ভারত থেকে টিকা পেতে অনাধিকাল অপেক্ষা করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সভা শেষে সাংবাদিকরা মন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ভারতের টিকার জন্য কতদিন আশায় থাকবেন। জবাবে মন্ত্রী বলেন, যতদিন তারা আশ্বাস দেবে, আমরা ততদিন আশায় থাকবো। করোনাভাইরাসের টিকার জন্য ভারেতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সাথে চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ। চুক্তি অনুযায়ী সিরাম বাংলাদেশকে টিকা না দিলেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বিষয়টি নিয়ে এখনো আশাবাদি। তবে টিকা না পেলে টাকা ফেরত আনা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। ভারত থেকে বাংলাদেশ তিন কোটি ৪০ লাখ টিকা কেনে। এজন্য অর্থ দেয়া হয় বাংলাদেশী মুদ্রায় ৬০০ কোটি টাকার বেশি। কিন্তু ভারত থেকে বাংলাদেশে টিকা এসেছে মাত্র ৭০ লাখ। গত জানুয়ারিতে প্রথম চালানে সিরাম পাঠায় ৫০ লাখ। এরপর প্রতি মাসে আসার কথা ছিল সমপরিমাণ। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে ২০ লাখ পাঠানোর পর ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞায় আর টিকা পাঠাতে পারেনি সিরাম। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতে যে অর্ডার দেয়া ছিল, তার দুই কোটি ৩০ লাখ টিকা এখনো পাইনি, আমরা এখনো অপেক্ষায় আছি।’ তিনি বলেন, আমরা যোগাযোগ রাখছি, সিরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকোর সাথে যোগাযোগ আছে, ওনারা আমাদের আশ্বস্ত করেও আসছেন, আমরা টিকা পাবো। তিনি আরো বলেন, যদি আমরা এই টিকা না পাই তাহলে অবশ্যই আমাদের টাকা-পয়সা নিয়ে আসতে হবে ও ফেরত দিতে হবে। আমরা আশা করি পাবো, আমরা আশা ছাড়িনি।
এদিকে, প্রতি মাসে এক কোটি ডোজের বেশি টিকা পাওয়ার ব্যবস্থা করার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বুধবার সংসদ অধিবেশনের টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তরে এ কথা জানান সংসদ নেতা। এর আগে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীসহ অন্য মন্ত্রীদের প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়।
সরকার দলের সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, এ পর্যন্ত (৩০ আগস্ট) ১ কোটি ৮২ লাখ ৮৯ হাজার ১৮ জনকে প্রথম ডোজ ও ৭৮ লাখ ৪০ হাজার ১৬৯ জনকে দ্বিতীয় ডোজসহ ২ কোটি ৬১ লাখ ২৯ হাজার ১৮৭ ডোজ কভিড প্রতিরোধী টিকা দেয়া হয়েছে। এখন দেশে মজুদ রয়েছে ১ কোটি ১৮ লাখ ৯৬ হাজার ৩৪৩ ডোজ। টিকা সংগ্রহ ও বিনামূল্যে তা সাধারণ মানুষের শরীরে প্রয়োগের কাজ চলমান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতি মাসে যাতে এক কোটি ডোজের বেশি টিকা পাওয়া যায় তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সিনোফার্মের দেয়া শিডিউল অনুযায়ী অক্টোবর থেকে প্রতি মাসে দুই কোটি হিসেবে ডিসেম্বরের মধ্যে ছয় কোটি টিকা পাওয়া যাবে। নভেল করোনাভাইরাসের টিকা সংগ্রহে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, করোনার টিকা সংগ্রহে আমরা বিশ্বের সব উৎপাদনকারী সংস্থার সঙ্গেই যোগাযোগ করেছি। এর মধ্যে শুরুতে কেবল ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে সাড়া পাওয়া যায়। এরপর অগ্রিম টাকা দিয়ে তাদের কাছ থেকে তিন কোটি ডোজ টিকা সংগ্রহের চুক্তি করি। তখন পর্যন্ত অন্যান্য উৎপাদনকারী সংস্থা থেকে টিকা পাওয়ার বিষয়ে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরবর্তী সময়ে কেবল চীনের সিনোফার্ম ও রাশিয়ার স্পুতনিক-৫ সাড়া দেয়। সঙ্গে সঙ্গেই আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করি। এর মধ্যে সিনোফার্মের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে টিকা উৎপাদনের জন্য সমঝোতা চুক্তিও হয়েছে।