শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:৩১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
জব্দ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর রিট আরেক হত্যা মামলায় সাবেক বিচারপতি মানিককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে মানহানির মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান উৎপাদনে ফিরলো কর্ণফুলী পেপার মিল ২০৫০ সালের মধ্যে ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণে দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, দলবল নিয়ে ঘুরছেন পার্কে পিআইবির নতুন ডিজি ফারুক ওয়াসিফ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আবদুল্লাহ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পোশাক শিল্প আইন আপনার হাতে তুলে নেয়ার কারো কোনো অধিকার নেই :স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বললেন মির্জা ফখরুল

সালামের গুরুত্ব ও প্রসার

শাহজাহান আলী খান:
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২১

একটি পূর্ণাঙ্গ স্বয়ংসম্পূর্ণ ভারসাম্যপূর্ণ জীবন ব্যবস্থার নাম ইসলাম। একজন মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়সহ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে করণীয় বিধিবিধান সম্বলিত যে ধর্ম তার নাম ইসলাম। জীবনের এমন একটি ক্ষেত্র নেই ইসলাম যেখানে আলোকপাত করেনি। আজ আমরা একটি ছোট বিষয় নিয়ে আলোচনা করব যা ছোট বিষয় হলেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পরস্পরের আলাপ-আলোচনা, দেখা-সাক্ষাৎ, যোগাযোগ মানব জীবনের এক অতি প্রয়োজনীয় অংশ। এ কাজে সম্ভাষণ স্বাগত জানানোর পদ্ধতি গুরুত্বের দিক থেকে অনস্বীকার্য। এই সম্ভাষণ দেখা সাক্ষাতে সম্পর্ক উন্নয়নে বিরাট অবদান রাখে। প্রত্যেক ধর্মের, জাতির নিজস্ব আলাদা আলাদা সম্ভাষণ জানানোর পদ্ধতি-ধরন ভিন্ন ভিন্ন। মুসলমানদের সম্ভাষণ হলো ‘আস-সালামু আলাইকুম’।
সালামের প্রচলন শুরু : আল্লøাহ তায়ালা সর্বপ্রথম আদম আ:কে সালামের শিক্ষা দেন। তিনি আদম আ:কে সৃষ্টি করে ফেরেশতাদের সালাম দিতে বলেন। হজরত আদম সালাম দিলে ফেরেশতারাও সালামের উত্তর দেন। সালাম দেয়া-নেয়া নবী-রাসূলদের সুন্নত। যা আদম আ: থেকে শুরু হয়ে কিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
সালাম কাকে বলে : ইসলামী পরিভাষায় একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানের সাক্ষাতের সময় যে বাক্য দ্বারা সম্ভাষণ জানায়, স্বাগত জানায়, ভালোবাসা বন্ধুত্ব শান্তি নিরাপত্তা কল্যাণ ও দোয়া কামনা করে তাকেই আমরা সালাম বলে থাকি।
আল্লাহ তায়ালার সালাম : আল্লাহ তায়ালা সব জান্নাতিকে সালাম দিয়ে অভিবাদন জানাবেন। আল্লাহ বলেন, ‘পরম দয়ালু প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তাদের বলা হবে সালাম’ (সূরা ইয়াসিন-৫৮)।
আল্লøাহ অন্যত্র বলেন, ‘যেদিন তারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে, সে দিন তাদের অভিবাদনসহ সালাম’ (সূরা আল আহজাব-৪৪)।
ফেরেশতাদের সালাম : জান্নাতে জান্নাতিদের ফেরেশতারা সালাম দিয়ে অভিবাদন জানাবে এবং পরস্পরের শুভেচ্ছা বিনিময় হবে আসসালামু আলাইকুম দ্বারা। আর তাদের শেষ কথা হবে আল হামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন’ (সূরা ইউনুস-১০)। এ ছাড়া এ সম্বন্ধে সূরা আর-রাদ ২৩-২৪, সূরা আজ-জুমার ৭৩ এ কালিমার কথা বলা হয়েছে।
জান্নাতিদের মধ্যে সালাম : জান্নাতে এক জান্নাতি এবং অপর জান্নাতিদের মধ্যে অভিবাদন হবে সালাম। আল্লাহ বলেন, ‘যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে তারা প্রবেশ করবে জান্নাতে সেখানে তারা থাকবে চিরকাল। সেখানে অভিবাদন হবে সালাম’ (সূরা ইবরাহিম-২৩)। তারা শুনবে না কোনো বাজে কথা অথবা পাপবাক্য, সালাম আর সালাম ব্যতীত’ (সূরা আল ওয়াকিয়াহ : ২৫-২৬)।
সালাম দেয়া আল্লাহর নির্দেশ : আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের সালাম দেয়ার নির্দেশ দেন। ‘হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত… এবং তাদেরকে সালাম না দিয়ে প্রবেশ করো না’ (সূরা আন নূর-২৭)।
