সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৮:৪৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
দিল্লি বিমানবন্দরে বাংলাদেশী গার্মেন্টসের রফতানি বাড়ায় ভারতীয়দের আপত্তি নকলায় বিএনপির ৪ নেতানেত্রীকে বহিষ্কার পালিয়ে বাংলাদেশে এলেন আরও ৮৮ বিজিপি সদস্য ১২ দিনে পানিতে ডুবে ১২ শিশুর মৃত্যু অর্থবছরের ছয় মাসে রাজস্ব আহরণ প্রায় ১৪ শতাংশ বেড়েছে: অর্থমন্ত্রী চাঁদপুর সেচ প্রকল্প বাঁধের মাটি ইটভাটায় ব্যবহারের অভিযোগ বরিশালে ৮ ঘন্টা বন্ধ থাকার পর অভ্যন্তরীন ও দুরপাল্লার বাস চলাচল শুরু : অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আপনাদের সহায়তায় সুস্থ জীবন চাই শ্রীমঙ্গলে সদ্যপ্রতিষ্ঠিত নূরে মদিনা মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা ও লেখাপড়ার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে মতবিনিময় সভা ফুলপুরে চেয়ারম্যান প্রার্থী হাবিবের মিছিল

দাম্পত্যজীবনে সুখ

প্রফেসর তোহুর আহমদ হিলালী:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১ অক্টোবর, ২০২১

