স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে, কিন্তু হাসপাতালের বেড খালি নেই। এটি দূর করা যায়নি। এছাড়া রয়েছে আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) সংকট। তবে তিনি এও বলেন, সময় এসেছে করোনাভাইরাসের রোগী কমানোর। গতকাল শনিবার (৭ আগস্ট) বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ফিল্ড হাসপাতালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ঢাকায় করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ছয় হাজার শয্যা রয়েছে। তার মধ্যে এখন এক হাজার শয্যাও খালি নেই। এই পর্যায়ে আমরা আছি। তিনি বলেন, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার আইসিইউ রয়েছে। তারপরও আমরা আইসিইউ সংকট দূর করতে পারিনি। করোনা রোগীদের পাশাপাশি নন-কোভিড রোগীই ৮০ শতাংশ। তাদের চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হচ্ছে আবার ডেঙ্গু এসেছে ঘাড়ে ওঠেছে- বলেন জাহিদ মালেক। শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব ফিল্ড হাসপাতালের বিষয়ে তিনি বলেন, নতুন রোগী এবং মুমূর্ষু রোগী এখানে আসবেন। আমরা তাদের চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করবো। ২০ দিন আগে আমরা কনভেনশন সেন্টারটি দেখতে এসেছিলাম জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ঢাকা শহরের বিভিন্ন হাসপাতালের শয্যাগুলো আস্তে আস্তে শেষ হয়ে আসছে, আমরা অনুভব করছিলাম। যে কারণে এই কনভেনশন সেন্টারকে ফিল্ড হাসপাতালে রূপান্তরিত করার ব্যবস্থা নিলাম। তিনি বলেন, উত্তর সিটি করপোরেশনে আমরা ২৪ দিনে একটি হাসপাতাল করেছিলাম। সেটিও এক হাজার শয্যার ছিল। এই হাসপাতালটিও এক হাজার শয্যায় উন্নীত করা হবে। ২০ দিনে আমরা ৪শ’ শয্যা প্রস্তুত করেছি। এর মধ্যে আইসিইউ শয্যা আছে ৪০টি। বাকি শয্যাগুলো সেন্ট্রাল অক্সিজেনের আওতায় রয়েছে। এখানে দশ হাজার লিটার লিকুইড অক্সিজেন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ট্যাঙ্ক বসানো হয়েছে। টেস্ট করার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে ছোট ল্যাবের।
করোনায় নারীদের আক্রান্তের হার বেড়ে যাওয়া নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। জানান, ‘আগে মহিলাদের মৃত্যু-আক্রান্ত ছিল প্রায় ২০-২৫ ভাগ। এটা এখন প্রায় ৪৫ শতাংশ। এই আক্রান্ত-মৃত্যুর সংখ্যা কেন বাড়ছে, এটা খেয়াল করতে হবে।’ রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি হাসপাতালের ওপর কেমন চাপ- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘গত দুই মাসের তুলনায় রোগী বেড়েছে সাত গুণ। আমরা টিকার কাজ করছি, ডাক্তাররাও কাজ করছে। এছাড়া ফিল্ড হাসপাতাল, বেড আমরা বাড়িয়ে চলছি। কিন্তু এটারও তো একটা সীমা আছে। কতটুকু আর করা যেতে পারে?’ তিনি বলেন, ভাইয়েরা হাসপাতালের বেড বাড়ানো নয়, এখন সময় এসেছে করোনা রোগী কমানোর।
এদিকে দেশে করোনার ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমণ বেড়েই চলছে। চিকিৎসার আশায় ঢাকায় এসেও সেবা মিলছে না অনেকের। দেশে করোনার ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমণ বেড়েই চলছে। চিকিৎসার আশায় ঢাকায় এসেও সেবা মিলছে না অনেকের। গত একদিনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরও ২৪৮ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। তাদের নিয়ে দেশে করোনায় এখন পর্যন্ত মোট ২২ হাজার ১৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে গত ২ আগস্ট ২১ হাজার এবং গত ২৮ জুলাই মৃত্যু ২০ হাজার ছাড়ায়। সে হিসেবে সবশেষ চার দিনে এক হাজার মৃত্যু হলো। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১২ হাজার ৬০৬ জন। তাদের নিয়ে দেশে সরকারি হিসাবে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হলেন ১৩ লাখ ৩৫ হাজার ২৬০ জন। গত শুক্রবার (৬ আগস্ট) স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এদিন ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছেন ১৫ হাজার ৪৯৪ জন। তাদের নিয়ে দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হলেন ১১ লাখ ৭২ হাজার ৪৩৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার নমুনা সংগৃহীত হয়েছে ৪৮ হাজার ৮০৭টি, আর পরীক্ষা হয়েছে ৪৮ হাজার ১৫টি। দেশে এখন পর্যন্ত করোনার মোট নমুনা পরীক্ষা হলো ৮০ লাখ ৪৩ হাজার ৬৯৩টি। এরমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা হয়েছে ৫৯ লাখ ৩২ হাজার ৩২২টি আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ২১ লাখ ১১ হাজার ৩৭১টি। গত একদিনে করোনা রোগী শনাক্তের হার ২৬ দশমিক ২৫ শতাংশ আর এখন পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৬০ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৭ দশমিক ৮১ শতাংশ আর মৃত্যুর হার এক দশমিক ৬৬ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ২৪৮ জনের মধ্যে পুরুষ ১৩৮ জন আর নারী ১১০ জন। এদের নিয়ে দেশে করোনায় এখন পর্যন্ত সরকারি হিসাবে পুরুষ মারা গেলেন ১৪ হাজার ৮২২ জন আর নারী সাত হাজার ৩২৮ জন। ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ২৪৮ জনের মধ্যে ৯১ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে রয়েছেন দুই জন, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ১৫ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৩৯ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৭২ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৬২ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৩২ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১৯ জন আর ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে রয়েছেন সাত জন। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, এদের মধ্যে আছেন ঢাকা বিভাগের ৬৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ৭৫ জন, রাজশাহী বিভাগের ১৬ জন, খুলনা বিভাগের ৩৬ জন, বরিশাল বিভাগের ২০ জন, সিলেট বিভাগের ১৬ জন, রংপুর আর ময়মনসিংহ বিভাগের আট জন করে। ২৪৮ জনের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন ২০৯ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ৩৩ জন আর বাড়িতে ছয় জন।