জেলার উপজেলা সদরে মাল্টা চাষ করে সফলতা পেয়েছেন মনিরুল ইসলাম নামের এক স্কুল শিক্ষক। ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের চর রমেশ গ্রামে ২ একর ১০ শতাংশ জমিতে নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন মাল্টা বাগান। করোনা মহামারীতে গত দেড় বছরে স্কুল বন্ধ থাকায় মাল্টা চাষে নিরলস পরিশ্রমে এবার ব্যাপক ফলন এসেছে তার সবুজ বাগানে। ব্যাপরীরা এখান থেকেই মাল্টা কিনে নিয়ে যান। বাঢ়ি-১ দেশিয় জাতের এ মাল্টা বিদেশি মাল্টার চেয়ে অধিক মিষ্টি হওয়ায় এর চাহিদা অনেক বেশি। এছাড়াও মাল্টা চাষের পাশাপাশি তিনি একই স্থানে মোট ৬ একর জমিতে সবজি চাষ, মাছ, মুরগী ও গরু পালন করে আসছেন। এ জমির মধ্যে ৪ একর নিজের বাকিটা লিজ নিয়েছেন তিনি।
বাসস’র সাথে আলাপকালে মনিরুল ইসলাম জানান, ২০১৭ সালে পরীক্ষামূলকভাবে তিনি মাল্টা চাষ শুরু করেন। তখন স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে তাকে ১১০ টি গাছ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। মোট ৮’শ মাল্টা গাছ থেকে ২০১৯ সাল থেকেই তিনি বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা বিক্রি করে আসছেন। গাছ যত বড় হয় এবং বয়স বাড়ে মাল্টার ফলন তত বৃদ্ধি পায়। এবার ব্যাপক ফলন এসেছে। আশা করছেন ৩ হাজার কেজির চেয়ে অধিক ফলন হবে।
তিনি বলেন, একটি গাছে ১০ কেজি থেকে সর্বচ্চ ২০ কেজি পর্যন্ত মাল্টা হয়। সাধারণত ৭ থেকে ৮টিতে এক কেজি হয়। এ জাতটি পাকলেও এর রং বদলায়না সবুজ থাকে। ফেব্রুয়ারি মাসে গাছে ফুল আসে আর সেপ্টেম্বরের দিকে ফল ঘরে তোলা হয়। গত বছর ১৪০ টাকা কেজিতে মাল্টা বিক্রি হয়েছিলো। আশা করছেন এবারোও ভালো দাম পাবেন।
ভেদুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম এ ব্যাপারে বলেন, মনির একজন সফল উদ্যোক্তা। তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি বিকল্প কর্মসংস্থানের মাধ্যমে নিজের কর্ম দক্ষতা প্রমাণ করেছেন। এ অঞ্চলে মাল্টা চাষ একটি ভিন্ন ধারণা। মনির তা করে দেখিয়েছেন। আমি নিজে সেই মাল্টা খেয়েছি। যা অত্যন্ত মজাদার। তার এ উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। যদি তার কোন সহযোগিতা প্রয়োজন হয় তবে ইউনিয়ন পরিষদ সচেষ্ট থাকবে বলে জানান তিনি।
উত্তর চর ভেদুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মনির আরো জানান, তার এখানে মাল্টার পাশাপাশি আড়াই একর জমিতে পুকুর করে তেলাপিয়া, পাঙ্গাসসহ বিভিন্ন কার্প জাতীয় মাছের চাষ করেন। ৩টি সেডে রয়েছে ৩ হাজার সোনালী মুরগী। সবজি বাগানসহ আরো রয়েছে ৮টি গরু। এর মধ্যে ৪টি দুধের ও ৪টি মোটাতাজাকরণ হচ্ছে। এ খামার পরিচালনার জন্য মাসিক বেতনে ৩ জন কর্মচারী কাজ করছে এখানে। এছাড়াও মৌসুমী শ্রমিক রাখা হয় অনান্য সময়ে।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: রিয়াজ উদ্দিন বাসস’কে বলেন, সদর উপজেলায় কৃষি অফিসের উদ্যোগে ২০১৭ সালে বাংলাশে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট’র আবিস্কৃত বাঢ়ি মাল্টা-১ জাতের চাষ করা হয়।। পুষ্টিগুণে ভরপপুর মাল্টা চাষে অনেকেই পেয়েছেন সফলতা। এ জাতটা আকারে বড় এবং মিষ্টি বেশি। বর্তমান সময়ে অনেকেই মাল্টা চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু মোঃ এনায়েত উল্লাহ জানান, মাল্টা চাষের জন্য কৃষক ও উদ্যোগতাদের বিভিন্ন ধরণের সহযোিগতা ও উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন তারা। কৃষকদের বিনামূল্যে মাল্টার চারা, সার দেওয়া হচ্ছে। জেলার সাত উপজেলায় এ বছর ৩০ হেক্টর জমিতে মাল্টার চাষ হয়েছে। প্রতি বছরই জেলায় মাল্টা চাষ সম্প্রসারণ হচ্ছে। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা সব ধরনের পরামর্শ সেবা দিয়ে আসছে কৃষকদের।