সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:২৭ অপরাহ্ন

শিল্প-কারখানা খোলার খবরে ট্রাকে ঢাকায় ছুটছে মানুষ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ৩১ জুলাই, ২০২১

কলকারখানা খোলার সংবাদে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন হাজার হাজার মানুষ। তাদের বেশিরভাগই ঢাকা ও আশেপাশের জেলাগুলোর বিভিন্ন তৈরি পোশাক কারখানার কর্মী। বাংলাদেশে বর্তমানে ৫ অগাস্ট পর্যন্ত কঠোর লকডাউন রয়েছে। এরই মধ্যে ১ অগাস্ট থেকে রফতানিমুখী শিল্প কারখানা খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যদিও সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। ফলে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় কর্মস্থলে ফিরতে গিয়ে বিপদে পড়েছেন হাজার হাজার কর্মী। গতকাল শনিবার মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া এবং মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাটে হাজার হাজার মানুষকে পার হতে দেখা গেছে। যানবাহন পরিবর্তন করে, পণ্যবাহী যানের ছাদে করে বা হেঁটে তাদের ঢাকার পথে রওনা দিতে দেখা গেছে। নূপুর আক্তার নামের একজন নারী জানিয়েছেন, তিনি বরিশাল থেকে রওনা দিয়েছেন, যাবেন গাজীপুরের মাওনা। ‘আগে শুনছিলাম পাঁচ তারিখ পর্যন্ত গার্মেন্টস বন্ধ থাকবে। কালকে ঘোষণা দিছে, রোববার থেকেই নাকি মিলকারখানা খুলবে। আমাগো মোবাইলে ম্যাসেজও পাঠাইছে যেন কালকে অফিসে হাজির থাকি। এখন কি করবো? প্যাটের দায়ে চাকরি বাঁচাতে হলে তো আমাগো আসতেই হইবো।’ তিনি বলছিলেন। গাজীপুরের একটি সোয়েটার ফ্যাক্টরিতে অপারেটর হিসাবে চাকরি করেন নূপুর আক্তার। নূপুর জানান, অটোরিকশা, সিএনজিতে করে কয়েকবার যানবাহন পরিবর্তন করে, কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে তিনি মাওয়া পর্যন্ত এসেছেন। তাকে যেতে হবে গাজীপুরের মাওনা পর্যন্ত। ‘সঙ্গে ব্যাগ বোচকা আছে, বাচ্চাকাচ্চা আছে। কিভাবে যাবো জানি না, কিন্তু যেতে তো হবে। নাইলে চাকরি থাকবে না,’ তিনি বলছেন। তিনি দাবি করেন, সরকারের উচিৎ ছিল মিল-কারখানা খুলে দিলে যানবাহনও চালু করে দেয়া। তারই সাথে একত্রে ফেরি পার হয়েছেন মাদারীপুর থেকে আসা নাজমা আক্তার। তিনিও গাজীপুরে যাবেন। ‘গার্মেন্টস তো খুলে দিছে, আমাগো যাইতে হইবো, যেভাবেই হোক। অনেক কষ্ট করে এই পর্যন্ত আসছি। আশি টাকার ভাড়া আড়াইশো টাকা নিছে। যেভাবেই হোক কষ্টমষ্ট করে যাইতে হইবো।’ ঈদের আগের দিন কারখানা বন্ধ করে দেয়ার পর তিনি গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন। তিনি জানান, তাদের সাথে আরো অনেকে একইভাবে ঢাকা, গাজীপুর বা নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন। একই চিত্র দেখা গেছে পাটুরিয়া থেকে ঢাকামুখী সড়কেও। গাবতলীতে একজন গার্মেন্টস কর্মীর সাথে কথা হয়েছে বিবিসির নাগিব বাহারের। তিনি বলেন, ‘রাজবাড়ী থেকে অনেক কষ্ট করে ভাইঙ্গা ভাইঙ্গা আমিনবাজার পর্যন্ত আসছি। মোবাইলে ম্যাসেজ আসছে যে এক তারিখ কারখানায় হাজির হতে হবে।’
তিনি জানান, বাড়ি থেকে অটোরিক্সায় করে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট পর্যন্ত এসেছেন। সেখান থেকে ফেরি পার হয়ে সিএনজিতে করে এসেছে মানিকগঞ্জ। আরেকটি সিএনজিতে নবীনগর পর্যন্ত এসেছেন। সেখান থেকে রিক্সায় করে এসেছেন আমিনবাজার। এরপর হেঁটে হেঁটে যাচ্ছেন। এই পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে ১২০০ টাকা। আমিনবাজারে রাস্তার পাশে ছোট শিশুকে নিয়ে বসেছিলেন কুমিল্লার চাঁদপুর থেকে আসা আরেকজন নারী। তিনি নাম বলতে চাননি। তিনি বলছেন, নানারকম বাহন ব্যবহার করে, কিছুটা হেঁটে হেঁটে চাঁদপুর থেকে এই পর্যন্ত এসেছেন। কারণ কালকে অফিস (গার্মেন্টস) খুলে যাবে। তাই বাধ্য হয়ে আসতে হয়েছে। না হলে ৫ অগাস্ট গাড়ি চালু হলে আসতেন। এভাবে এই পথে অসংখ্য মানুষ হেঁটে হেঁটে ঢাকা শহরে ঢুকতে দেখেছেন বিবিসির সংবাদদাতা। মুন্সীগঞ্জের স্থানীয় সাংবাদিক মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল জানাচ্ছেন, প্রতিটি ফেরিতেই উপচে পড়া মানুষ রয়েছে। কাভার্ড ভ্যান, ট্রাকের খোলা ছাদ, অটো রিক্সা- যে বাহন তারা পাচ্ছেন, তাতে করেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছেন। এসব এলাকায় প্রশাসনকে তেমন একটা কড়াকড়ি ভূমিকা নিতে দেখা যাচ্ছে না বলে তিনি জানিয়েছেন।
সূত্র : বিবিসি




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com