পাঁচ বার ব্যর্থ হওয়ার পর সফল হলেন ‘রাখাল বালক’। ষষ্ঠবারের চেষ্টায় জাম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় পেলেন। তাও প্রায় ১০ লাখের বেশি ভোটে পরাজিত করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বীকে। বলছিলাম জাম্বিয়ার ধনকুবের হাকাইন্দে হিচিলমার কথা। কিন্তু কে এই হাকাইন্দে হিচিলমা? পাঁচ বার ব্যর্থ হওয়ার পর কীভাবে সফলতার দেখা পেলেন তিনি তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি। ৫৯ বছর বয়সী হাকাইন্দে হিচিলমা নিজেকে এক সাধারণ ‘রাখাল বালক’ হিসেবে পরিচয় দিতেন। জাম্বিয়ার অন্যতম শীর্ষ ধনী হওয়ার আগে তিনি কিশোর বয়সে পরিবারে গৃহপালিত পশু পালন করেছেন।
ইউনাইটেড পার্টি ফর ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএনএনডি)-এর নেতা এবং জাম্বিয়ার নির্বাচিত এ প্রেসিডেন্ট যিনি ‘এইচএইচ’ নামে বেশি পরিচিত। ইউনিভার্সিটি অব জাম্বিয়ায় পড়ার জন্য স্কলারশিপ পান হাকাইন্দে। এরপর যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহাম থেকে স্নাতক এবং এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। এরপর তিনি অর্জন করেন অঢেল সম্পদ। এ দুই দিকই ভোটারদের সামনে উপস্থাপন করেন হাকাইন্দে। সদ্য নির্বাচিত এ ধনকুবের ভোটারদের বলেন, উচ্চ বেকারত্ব রয়েছে এমন দেশে জনগণের তার মতো একজন সফল ব্যবসায়ী নেতা দরকার যিনি কীভাবে অর্থনীতি সচল করা যায় তা সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন।
একই সঙ্গে হাকাইন্দে কৃষকদেরও মন জয় করার চেষ্টা চালিয়েছেন। তিনি তাদের বলেছেন, তিনি অত্র অঞ্চলের খাদ্যের ঝুড়ি বানাতে চান জাম্বিয়াকে। এগুলোকে ছাড়িয়ে হাকাইন্দের সাফল্যের সবচেয়ে বড় কারণ বলে ভাবা হচ্ছে তরুণ ভোটারদের সঙ্গে তার বোঝাপড়া। জাম্বিয়ার ৭ মিলিয়ন ভোটারের মধ্যে ৩৫ বছর বয়সী ভোটারের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক। যার পাঁচ ভাগের এক ভাগ বেকার। ২০১১ সালে প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্ট (পিএফ) ক্ষমতায় আসে ‘কর কমানো, মানুষের আয় বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান বাড়ানোর’ প্রতিশ্রুতি দিয়ে। কিন্তু তারা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে না পারায় তরুণরা ঝুঁকেছে হাকাইন্দের দিকে। তরুণদের সঙ্গে এ ধনকুবের যোগাযোগ বাড়িয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে। যদিও ফেসবুক এবং টুইটার ব্যবহার করে তরুণদের কাছে যাওয়ার চেষ্টা এর আগেও তিনি করেছিলেন।
হাকাইন্দে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে অত্যন্ত সহনশীলতা দেখিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পাঁচ বার পরাজিত হয়েছেন তিনি। ভোটারদের তিনি বারবার মনে করিয়ে দিয়েছেন রাজনীতি করতে গিয়ে ১৫ বার জেল খাটতে হয়েছে তাকে। জাম্বিয়ায় বেকার সমস্যা এবং জীনযাত্রার খরচ বাড়ছে প্রতিনিয়ত। দেশটির বৈদেশিক ঋণ রয়েছে ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চেয়ে বেশি। ক্রেডিট রেটিংস ফার্ম এস অ্যান্ড পি গ্লোবালের তথ্যমতে, জাম্বিয়াকে বছরে দেশটির রাজস্বের ৩০ শতাংশ সুদ পরিশোধ করতে হয়। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর নির্বাচিত হওয়ার আনন্দ ভুলে তাই দ্রুতই ধনকুবের হাকাইন্দেকে জাম্বিয়ার অসংখ্য সমস্যা দূর করতে কাজ শুরু করতে হবে। যদি তিনি দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম না হন তবে তার জনপ্রিয়তায়ও ভাটা পড়বে সেটি নিশ্চিত।