রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৪ পূর্বাহ্ন

দেশে সচল ৫৩ ফেরির ২৬টিই মেয়াদোত্তীর্ণ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২১

গত ২৩ জুলাই পদ্মা সেতুর পিলারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ক্ষতিগ্রস্ত হয় রো রো ফেরি (বড় ফেরি) শাহজালাল। এ ঘটনায় সেতুর পিলার অক্ষত থাকলেও ফেরির ভেতরের মালামাল নষ্ট হয়। গুরুতর আহত হন ২০ জন যাত্রী। পরে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিটিসি) তদন্তে দেখা যায়, ফেরিটি ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ। সর্বশেষ গত শুক্রবার পদ্মা সেতুর পিলারে ধাক্কা লেগে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কাকলী নামে ছোট আরেকটি ফেরি। অনুসন্ধানে জানা গিয়েছে, এ ফেরিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে অনেক আগেই। শুধু রো রো শাহজালাল বা কাকলী নয়, দেশে বিআইডব্লিউটিসির সচল ফেরিগুলোর প্রায় অর্ধেকই এখন মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে। আইনে নিষিদ্ধ হলেও মেয়াদোত্তীর্ণ এসব নৌযান দিয়েই চলছে সংস্থাটির ফেরি পারাপার কার্যক্রম। বিআইডব্লিউটিসির কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ছয়টি রুটে মোট ৫৩টি ফেরি চলাচল করছে। এর মধ্যে ২৬টিই এখন মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে। সর্বশেষ গতকাল এসব রুটে মোট ৪৮টি ফেরি চলাচল করেছে। বাকি পাঁচটি মেরামতের জন্য ডকইয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। দেশে প্রতিটি ফেরি চলাচলের জন্য আইনে অনুমোদিত মেয়াদ ৩০ বছর। নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর (ডিওএস) থেকেও ফেরিগুলো এ মেয়াদে চলাচলের শর্তেই অনুমোদন দেয়া হয়। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন আইন ১৯৭৬ অনুযায়ী নির্ধারিত এ মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সংস্কার সাপেক্ষে দুই মেয়াদে (পাঁচ বছর করে) আরো ১০ বছর পর্যন্ত ফেরির নিবন্ধন বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। তবে বর্ধিত এ মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ফেরিটি আর কোনোভাবেই চালানো যাবে না বলে আইনে উল্লেখ রয়েছে।
এ বিষয়ে আইনে বলা হয়েছে, মেয়াদোত্তীর্ণ ফেরি চালানো দ-নীয় অপরাধ। অভ্যন্তরীণ নৌযানের মাস্টার মেয়াদোত্তীর্ণ ফেরি চালালে তাকে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা দুই বছর পর্যন্ত কারাদ- অথবা উভয় দ-ে দ-িত করা হবে।
তার পরও আইন লঙ্ঘন করেই নৌরুটগুলোয় মেয়াদোত্তীর্ণ ফেরি চলাচল করছে। অনুসন্ধানে জানা গিয়েছে, মেয়াদোত্তীর্ণ ২৬টি ফেরির ২০টিরই বয়স চল্লিশের বেশি। যদিও এসব ফেরি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে ওয়াকেফহাল নন ফেরির মাস্টার বা চালকরা।
মাওয়া ফেরিঘাটের বেশ কয়েকজন মাস্টার জানিয়েছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ ফেরি চালানোর আইনি দিক সম্পর্কে কোনো কিছুই জানা নেই তাদের। এ বিষয়ে নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে এক মাস্টার বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ আমাদের সচল ফেরি দেন। আমরা ফেরি চালাচ্ছি। এর বেশি কিছু আমাদের জানা নেই।’
