নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা সদরসহ প্রত্যন্ত এলাকার হাট বাজারে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে ভেজাল গো-খাদ্য। খামারিদের চোখ ফাঁকি দিয়ে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে একটি সিন্ডিকেট। এতে উপজেলার কয়েক শত খামারি প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন। চালের পচা ব্রানের সাথে মেয়াদ উত্তীর্ণ আটা মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে পশুখাদ্য। এগুলো মাছের খাবার হিসেবেও ব্যবহার করা হচ্ছে। খামারিরা বলছেন, ভেজাল পশুখাদ্য মারাত্মক ক্ষতিকর, বিক্রি বন্ধ করা না গেলে তারা হুমকির মুখে পড়বে। আর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিষয়টি তাদের জানা নেই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স থেকে প্রায় ২০০ মিটার দূরে বুলবুল সিনেমা হল এলাকায় নামে-বেনামে গড়ে ওঠা রাইস এজেন্সি, খুদ, ভূসি কুঁড়া ও ব্রান এর দোকানের আড়ালে চালের পচা ব্রানের সাথে কুঁড়া ও আটা মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ভেজাল পশুখাদ্য। ২০-২২টি দোকানের গুদামে এসব পশুখাদ্য তৈরি করে ফ্রেস সয়া মিলের খালি বস্তায় ভরে মহাদেবপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলার হাট বাজারে বিক্রি করছে একটি চক্র। দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যে ভেজাল পশুখাদ্য তৈরি করলেও রহস্যজনক কারণে সংশ্লিষ্টরা নীরব। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পাইকারী মাছবাজার সংলগ্ন মেসার্স সৌরভ রাইস এজেন্সির গুদামে চলছে ভেজাল পশুখাদ্য তৈরির কাজ। স্তুপ করে রাখা বস্তা থেকে চালের পচা ব্রান বের করে তার সাথে ধানের কুঁড়া ও মেয়াদ উত্তীর্ণ আটা মেশানো হচ্ছে। সেখানে কাজ করা কয়েকজন শ্রমিক জানালেন টিনের ছাউনি দেয়া গুদামে দীর্ঘদিন ধরে বস্তাগুলো জমা করে রাখায় বৃষ্টির পানি এবং স্যাতসেঁতে আবহাওয়ায় ব্রান পচে গেছে। এগুলোর সাথে আটা ও কুঁড়া মিশিয়ে গরু এবং মাছের খাবার হিসেবে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে । জানতে চাইলে ওই গুদামের মালিক মামুনুর রশিদ মমিন আটা মেশানোর কথা স্বীকার করে জানান, আটা ভালো জিনিস। ব্রানের চেয়ে দামও বেশি। ব্রানের রঙ চকচকে করার জন্য এটি করা হয়। অটোমেটিক রাইসমিলের মালিকরা জানায়, উপজেলার প্রায় ৫০টি অটো রাইসমিলে প্রতিদিন ২০০ বস্তা রাইস ব্রান তৈরি হয়। মোটা চালকে চিকন করার জন্য মেশিনের মাধ্যমে ঘসে চিকন করার পর যে উচ্ছিষ্ট অংশ থাকে তাই হলো রাইস ব্রান। এতে প্রচুর খাদ্যগুণ রয়েছে। কিন্তু এগুলো বেশিদিন রাখলে পচে যায়। পচা ব্রান পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা ক্ষতিকর। উপজেলার খাজুর এলাকার খামারি তাজুল ইসলাম বলেন, ভেজাল গো-খাদ্যের কারণে গরু যেমন অসুস্থ হয়ে পড়ে ঠিক তেমনি দুধ উৎপাদন হ্রাস পায়। ভেজাল গো-খাদ্য উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধ করা না গেলে দুগ্ধ খামারিরা হুমকির মুখে পড়বে। একই কথা বলেন আরও ১০-১৫ জন খামারি। প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডাক্তার গোলাম রব্বানী বলেন, উপজেলায় বিপুলসংখ্যক গবাদিপশু পালন করা হয়ে থাকে। ব্রানের সাথে কোনক্রমেই অন্য কিছু মেশানো যাবেনা। পচা ব্রান পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা ক্ষতিকর। সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাকসুদুর রহমান বলেন, পচা ব্রান মাছের খাদ্যে ব্যবহার করার সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান মিলন বলেন, যেসব অসাধু ব্যবসায়ী ভেজাল গো-খাদ্যে তৈরি ও বাজারজাত করছেন তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।