সালাম দেয়া রাসূলুল্লাহর নির্দেশ : নবীজী সা: মদিনায় এসে নতুন এক রাষ্ট্রীয় কাঠামো তৈরি করেন, যেখানে ইসলাম প্রচারে নানা ধরনের লোক এসে মুসলমান হয়ে নতুন জীবন যাপন করা শুরু করেছেন। এ সময়ে নানা ধরনের লোকের মধ্যে পরস্পর সম্প্রীতি ভালোবাসা প্রতিষ্ঠায় সালামের ভূমিকা প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে। আবদুল্লøাহ ইবনে সালাম রা: বলেন, নবীজী সা: মদিনায় পদার্পণ করেই সর্বপ্রথম যে কথা বললেন, ‘হে লোক সকল, তোমরা পরস্পর সালাম বিনিময় করো, অভুক্তকে আহার করাও, গভীর রাতে সালাত আদায় করো’ (তিরমিজি-২৪৮৫)।
সালাম দেয়ার পদ্ধতি : ইসলাম সালাম দেয়ার পদ্ধতি শিখিয়েছে। যে আগে সালাম দেবে সে বলবেÑ ‘আসসালামু আলাইকুম’ অথবা ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ’ অথবা ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ ওয়া বরকাতুহু’।
রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন একটা কথা বলব, যা করলে তোমাদের পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে? তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের প্রচলন করো’ (মুসলিম হা-৫৪)।
কৃপণতা দূর করা : সালাম না দেয়া কৃপণতা। এই কৃপণতা থেকে বাঁচতে হলে বেশি বেশি সালাম দাও। আবু হুরায়রা রা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি সালাম দিতে কার্পণ্য করে সে সব চেয়ে বড় কৃপণ। যে ব্যক্তি দোয়া করার ব্যাপারে অক্ষম, সে সব চেয়ে বড় অক্ষম’ (আল আদাবুল মুফরাদ হা-১০৪২)।
চেনা-অচেনা সবাইকে সালাম দিতে হবে : আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা: থেকে বর্ণিতÑ এক লোক এসে জিজ্ঞেস করল ইসলামের কোন কাজ উত্তম? নবীজী সা: বললেন, ‘তুমি খানা খাওয়াবে যাকে চেন অথবা চেন না সবাইকে সালাম দেবে’ (বুখারি হা-১২)।
মুসলমানদের হক আদায় করো : এক মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের ছয়টি হক রয়েছেÑ ১. যখন কোনো ব্যক্তি রোগে আক্রান্ত হয়, তখন তাকে দেখতে যাবে; ২. কোনো লোক মৃত্যুবরণ করলে, জানাজায় অংশ নেবে; ৩. কেউ দাওয়াত করলে, সে দাওয়াত কবুল করবে; ৪. কারো সাথে সাক্ষাৎ হলে, প্রথমে সালাম দেবে; ৫. যখন সে হাঁচি দেয় তখন সে হাঁচির জওয়াব দেবে; ৬. কেউ উপস্থিত বা অনুপস্থিত উভয় অবস্থায় তার কল্যাণ কামনা করবে’ (তিরমিজি হা-২৭৩৭)।
সালাম কে কাকে দেবে : ছোট বড়কে সালাম দেবে; আরোহী পদচারীকে; পদচারী উপবিষ্টকে এবং অল্পসংখ্যক অধিক সংখ্যককে সালাম দেবে। এটাই ইসলামের রীতি। (বুখারি হা-৬২৩২)
অন্যের মাধ্যমে সালাম পৌঁছানো : আয়েশা রা: থেকে বর্ণিতÑ একদা নবীজী সা: বললেন, হে আয়েশা জিবরাইল তোমাকে সালাম দিচ্ছেন। আয়েশা রা: উত্তরে বললেন, তার প্রতিও সালাম, রহমত, বরকত বর্ষিত হোক (বুখারি হা-৩২১৭)।
ছোটদের সালাম দেয়া : আনাস রা: বলেন, রাসূল সা: ছোটদের সালাম দিতেন।
বৈঠক থেকে যাওয়ার সময় সালাম প্রদান : আবু হুরায়রা রা: বলেন, নবীজী সা: বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ মজলিশে উপস্থিত হলে যেন সালাম দেয়। মজলিশ থেকে চলে যাওয়ার সময়ও যেন সালাম দেয়।’ (আবু দাউদ হা-৫২০৮) সালাম দেয়া নিষেধ : কারো ঘুম যেন ভেঙে না যায়; ইহুদিদের সালাম না দেয়া; ইশারায় ইঙ্গিতে সালাম না দেয়া; ইস্তিঞ্জারত অবস্থায় সালাম না দেয়া; সালাতরত অবস্থায় ও কুরআন তিলাওয়াতরত অবস্থায় সালাম না দেয়া।
সালাম পরস্পরের প্রতি দয়ামায়া, আন্তরিকতা ভালোবাসা, মমত্ববোধ, দায়িত্ববোধ সহমর্মিতা জাগ্রত করে। তখন মানব মনের কোণে অহঙ্কার বড়ত্ব হিংসা বিদ্বেষ, অন্যের প্রতি মন্দ ধারণা পোষণ ইত্যাদি দূরীভূত হয়। মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধ সুদৃঢ় হয়।
ইহজীবন সুন্দর করার ক্ষেত্রে সালামের বিকল্প নেই। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বেশি বেশি সালামের প্রচার প্রসার করার তাওফিক দান করুন, আমিন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com