তবে দীর্ঘদিনের পুরনো ফেরি চালানো নিয়ে মাস্টারদের মধ্যে বেশ ক্ষোভ রয়েছে বলে জানালেন তিনি। পদ্মা সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কার ঘটনায় স¤প্রতি মাস্টারদের অবহেলাকে দায়ী করে একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। এ বিষয়ে ওই ফেরিচালক বলেন, কোনো মাস্টারই ইচ্ছে করে দুর্ঘটনা ঘটান না। অথচ দীর্ঘদিনের পুরনো ফেরি নিয়ে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হলে মাস্টারদেরই দায়ী করা হয়। কিন্তু এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই উদ্যোগ নিলে অযথা মাস্টারদের ঘাড়ে দোষ চাপানোর প্রয়োজন পড়ত না। বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ ফেরি চলাচলের ঝুঁকির ব্যাপারটি অবহিত করে ডিওএস কর্তৃপক্ষকে ধারাবাহিকভাবে চিঠি দেয়া হয়েছে। যদিও অধিদপ্তর থেকে এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে বিআইডব্লিউটিসির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এ সংস্থায় কর্মরত রয়েছি। তখন থেকেই দেখছি মেয়াদোত্তীর্ণ ফেরির ব্যাপারে দুই-তিন মাস পরপর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু আজও কোনো ফল পাওয়া যায়নি।’ এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ বদরুল হাসান লিটন বলেন, আমাদের দেশে বিশেষ বিবেচনায় কিছু মেয়াদোত্তীর্ণ ফেরি চলছে। তবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নিয়ম হলো ৪০ বছরের পর কোনো নৌযানকেই ফিটনেস না দেয়া।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মেয়াদোত্তীর্ণ ফেরিগুলোর মধ্যে বড় ফেরি আটটি। এগুলো হলো আমানত শাহ, এনায়েতপুরী, শাহ আলী, খানজাহান আলী, শাহ পরান, শাহ মখদুম, কেরামত আলী ও শাহজালাল। মধ্যম ও ছোট ফেরিগুলো হলো কুমারী, কাকলী, কপোতী, কস্তরী, করবী, কামিনী, কেতকী, কিশোরী, ঢাকা, কুমিল্লা, ফরিদপুর, কর্ণফুলী, আইটি ৮-৩৯০, আইটি ৮-৩৯১, আইটি ৮-৩৯৪, আইটি ৮-৩৯৫, আইটি ৮-৩৯৬ ও আইটি ৮-৩৯৭। অন্যদিকে মেয়াদ রয়েছে এমন ফেরিগুলোর মধ্যে রো রো বা বড় ফেরি ছয়টি বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর, বীরশ্রেষ্ঠ বরকত, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন ও গোলাম মাওলা। এর মধ্যে জাহাঙ্গীর ও বরকত ফেরি দুটির ৩০ বছর পূর্ণ হতে আর মাত্র এক বছর বাকি রয়েছে। এছাড়া চলতি বছরে বিআইডব্লিউটিসির বহরে চারটি নতুন ফেরি যোগ হয়েছে। এগুলো হলো বেগম রোকেয়া, বেগম সুফিয়া কামাল, কদম ও কঞ্জুলতা।
মেয়াদোত্তীর্ণ ফেরি চালু রাখার কারণ জানতে চাইলে বিআইডব্লিটিসির সহকারী মহাব্যবস্থাপক (মেরিন) একেএম শাহজাহান বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ ফেরি চালানোর বিধান না থাকলেও যাত্রীদের কথা বিবেচনায় রেখে ফেরিগুলো সচল রাখা হয়েছে। হঠাৎ করে এতগুলো ফেরি বন্ধ করে দিলে তখন জনভোগান্তি আরো বাড়বে। ফেরিগুলো ফিটনেস পরীক্ষা করেই সচল রাখা হয়েছে। পাশাপাশি নতুন ফেরিও যুক্ত করা হচ্ছে। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, গত ১২ বছরে আমরা ২৩টি নতুন ফেরি যুক্ত করেছি। ফেরির ফিটনেস পরীক্ষা করে নৌ অধিদপ্তর। তারা যদি মেয়াদোত্তীর্ণ কোনো ফেরির ফিটনেস পরীক্ষার পর চলাচলের উপযুক্ত মনে করে, তাহলে সচল রাখতে পারে। অন্যথায় সচল রাখার সুযোগ নেই।- বণিক বার্তা




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com