ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের করোনা নিয়ে গবেষণা
বর্তমানে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে যে টিকা রয়েছে সেগুলো ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টসহ অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের মারাত্মক সংক্রমণ কমিয়ে দেয়। একই সাথে হাসপাতালে অবস্থানের মেয়াদ এবং মৃত্যু হার কমিয়ে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কনট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলেছে, ‘করোনাভাইরাসের টিকা করোনার মারাত্মক সংক্রমণ এবং মৃত্যু ২৫ শতাংশ কমিয়ে দিতে পারে। তবে বেশির ভাগ পূর্ণ ডোজ টিকা প্রাপ্ত ব্যক্তিকে যদি করোনাভাইরাস সংক্রমিত করে তবে তাদের মধ্যে সামান্য লক্ষণ-উপসর্গ দেখা দিতে পারে। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে কোনো লক্ষণই দেখা যায় না।’
পরামর্শক গ্রুপের অপর সদস্য ড. মার্ক বেগেলিন গার্ডিয়ানকে বলেন, ভাইরাসের ধরন পরিবর্তন হলে বর্তমান টিকায় মারাত্মক সংক্রমণ ও মৃত্যু বন্ধ করতে পারবে না। সে কারণে ভাইরাসের উদীয়মান স্ট্রেইনকে অন্তর্ভুক্ত করে বর্তমান করোনাভাইরাসের টিকাকে আরো কার্যকর করতে হবে। যদি এরই মধ্যে ভাইরাসটির বর্তমান ধরন (ভ্যারিয়েন্ট) জনস্বার্থের প্রতি হুমকি হয়ে দেখা দেয় তাহলে আবারো বিভিন্ন দেশে হয়তো বিধিনিষেধ আরোপ করতে হতে পারে টিকার উন্নত সংস্করণ না আসা পর্যন্ত। তবে বিজ্ঞানীদের সবাই এই মতের সাথে অভিন্নতা পোষণ করেননি।
ভবিষ্যতের রূপান্তরিত করোনাভাইরাস থেকে এখনকার কোনো টিকাই মানুষকে সুরক্ষা দিতে পারবে না। এমন পরিস্থিতি নিশ্চিতভাবেই যে ঘটবে সে ব্যাপারে বিজ্ঞানীদের পরামর্শক গ্রুপ ‘এসএজিই’ তাদের মতামতের বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে। ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের পরামর্শক গ্রুপ এসব তথ্য স¤প্রতি যুক্তরাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, যেহেতু করোনাভাইরাস বিকশিত হয়ে থাকে, সে কারণে ভাইরাসের ‘অ্যান্টিজেনিক ভ্যারিয়েশন’ এক সময় টিকাকে অকার্যকর করে দেয়। এই অ্যান্টিজেনিক ভ্যারিয়েশন অনেক জীবাণুকে এক সময় বিপজ্জনক করে তোলে। তাই টিকার ডিজাইন বার বার পরিবর্তন করতে হয় এবং তা করতে না পারলে জীবাণু নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।
বিজ্ঞানীদের পরামর্শক গ্রুপটি বলেছে, এটা নিশ্চিত যে সার্সকভ-২ (কোভিড-১৯) অনেক বেশি সংক্রামক। ঠিক এ কারণেই এ ভাইরাস থেকে রূপান্তরিত নতুন ধরন সৃষ্টি হয়ে থাকে। বিজ্ঞানীদের এই গ্রুপের সদস্য প্রফেসর গ্রাহাম মেডলি গার্ডিয়ান পত্রিকাকে বলেছেন, সার্সকভ-২’র এই বৈশিষ্ট্যের ব্যাপারে বিজ্ঞানীদের এখনই সাবধান হতে হবে। তা না হলে এক বছর আগে আমরা যে পরিস্থিতিতে পড়েছিলাম ঠিক একই রকম পরিস্থিতির শিকার হতে পারি এক বছর পর। তবে এটা নির্ভর করবে আমাদের মধ্যে বর্তমান ইমিউনিটি (প্রতিরোধ ক্ষমতা) কী প্রভাব রাখতে পারে এর ওপর।
এ ব্যাপারে কানাডার সাসকাচোয়ান ইউনিভার্সিটির ভাইরোলজিস্ট প্রফেসর এঞ্জেলা রাসমুসেন টেলিগ্রাফ পত্রিকাকে বলেন, ‘টিকার সুরক্ষা প্রতিরোধকারী কোনো স্ট্রেইন যে আসবেই এই আশঙ্কা খুবই কম। করোনাভাইরাসটির নতুন নতুন ধরন আসতে হলে বর্তমান ভাইরাসটির স্পাইক প্রোটিনে অনেক রূপান্তরের প্রয়োজন হবে, যা এই ভাইরাসটির পক্ষে আর কখনোই সম্ভব নয়। এটা পরিষ্কার নয় যে, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট টিকার প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ভেঙে ফেলতে পারে অথবা ভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকার কার্যকারিতা হ্রাস পাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, করোনার বর্তমান টিকা করোনাভাইরাসের মারাত্মক সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলছে কিন্তু কোনো কোনো গবেষণায় এটাও প্রমাণিত হয়েছে যে, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে পূর্ণ ডোজ টিকাও কোনো প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারে না। এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলে জনসংখ্যার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অংশকে বুস্টার ডোজ দেয়া হচ্ছে।