একমাত্র দিনাজপুরের বিরামপুরে পরিবেশ বান্ধব ইটভাটায় তৈরি হচ্ছে উন্নতমানের ইট। আধুুনিক যুগের অত্যাধুনিক মেশিন দ্বারা ইটভাটাটি তৈরি। যার দ্বারা পরিবেশ দুষিত বা আবাদি ফসলের কোন ক্ষতি হয় না। এছাড়া প্রচলিত ইটভাটার ইটের চেয়ে এই ভাটার ইটের গুণগত মান অনেক ভাল এবং দামও কম। বিরামপুর থেকে পশ্চিমে প্রায় ১০ কিলোমিটার দুরে জোতবানি ইউনিয়নের একইর গ্রামে এ,এইচ অটো ব্রিকস ইট ভাটাটি অবস্থিত। প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে পরিবেশ বান্ধব ইট ভাটাটি তৈরি হয়েছে। এখানে ২০০ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থা। ২০১০ সাল থেকে ভাটাটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র সহ বিভিন্ন সরকারি অনুমোদনকৃত কাগজপাতি সম্পূর্ণ করতে সময় লেগে যায় চার বছর। ২০২০ সাল থেকে ইট তৈরির কাজ শুরু হয় এই উন্নতমানের ইট ভাটায়। জ্বালানী কাঠ ছাড়াই বিদ্যুৎ আর কয়লা দ্বারা ইট পুড়ানো হয় এই এ,এইচ অটো ব্রিকস ভাটায়। এখানে প্রায় প্রতিটি ইট তৈরির কাজ হয় মেশিনের দ্বারা, হাতের তেমন কাজ নেই বললেই চলে। এ,এইচ অটো ব্রিকস ভাটা ঘুরে দেখা যায়, মাটি ফেলার একটি হলার রয়েছে, সেখানে গাড়ি এসে মাটি ফেলে। সেই মাটি আবার কাঁদা তৈরি মেশিনে পৌঁছায়। মেশিন থেকে কাঁদা তৈরি হয়ে, ফিতার সাহায্যের ইট তৈরি আর একটি মেশিনে চলে যায়। সেখানে কাঁচা ইট তৈরি হয়ে আবারও ফিতার সাহায্যে ছোট ছোট ভ্যান গাড়িতে তুলা হয়। সেখানে রয়েছে বড় দুইটি উঁচু চিমনী, যার ভিতরে আছে ১৪টি ছোট আকারে রেল লাইন। ইট সাজানো ছোট গাড়িগুলো রেললাইনের মাধ্যমে চিমনীর ভিতরে প্রবেশ করানো হয়। এদিকে ভাটার গরম ধোয়া মাটির নিচ দিয়ে পাইপের সাহায্যে এবং হওয়া মেশিন দ্বারা ঐ দুই চিমনীর মাঝখানে প্রবেশ করে। সেই গরম ধোয়ার তাপে কাঁচা ইটগুলো শুকিয়ে যায় এবং চিমনীর ছোট গেট দিয়ে শুকনো ইটসহ গাড়িগুলো বের হয়ে আসে। পরে অন্য ছোট ছোট ঠেলা গাড়িতে শুকনা ইটগুলো সাজিয়ে ভাটার কাছে আনা হয়। ভাটায় রয়েছে ৪৫ টি গেট, যা দ্বারা ইট প্রবেশ এবং বের করা হয়। কাঁচা ইট দিয়ে ভাটা সাজানো হয়। সাজানোর ৭ দিনের মাথায় শুকনা ইট পুড়ে উপযুক্ত ইটে পরিণত হয়। তা থেকে প্রতিদিন ২০ হাজার গুণগত ইট বের হয় এই ভাটা থেকে। এসময় তিন প্রকার ইট হয়ে থাকে, ১ নং, ২ নং ও প্রিকেট জাতীয়। ১ নং ইট বিক্রি করছেন কর্তৃপক্ষ ৮ হাজার টাকা, ২ নং ৭ হাজার এবং প্রিকেট জাতীয় ইট ৮ হাজার টাকা। বর্তমান এই ইটের চাহিদা প্রচুর। বিরামপুর ছাড়াও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে