মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

করোনার প্রভাবে দিনাজপুরে নার্সারি ব্যবসায় ধস

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ৯ আগস্ট, ২০২১

করোনা মহামারীর প্রভাবে দিনাজপুরে নার্সারি ব্যবসায়ও ধস নেমেছে। ক্রেতার অভাবে নার্সারিতে পড়ে আছে লাখ লাখ চারাগাছ। চলতি বছর বৃক্ষমেলা না হওয়ায় বিক্রি হয়নি উৎপাদিত চারা। করোনা সংক্রমণের কারণে ক্রেতারাও যাচ্ছেন না গাছের চারা কিনতে। ফলে বিভিন্ন জাতের লাখ লাখ চারা নষ্ট হচ্ছে নার্সারিতেই। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন জেলার নার্সারি মালিকরা।
কয়েক দিনে দিনাজপুরের বিভিন্ন নার্সারি ঘুরে এমন দৃশ্যের দেখা মিলেছে। নার্সারি মালিকরা জানান, বছরে চারা বিক্রির দুটি মৌসুম। নভেম্বর-জানুয়ারি শীত মৌসুম ফুলের আর জুন-আগস্ট পর্যন্ত ফলের মৌসুম। ফলের মৌসুমেই সাধারণত বিক্রির পরিমাণ বেশি তাদের। করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের কারণে দেশে চলছে দফায় দফায় কঠোর লকডাউনসহ নানা বিধিনিষেধ। ফলে বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না মানুষ। এর প্রভাব পড়েছে বেচাকেনায়। চলতি মৌসুমে গাছের চারা বিক্রি নেমে এসেছে অর্ধেকের নিচে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে বৃক্ষমেলার আয়োজন হয়। মেলায় বেশির ভাগ গাছ বিক্রি হয় তাদের। এ সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাগানমালিকরা উৎসবমুখর পরিবেশে আগ্রহ নিয়ে গাছ কেনেন। করোনা পরিস্থিতিতে গত বছর মেলার আয়োজন হয়নি। এবারো বৃক্ষমেলার আয়োজন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দিনাজপুরে মোট নার্সারি ২০২টি। এর মধ্যে কৃষি বিভাগের অধীন সরকারি নার্সারি ১৩টি, বাকিগুলো ব্যক্তিমালিকানাধীন। এসব নার্সারিতে ফুল-ফল-বনজ ওষধি মিলে ৩০ লক্ষাধিক চারাগাছ রয়েছে। যদিও কয়েক বছর আগেও জেলায় ৪২৭টি ব্যক্তিমালিকানাধীন নার্সারি ছিল। অন্যদিকে দিনাজপুর বন বিভাগ অফিস সূত্র জানায়, বন বিভাগের নিজস্ব নার্সারি রয়েছে ১৫টি। যেখানে তিন লাখেরও অধিক চারাগাছ রয়েছে।
সদর উপজেলার নয়নপুর এলাকায় একতা নার্সারিতে গিয়ে দেখা যায়, নানা জাতের ফুল, ফল ও বনজ গাছের সমাহার। এ নার্সারির কয়েকটি করমচা, আম, পেয়ারা, মাল্টা ও কমলার চারাগাছে ফল ধরেছে। কয়েকজন শ্রমিক মেহগনি গাছের চারা তুলে গোড়ায় নতুন মাটি লাগিয়ে সুতলি দিয়ে বাঁধছেন। দুপুরের পরে ভ্যানে করে বিভিন্ন গ্রামে নিয়ে বিক্রি করা হবে মেহগনির চারাগুলো।
নার্সারি মালিক মো. হান্নান জানান, সাধারণত বর্ষাকালের এ সময় ফলজ ও বনজ বৃক্ষরোপণের সবচেয়ে ভালো সময়। নার্সারিতে ক্রেতা কম আসায় আমাদের ফেরি করে চারা বিক্রি করতে হচ্ছে। মাঝেমধ্যে দু-একজন ক্রেতা চারা কিনছেন।
তিনি আরো জানান, গত বছর বৃক্ষমেলার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম, মেলা হয়নি। এবারো মেলা হবে না। অনেক চারাগাছে ফল ধরেছে। অন্যান্য বছরে যেখানে ১০ লাখ টাকার অধিক গাছ বিক্রি করতাম, সেখানে করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে দুই বছর থেকে অর্ধেকও বিক্রি হচ্ছে না। ফলে কর্মচারীদের বেতন দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
দিনাজপুর জেলা কৃসি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জাতীয় বৃক্ষমেলার অংশ হিসেবে সর্বশেষ গোড় এ শহীদ ময়দানে বৃক্ষমেলা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের জুনে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বন বিভাগের আয়োজনে সেবার মেলায় সরকারি-বেসরকারিসহ ৪৫টি নার্সারি অংশ নিয়েছিল। সপ্তাহব্যাপী আয়োজন থাকলেও সেবার নার্সারি মালিকদের অনুরোধে মেলা চলে ১১ দিন। জেলা বন বিভাগ জানায়, ২০১৯ সালের মেলায় সাড়ে তিন লক্ষাধিক চারা বিক্রি হয়েছিল। যার আনুমানিক মূল্য অর্ধ কোটি টাকা।
সদর উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা সাদিকুর রহমান বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে নার্সারি ব্যবসায়ীদের বিক্রি কমেছে এ কথা সত্য। দৈনন্দিন অল্পসংখ্যক গাছের চারা বিক্রি হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। বৃক্ষমেলা না হওয়ায় চারা বিক্রি করতে পারছেন না বেশির ভাগ নার্সারি মালিক। বৃক্ষমেলা আয়োজনের মধ্য দিয়ে সব প্রজন্মের মধ্যে গাছ লাগানোর উৎসাহ দেয়ার কাজটি আমরা করি। যেহেতু মেলার আয়োজন হচ্ছে না, তাই নার্সারি মালিকদের অনেকেই বিভিন্ন হাটবাজারে ভ্যানে করে চারা বিক্রি করছেন। বন বিভাগও চারা বিক্রি ও রোপণের কাজ অব্যাহত রেখেছে। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেই মেলার আয়োজন করা হবে এমনটিই জানান এ বন কর্মকর্তা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক প্রদীপ কুমার গুহ বলেন, দিনাজপুর এমনিতেই একটি শস্য ও ফলজ সমৃদ্ধ জেলা। প্রতি বছর বৃক্ষমেলায় সাধারণ ক্রেতার পাশাপাশি পুরনো ও নতুন বাগানমালিকরা আসেন বাজারে নতুন জাত সম্পর্কে জানার জন্য। এতে ক্রেতারা যেমন আগ্রহী হয়ে ওঠেন নতুন বাগান তৈরিতে, বিক্রেতারা লাভবান হন চারা বিক্রি করে। বৃক্ষমেলা না হলে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে এ সেতুবন্ধন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। বেসরকারি নার্সারি মালিকদের বিষয়ে তিনি বলেন, করোনা মহামারীতে অনেক নার্সারি মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। যারা অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের বিশেষ কোনো প্রণোদনার আওতায় আনা যায় কিনা সে বিষয়ে এরই মধ্যে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com