্মদ মিঠুনও বাজে এক আলগা শটে। অফ স্টাম্পের বাইরে লুক জঙ্গুয়ের গুড লেংথ বলে ছিল না তেমন কোনো বিপদ। আয়েশী শটে বিপদ নিজেই ডেকে আনেন মিঠুন। কাভার থেকে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ মুঠোয় জমালেন ওয়েসলি মাধেভেরে।
১৪ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ৩ উইকেটে ৫০। ক্রিজে সাকিব আল হাসানের সঙ্গী তখন মোসাদ্দেক হোসেন। ১১ রানে ৩ উইকেট হারানো সফরকারীদের কক্ষপথে ফেরানোর গুরু দায়িত্ব তাদের কাঁধে। কিন্তু পারেননি মোসাদ্দেক হোসেন। হন রান আউট। রিচার্ড এনগারাভার বল লেগে খেলতে চেয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। ঠিক মতো পারেননি, লেগের দিকে সরে গিয়ে বল ধরতে পারেননি কিপার রেজিস চাকাভা। সুযোগ কাজে লাগাতে রানের জন্য ছুটেন মোসাদ্দেক, সাড়া দেন সাকিবও। চাকাভা বল ধরে থ্রো করে যখন বেলস তখনও পৌঁছাতে পারেননি মোসাদ্দেক। ৭৪ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আগের ম্যাচেও ৭৪ রানেই চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হয়েছিলেন মোসাদ্দেক। ৯ বলে ৫ রান করেন তিনি।
পঞ্চম উইকেটে সাকিবের সাথে হাল ধরেন মাহমুদউল্লাহ। অনেকটা জমেও গিয়েছিল এই জুটি। এমন সময়ে কট বিহাইন্ড হয়ে ফিরে যান মাহমুদউল্লাহ। পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটি ভাঙতে বোলিং আক্রমণের সেরা অস্ত্র ব্লেসিং মুজারাবানিকে ফেরান টেইলর। অধিনায়ককে হতাশ করেননি পেসার। তার বাড়তি লাফানো বলে কাট করার চেষ্টায় কিপার রেজিস চাকাভাকে সহজ ক্যাচ দেন মাহমুদউল্লাহ, ভাঙে ৫৫ রানের জুটি। ৩৫ বলে তিন চারে ২৬ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। মাহমুদউল্লাহর বিদায়ের পর ফিফটির দেখা পান সাকিব। সিকান্দার রাজাকে কাভার দিয়ে চার মেরে ৫৯ বলে পঞ্চাশে পৌঁছান সাকিব। ফিফটির পথে মেরেছেন ছয়টি চার। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে সাকিবের এটি ৪৯তম ফিফটি। সাকিবের সঙ্গী তখন মেহেদী হাসান মিরাজ। টিকতে পারেননি তিনি। ঝুঁকি নিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মাশুল দিলেন নিজের উইকেট বিলিয়ে। ওয়েসলি মাধেভেরের অফ স্পিন স্লগ সুইপ করে ছক্কায় ওড়াতে চেয়েছিলেন মিরাজ। টাইমিং করতে পারেননি। খুঁজে পান লেগে সীমানায় থাকা একমাত্র ফিল্ডার ডিওন মায়ার্সকে। তিনি কিছুটা এগিয়ে এসে মুঠোয় জমান ক্যাচ। ১৫ বলে ৬ রান করেন মিরাজ।
আগের ম্যাচে দারুণ ব্যাট করা আফিফ তখন নতুন সঙ্গী সাকিবের। এই জুটিতেই ভালো কিছু করার ছিল। ভালো খেলতে খেলতে হঠাতই যেন মেজাজ বিগড়ে গেল আফিফের। রাজার বলে অনেকটা এগিয়ে গিয়ে কাট করতে চাইলেন। ব্যাটে বলে হলো না। অবধারিতভাবে হলেন স্টাম্পিং। ১৭৩ রানে নেই তখন ৭ উইকেটি। ২৩ বলে আফিফ করেন ১৫ রান। এক প্রান্ত আগলে রাখা সাকিবের সঙ্গে তখন অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিন। এই জুটিই শেষ পযন্ত বিশ্বস্ততার পরিচয় দিযেছে। সাইফ ছিলেন খুবই রক্ষণাত্মক। কোন ঝুকিতে যান নি। বরং সাকিবই দুইবার জীবন পান। ক্যাচ ফসকে যায় প্রতিপক্ষের হাত থেকে। শেষ অবধি ৬৪ বলে ৬৯ রানের জুটি বাংলাদেশকে পাইয়ে দেয় দারুণ এক জয়। ১০৯ বলে ৯৬ রানে অপরাজিত থাকেন সাকিব আল হাসান। তার ইনিংসে ছিল ৮টি চারের মার। ৩৪ বলে ২৮ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন সাইফউদ্দিন। তিনি হাকান মাত্র একটি চার।
এদিন টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেটে ২৪০ রান করে জিম্বাবুয়ে। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৬ রানা করেন মাধেভেরে। টেইলর ৪৬, মায়ার্স ৩৪, সিকান্দার রাজা ৩০, চাকাভা ২৬ রান করেন। বল হাতে বাংলাদেশের হয়ে আলো ছড়ান তরুণ পেসার শরিফুল ইসলাম। ১০ ওভারে ৪৬ রানে চারটি উইকেট নেন তিনি। ক্যারিয়ার সেরা বোলিং এটি তার। সাকিব নেন দুই উইকেট। মিরাজ, সাইফউদ্দিন ও তাসকিন নেন একটি করে উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর : জিম্বাবুয়ে ২৪০/৯, বাংলাদেশ ২৪২/৭। ম্যান অব দ্যা ম্যাচ : সাকিব আল হাসান