এই ইট ক্রেতারা ক্রয় করতে আসছেন। একজন ইট ক্রয় করতে আসা রেজাউল করিম বলেন, বাড়ি করার কাজ শুরু করেছ। তাই ইট নিতে আসলাম, শুনলাম এটা পরিবেশ বান্ধব ইট। অন্য ইটের চেয়ে এ ইটের মান ভাল এবং দামও নাগালের ভিতর। আমি আজ ৮ হাজার টাকা দরে ৬ হাজার ইট নিলাম, পরে আবার নিবো। স্থানীয় মিঠু আহমেদ বলেন, এই ভাটার পাশে আমার প্রায় ৮ বিঘা ধানা জমি আছে। প্রতিটি জমিতে ধান লাগিয়েছি, ধানের কোন ক্ষতি হচ্ছে না। গত আমন ও ইরি মৌসুমে ধানের কোন ক্ষতি হয়নি। এই ভাটার কাজ সম্পূর্ণ আধুুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে করছেন। আমরা কৃষক মানুষ, আমাদের ফসলের কোন ক্ষতি হচ্ছে না। আর একজন স্থানীয় আশরাফ আলী বলেন, অন্য ইট ভাটার কালো বিষাক্ত ধোয়ায় পরিবেশ অনেক দুষিত হয়। তবে এই ভাটা থেকে পরিবেশ বা ফসলের কোন ক্ষতি নেই। এছাড়াও আমাদের গ্রামে এতো উন্নত মানের ভাটা নির্মাণ হয়েছে, এটা আমাদের ভাগ্য। বাহির থেকে বহু লোকজন আমাদের এলাকায় আসছেন। ভাটার শ্রমিক রাশেদুল ইসলাম বলেন, আমরা এখানে ২০০ জন শ্রমিক প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। আমরা অনেক ভাল আছি, করোনা কালেও আমাদের কাজ বন্ধ ছিলো না। প্রতিদিন আমরা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাতা মজুরি পেয়ে থাকি। ভাটা মিস্ত্রি জিয়াউর রহমান বলেন, ভাটা চালু থেকে আমি এখানে কাজ করছি। এভাটা দ্বারা পরিবেশের কোন ক্ষতি হয় না। সম্পূর্ণ মেশিন দ্বারা কাজ করা হয়। বিশেষ করে অন্য ইটের চেয়ে এই ইট মজবুত। এই ইট দিয়ে কাজ করতে সিমেন্ট খরচ কম হয় আবার প্লাস্টার না করলেও চলে। এ,এইচ অটো ব্রিকস কোম্পানির ম্যানেজার শাহিন ইসলাম বলেন, যতদিন যাচ্ছে ততই আমাদের ইটের চাহিদা বেড়েয় চলছে। দিনাজপুর, জয়পুরহাট ও বগুড়া থেকেও ক্রেতারা ইট নিতে আসছেন আমাদের ভাটায়। তবে বর্তমান আমরা চাহিদা মোতাবেক ইট দিতে পারছি না। এ,এইচ অটো ব্রিকস কোম্পানির মালিক মশিউর রহমান বলেন, ২০১০ সাল থেকে এই পরিবেশ বান্ধব ইটভাটার নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলাম। গত ২০২০ সাল থেকে পরিবেশ বান্ধব ভাটায় ইট তৈরি শুরু হয়েছে। তবে সরকারি অনুমোদনকৃত ছাড়পত্র জোগার করতে প্রায় চার বছর সময় লেগেছে। এ ভাটাই ২০০ জন শ্রমিক কাজ করে। তিনি আরও বলেন অত্যাধুনিক ইট ভাটা তৈরি করতে অনেক ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। সরকারি সহযোগীতা পেলে আরও বেশি শ্রমিক সহ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারবো।