করোনার সি.১.২ নামের নতুন ভ্যারিয়েন্ট অন্যান্য ধরনের তুলনায় আরও বেশি সংক্রামক হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার গবেষকরা। একই সঙ্গে নতুন ভ্যারিয়েন্টটি কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিনের সুরক্ষাকেও ফাঁকি দিতে পারে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। দেশটিতে করোনাভাইরাসের নতুন আরেকটি ধরন শনাক্তের পর এ কথা জানান তারা।
দক্ষিণ আফ্রিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কমিউনিকেবল ডিজিজেস (এনআইসিডি) এবং তাদের অংশীদার কেওয়াজুলু নাতাল ইনোভেশন অ্যান্ড সিকোয়েন্সিং প্ল্যাটফরম (কেআরআইএসপি) করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট সি.১.২ শনাক্ত করেছে। গবেষকরা বলেছেন, চলতি বছরের মে মাসে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়। তাদের দাবি, তার পর থেকে এই ভ্যারিয়েন্ট ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, মৌরিশাস, চীন, যুক্তরাজ্য, নিউজিল্যান্ড, পর্তুগাল এবং সুইজারল্যান্ডেও শনাক্ত হয়েছে।
আফ্রিকার গবেষকরা বলেছেন, এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টস অব কনসার্ন (ভিওসি) এবং ভ্যারিয়েন্টস অব ইন্টারেস্টের (ভিওআই) চেয়ে অধিক পরিবর্তিত ধরন হচ্ছে সি.১.২। গত ২৪ আগস্ট গবেষণাটি প্রিপ্রিন্ট আকারে সবফৎীরা সার্ভারে পোস্ট করা হয় এবং এটি একটি পিয়ার রিভিউড জার্নালে প্রকাশের অপেক্ষায় আছে। গবেষকরা বলেছেন, সি.১.২ এর সহজলভ্য সিকোয়েন্সের সংখ্যা দক্ষিণ আফ্রিকার পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে এই ভাইরাসের বিস্তার এবং ফ্রিকোয়েন্সের বৈচিত্র্যতার উপস্থাপনা হতে পারে।
আফ্রিকার দেশগুলোতে প্রায় প্রত্যেক মাসে নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের জিনোম সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মে মাসে বৃদ্ধির এই হার ০ দশমিক ২ শতাংশ হলেও পরের মাসে তা বেড়ে ১ দশমিক ৬ এবং জুলাইয়ে ২ শতাংশে পৌঁছায়। গবেষণার লেখকরা জিনোম সংখ্যার এই বৃদ্ধিকে দক্ষিণ আফ্রিকার বেটা এবং ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রাদুর্ভাবের শুরুর দিকের মতোই বলে মন্তব্য করেছেন। করোনা ভ্যাকসিনের সুরক্ষাকে কীভাবে ফাঁকি দিতে পারে সি.১.২ ভ্যারিয়েন্ট, সেটিরও ব্যাখ্যা দিয়েছেন গবেষকরা। তারা বলেছেন, নির্দিষ্ট অ্যান্টিবডিকে ফাঁকি দিতে সক্ষম করোনাভাইরাসের এন৪৪০কে এবং ওয়াই৪৪৯এইচ মিউটেশন সি.১.২ এর সিকোয়েন্সিংয়ে পাওয়া গেছে।
গবেষকরা বলেছেন, এসব মিউটেশন ভাইরাসের অন্যান্য অংশের পরিবর্তনের সাথে মিলিত হয়; যা পরবর্তীতে অ্যান্টিবডি এড়াতে সহায়তা করে। বেটা এবং ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হওয়ার পর যারা ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন তাদের শরীরের অ্যান্টিবডিকেও ফাঁকি দিতে পারে সি.১.২।
যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, গত ২৮ দিনে দক্ষিণ আফ্রিকায় নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৮ হাজার ৭৪৭ জন। এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ২৭ লাখ ৬৪ হাজার ৯৩১ জনে পৌঁছেছে এবং মারা গেছেন ৮১ হাজার ৫৯৫ জন।
সপ্তাহে করোনার সব সূচকই নি¤œমুখী: এক সপ্তাহের ব্যবধানে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা, শনাক্ত, মৃত্যু ও সুস্থতা সব সূচকই নি¤œমুখী। গত সপ্তাহের তুলনায় নমুনা পরীক্ষা ২১ হাজার ১২০টি, শনাক্ত রোগী ১১ হাজার ৫৫৭ জন, সুস্থ রোগী ১৯ হাজার ৩৫৩ জন ও মৃত্যু ৩৭৪ জন কমেছে। শতাংশের হিসাবে নমুনা পরীক্ষা ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ, শনাক্ত রোগী ২৬ দশমিক ৮২ শতাংশ, সুস্থতার হার ২৭ দশমিক ১৯ শতাংশ ও মৃত্যু ৩৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ কমেছে। চলতি বছরের ৩৩তম এপিডেমিওলজিক্যাল সপ্তাহের (১৬ আগস্ট থেকে ২২ আগস্ট) তুলনায় ৩৪তম এপিডেমিওলজিক্যাল সপ্তাহের (২৩ আগস্ট থেকে ২৯ আগস্ট) পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে এসব তথ্য জানা গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ৩৩তম এপিডেমিওলজিক্যাল সপ্তাহে দুই লাখ ৪০ হাজার ৯৯৬টি নমুনা পরীক্ষা, ৪৩ হাজার ৯৬ জন শনাক্ত, ৭১ হাজার ১৭৬ জন সুস্থ ও এক হাজার ১০৭ জনের মৃত্যু হয়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৩৪তম এপিডেমিওলজিক্যাল সপ্তাহে দুই লাখ ১৯ হাজার ৮৭৬টি নমুনা পরীক্ষা, ৩১ হাজার ৫৩৯ জন শনাক্ত, ৫১ হাজার ৮২৩ জন সুস্থ ও ৭৩৩ জনের মৃত্যু হয়।
সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আরও ৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মহামারিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২৬ হাজার ১০৯ জনে। একই সময়ে আক্রান্ত হিসেবে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন আরও তিন হাজার ৭২৪ জন। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৯৭ হাজার ২৬১ জনে। এছাড়াও ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন ছয় হাজার ১৮৬ জন। এ নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ২১ হাজার ৮৮৩ জনে।