রাজধানীর মগবাজার, নিউ ইস্কাটন, বাসাবো ও গোড়ান এলাকায় ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার ঘনত্ব বেশি বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্ততরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিস বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির মৌসুম এডিস জরিপ ২০২১ এ তথ্য উঠে এসেছে। গত রোববার ২২ আগস্ট অনলাইনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জরিপের ফলাফল জানানো হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার ৯৮টি ওয়ার্ডের ১০০টি স্থানে গত ২৯ জুলাই থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত এই জরিপ পরিচালনা করে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪১টি এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৯টি স্থানে পরিচালিত জরিপে এসব এলাকার ৩ হাজার বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, কোনও এলাকায় এডিস মশার ঘনত্ব পরিমাপের একক ব্রুটো ইনডেক্স ২০ এর বেশি হলেই তাকে ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি বলা যায়। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১০টি ওয়ার্ডের ১৯টি এলাকার ব্রুটো ইনডেক্স ৪০ এর বেশি পাওয়া গেছে। দুই সিটি করপোরেশনের ৫৬টি এলাকায় ব্রুটো ইনডেক্স ছিল ২০ বা তার বেশি। জরিপে যতগুলো বাড়ি পরিদর্শন করে মশার উপস্থিতি পাওয়া গেছে শতকরা ১৯ দশমিক ৬০ শতাংশ বাড়ির মধ্যে। জরিপে জানানো হয়, উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের মগবাজার ও নিউ ইস্কাটন এলাকায় সর্বোচ্চ ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ৫৬ দশমিক সাত শতাংশ। এছাড়াও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও নিকুঞ্জ এলাকায় ৪৮ দশমিক চার শতাংশ, দারুস সালাম ও কল্যাণপুর এলাকায় ৪৬ দশমিক সাত শতাংশ, মহাখালী ও নিকেতন এলাকায় ৪০ দশমিক শূন্য শতাংশ ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে। এ সময় ২ হাজার ৪১২টি বাড়ি ও স্থাপনায় কোনও এডিস মশা পাওয়া যায়নি। ৫৮৮টি স্থানে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। অর্থাৎ মোট পরিদর্শন করা বাড়ির মধ্যে ১৯ দশমিক ৬০ শতাংশেই এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।
জরিপের তথ্যে দেখা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসাবো ও গোড়ান এলাকার ব্রুটো ইনডেক্স ৭৩ দশমিক ৩। এছাড়া ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের এলিফ্যান্ট রোড, সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় ৬৬ দশমিক ৭, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের আরকে মিশন রোড ও টিকাটুলিতে ৫০, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বনশ্রীতে ৪০ এবং ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের মিন্টো রোড ও বেইলি রোডে ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ৪০ শতাংশ। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স ৫৬ দশমিক ৭ পাওয়া গেছে। এই ওয়ার্ডে রয়েছে মগবাজার, নিউ ইস্কাটন এলাকা। এছাড়া বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও নিকুঞ্জ নিয়ে গড়া ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের ব্রুটো ইনডেক্স ৪৮ দশমিক ৪। ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কল্যাণপুর ও দারুস সালাম এলাকায় ৪৬ দশমিক ৭, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়ায় ৪৩ দশমিক ৩ এবং মহাখালী ও নিকেতন এলাকা নিয়ে ডিএনসিসির ২০ নম্বর ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ৪০। উত্তর সিটি করপোরেশনের আফতাবনগর ও মেরুল বাড্ডা এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বংশালের ব্রুটো ইনডেক্স শূন্য, অর্থাৎ এসব এলাকায় মশার উপস্থিতি পাওয়া যায়নি বলে জানানো হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে।
ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা গোড়ান-বাসাবো: ঢাকাসহ সারাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের মধ্যে রাজধানীতে জরিপ চালিয়ে এইডিস মশার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে গোড়ান ও বাসাবো এলাকায়। কোনো এলাকায় এইডিস মশার ঘনত্ব পরিমাপের একক ব্রুটো ইনডেক্স ২০ এর বেশি হলেই তাকে ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি বলা যায়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসাবো ও গোড়ান এলাকার ব্রুটো ইনডেক্স ৭৩ দশমিক ৩। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এইডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় গত ২৯ জুলাই থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত ১০ দিন ধরে জরিপ চলে। রবিবার সংবাদ সম্মেলন করে জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এইডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির উপব্যবস্থাপক ডা. আফসানা আলমগীর খান।