শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:২৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
জব্দ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর রিট আরেক হত্যা মামলায় সাবেক বিচারপতি মানিককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে মানহানির মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান উৎপাদনে ফিরলো কর্ণফুলী পেপার মিল ২০৫০ সালের মধ্যে ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণে দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, দলবল নিয়ে ঘুরছেন পার্কে পিআইবির নতুন ডিজি ফারুক ওয়াসিফ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আবদুল্লাহ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পোশাক শিল্প আইন আপনার হাতে তুলে নেয়ার কারো কোনো অধিকার নেই :স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বললেন মির্জা ফখরুল

চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই ব্যাংকগুলোতে ডলারে টান পড়েছে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২১

চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই ব্যাংকগুলোতে ডলারে টান পড়েছে। কিন্তু আগের উদ্বৃত্ত থাকায় জুলাই মাসে চাহিদা ও জোগানের সমন্বয় করতে পারলেও আগস্টে অনেকেই ডলারের সঙ্কটে পড়ে যায়। গত আগস্টে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ৩০ কোটি ৫০ লাখ ডলার কিনেছে। এর বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে স্থানীয় মুদ্রা অর্থাৎ টাকা তুলে নিয়েছে দুই হাজার ৫৯৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ১৮ পয়সা হিসেবে)। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোতে বৈদেশিক মুদ্রার জোগান অব্যাহত থাকবে।
ধারাবাহিক হারে কমে যাচ্ছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে অর্থাৎ জুলাইয়ে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে রেমিট্যান্স কম এসেছিল প্রায় ২৮ শতাংশ। গত আগস্টেও তা কমেছে প্রায় ৮ শতাংশ। এ সুবাদে অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে প্রায় সাড়ে ১৮ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিশ্বব্যাপী করোনায় মধ্যপ্রাচ্যসহ সবদেশেই অর্থনৈতিক কর্মকা- কমে গেছে। এ সময়ে যে হারে বিদেশ থেকে শ্রমিক ফিরে এসেছে ওই হারে যায়নি। আবার যারা বিদেশে আছেন তাদের অনেকেরই কাজ নেই। কোনো মতে, দিন পার করছেন তারা। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহে। এ দিকে রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় কিছু ব্যাংকে ডলার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত মাসে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করেছে প্রায় ৩১ কোটি ডলার, যার স্থানীয় মূল্য প্রায় দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকা। সেলিম নামক একজন সুবিধাভোগী জানান, তার ভাই শামীম হাসান মালয়েশিয়ায় থাকেন। প্রতি মাসেই তিনি দেশে রেমিট্যান্স পাঠাতেন। কিন্তু গত দুই মাস কোনো অর্থ পাঠাতে পারেননি। কারণ কোম্পানির কাজ না থাকায় তারা বসে বসে সময় কাটাচ্ছেন। আয় না থাকায় কোনো রকম জীবন অতিবাহিত করছেন। এ কারণে গত দুই মাসে কোনো অর্থ পাঠাতে পারেননি। তবে চলতি মাসে কাজ শুরু হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে আগামী মাসে তার ভাই অর্থ পাঠাতে পারবেন। শামীম হাসানের মতো অনেকেই মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থান করছেন। এমনিতেই অর্থনৈতিক মন্দার কারণে অনেকেই ফিরে এসেছেন। আবার যারা আছে তাদের কোম্পানির উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফলে আয়ও কমে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহে। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, দেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ রেমিট্যান্স আসে মধ্যপ্রাচ্যের আটটি দেশ থেকে। কিন্তু করোনায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এসব দেশেও অর্থনৈতিক কর্মকা- কমে গেছে। এ কারণে আগের মতো প্রবাসীরা অর্থ পাঠাতে পারছেন না। তবে সামনে অর্থনৈতিক কর্মকা- শুরু হলে রেমিট্যান্স প্রবাহ আবারো ঘুরে দাঁড়াবে বলে তারা আশা করছেন। এক দিকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাচ্ছে, অপর দিকে বাড়তে শুরু করেছে আমদানি ব্যয়। এতে টান পড়তে শুরু করেছে বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহে। এমনি পরিস্থিতিতে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল মঙ্গলবারও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ছয় কোটি ডলার বিক্রি করেছে কয়েকটি ব্যাংকের কাছে।
ব্যাংকাররা জানান, বিদায়ী অর্থবছরে পর্যাপ্ত রেমিট্যান্স আসে। প্রতি বছরই রেমিট্যান্স প্রবাহে নতুন রেকর্ড হয়। এরই সুবাদে গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয় আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৬ শতাংশ। এক বছরে দেশে রেমিট্যান্স আসে প্রায় দুই হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার। কিন্তু আমদানি চাহিদা কমে যাওয়ায় বাজারে উদ্বৃত্ত ডলার ছিল। বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে গত অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে ৭৯২ কোটি ২০ লাখ ডলার কিনে নেয়। স্থানীয় মুদ্রায় যার মূল্য প্রায় সাড়ে ৬৭ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৪.৮০ টাকা হিসাবে)।
গত অর্থবছরে যে হারে রেমিট্যান্স বাড়তে থাকে, চলতি অর্থবছরের শুরুতেই তা হোচট খায়। গত জুলাইতে রেমিট্যান্স আসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২৮ শতাংশ কম। গত জুলাইয়ে রেমিট্যান্স আসে ১৮৭ কোটি ১৫ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার। গত জুলাইয়ের ধারাবাহিকতায় গত মাসে অর্থাৎ আগস্টে রেমিট্যান্স কম এসেছে প্রায় ৮ শতাংশ। গত মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১৮১ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৯৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার। সবমিলে অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রেমিট্যান্স কম এসেছে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় সাড়ে ১৮ শতাংশ। এ দিকে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা কাটতে শুরু করেছে। দীর্ঘ প্রায় দেড় মাস টানা লকডাউন শেষে অর্থনৈতিক কর্মকা- বাড়তে শুরু করেছে। এতে বেড়ে যাচ্ছে আমদানি ব্যয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত জুন শেষে আমদানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৪৫ শতাংশ। গত জুলাই মাসের হিসাব এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে জুনের ধারাবাহিকতা রয়েছে আমদানি ব্যয়ে। এক দিকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে, অপর দিকে বাড়ছে আমদানি ব্যয়। এতে ব্যাংকগুলোতে ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে। এমনি পরিস্থিতিতে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা ও জোগানের সাথে সমন্বয় করতে পারছে না কিছু ব্যাংক। বাধ্য হয়েই তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ধরনা দিচ্ছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com