ইসলাম ফিতরাতের ধর্ম। মানুষের স্বভাব-প্রকৃতি যা দাবি করে ইসলাম তা অস্বীকার করে না। বয়োপ্রাপ্তির পর একজন পুরুষ ও নারীর পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ স্বাভাবিক, আল্লাহপাক প্রদত্ত। পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ ইসলাম স্বীকার করে এবং নারী-পুরুষের একত্রে চলার ক্ষেত্রে একটি বৈধতার আবরণ দিয়েছে মাত্র। ইসলামে নারী ও পুরুষের মধ্যে জৈবিক চাহিদা পূরণের ভিত্তি হলো বিয়ে। বিয়েবহির্ভূত একত্র জীবনযাপন অত্যন্ত ঘৃণ্য, হারাম ও দ-নীয় অপরাধ। ইসলামী সমাজে জিনা-ব্যভিচার অত্যন্ত কঠিন; কিন্তু বিবাহ খুব সহজ। দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও নারী মোহরানার বিনিময়ে দু’জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে পরস্পর ইজাব কবুল করলেই বিয়ে হয়ে যায়। এটি একটি সামাজিক চুক্তি এবং সেটি হতে হবে প্রকাশ্যে। অর্থাৎ মহল্লাবাসী জানবে যে, এই পুরুষ এবং নারী পরস্পর বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। রসূলুল্লাহ সা: ও সাহাবিদের জীবনে অধিকাংশ বিয়ে মসজিদে সম্পন্ন হয়েছে এবং ওলিমা হিসেবে খুরমা-খেজুর বিতরণ করা হয়েছে। বর সচ্ছল হলে ছাগল/দুম্বা জবেহ করে আত্মীয়স্বজনকে খাওয়ানো হয়েছে। বিয়েতে মেয়ের অভিভাবকের কোনো খরচ নেই। উপরন্তু মোহরানা দিয়ে মেয়েকে গ্রহণ করতে হয়। যৌতুকের তো প্রশ্নই ছিল না এবং আড়ম্বর বা নানা আনুষ্ঠানিকতা ছিল না। তাই ছেলেমেয়ে সাবালক হলে সহজেই বিয়ে করতে পেরেছে। মোহরানা নির্ধারিত হয়েছে সামর্থ্যরে ওপর। যার কিছুই নেই, এমন ব্যক্তি স্ত্রীকে কুরআনের কিছু আয়াত শিখিয়ে দেবে এমন শর্তেও বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।
বিয়ের মাধ্যমে নর ও নারীর মধ্যে পূর্ণতা আসে। মানবপ্রকৃতিতেই রয়েছে পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ ও ভালোবাসা। দাম্পত্যজীবনে রয়েছে আনন্দ-স্ফূর্তি ও বিনোদন। শুধু বিনোদন নয়; রয়েছে প্রভূত সওয়াব। সাহাবিরা রাসূলল্লাহ সা:-এর কাছে জানতে চান স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আমরা যা করি সেটি তো আনন্দ-স্ফূর্তির জন্যই, এতেও কি সওয়াব? জবাবে রাসূল সা: বলেন, ভিন্ন নারী-পুরুষে করলে কি গুনাহ হতো? জবাবে সাহাবিরা বলেন, হ্যাঁ। তাই স্বামী-স্ত্রী যখন বৈধভাবে তাদের জৈবিক চাহিদা পূরণ করে তাহলে অবশ্যই সওয়াব হবে। তাদের পরস্পর আদর-আপ্যায়ন, হাস্যরস, কৌতুক সবকিছুতে রয়েছে সওয়াব। মানব প্রকৃতিতে পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ দেয়ার পরও রাসূলুল্লাহ সা: দাম্পত্যজীবনে সুখ-শান্তি বজায় রাখার জন্য নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তাঁর চমৎকার সব বাণী রয়েছে, ‘ওই নারীই উত্তম যাকে দেখে স্বামী উৎফুল্ল হয়, প্রশান্তি অনুভব করে।’ আবার বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তিই উত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম’। স্ত্রীর মনোরঞ্জনের জন্য রাসূলুল্লাহ সা: স্ত্রীকে সাথে নিয়ে দৌড় প্রতিযোগিতা করেছেন, নিজে পরিপাটি থেকেছেন, আয়েশা রা: হাড়ের যেখানে কামড় দিয়েছেন হাত থেকে নিয়ে তিনিও সেখানে কামড় দিয়ে খেয়েছেন, গ্লাসে যেখানে ঠোঁট লাগিয়ে পানি পান করেছেন তিনিও সেখানে ঠোঁট লাগিয়ে পান করেছেন। এসবই প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসার নিদর্শন।
দাম্পত্য সম্পর্ক অটুট রাখা ও দাম্পত্যজীবনে সুখী হওয়ার জন্য স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই ভূমিকা রয়েছে। পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা, এক অপরকে অগ্রাধিকার দান ও ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতা ছাড়া সুখী হওয়া সম্ভব নয়। ডেল কার্নেগি চমৎকারভাবে বলেছেন, দাম্পত্যজীবনে সুখী হতে চান তাহলে পরস্পরকে অবিশ্বাস করবেন না আর ঘ্যানর ঘ্যানর করবেন না। পর্দাহীনতা ও অবাধ মেলামেশার ফলে পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস (পরকীয়া) দারুণভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং গৃহে ঝগড়াঝাটি লেগেই আছে। আল্লাহর বিধানের প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণই পারে এমন অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে।
প্রাচুর্য সুখের চাবিকাঠি নয়। স¤প্রতি বিল গেটস দম্পতির বিয়েবিচ্ছেদ এবং অতি স¤প্রতি এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান ও ইভা রহমানের বিয়েবিচ্ছেদ প্রমাণ করে অঢেল প্রাচুর্য থাকার পরও তারা সুখী ছিল না। বর্তমানে বিয়েবিচ্ছেদ ও আত্মহত্যা অনেক বেড়ে গেছে এবং এর অন্যতম কারণ দাম্পত্যকলহ। দীর্ঘ দিন একত্রে চলার মধ্যে মান-অভিমান, ঝগড়াঝাটি, কলহ-বিবাদ খুবই স্বাভাবিক। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সা:-এর জীবনেও ঘটেছে। এমন কিছু ঘটলে নিজেরাই দ্রুত সংশোধন করে নেয়া উচিত। সম্ভব না হলে পরিবারের সহযোগিতা গ্রহণ করতে হবে। জমিনে জায়েজ কাজের মধ্যে সবচেয়ে অপছন্দনীয় হলো স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ (তালাক)। ইসলামে তালাকের ক্ষমতা পুরুষকে দেয়া হয়েছে। যত্রতত্র ব্যবহার নয়। অনেক প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হয়। স্বামীর কর্তব্য নিজের ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধন করে নেয়া ও স্ত্রীকে বোঝানো। তাতে না হলে বিছানা আলাদা করা এবং নিজেদের পক্ষে সম্ভব না হলে উভয় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মীমাংসার উদ্যোগ নেয়া। কোনো কিছুতে সম্ভব না হলে তখন স্বামী তিন পর্যায়ে স্ত্রীকে (তিন মাসে) তালাক দেবে। অবশ্য একান্ত বাধ্য হলে তালাক চাওয়ার অধিকার স্ত্রীর রয়েছে (খোলা তালাক)।
দাম্পত্যকলহ মীমাংসার ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনের এগিয়ে আসা উচিত। কোনো কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা না হলে অনেক সময় স্ত্রী মায়ের বাড়ি চলে যায়। এ ক্ষেত্রে বাবা-মা এবং নিকটবর্তী আত্মীয়স্বজনের উচিত তাদেরকে বোঝানো। শয়তানের সেরা কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটানো। যারা এই পথে উদ্যোগী হয় শয়তান তাদের কাছে বন্ধু হিসেবে আবির্ভূত হয়। পরস্পরের হাজারো দোষ তাদের সম্মুখে উপস্থাপন করে। পক্ষান্তরে যারা মীমাংসার উদ্যোগ গ্রহণ করে তাদের এই কাজটি এত প্রশংসনীয় যে, এ ক্ষেত্রে মিথ্যা বলা আর মিথ্যা থাকে না, সেটি পাপ না হয়ে সওয়াবে পরিণত হয়। যেমন, একটি দম্পতির মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে স্ত্রী তার মায়ের বাড়িতে চলে গেল, এমতাবস্থায় একজন বানিয়ে বলে, ‘আপা ভাইয়ের সাথে দেখা হয়েছিল, ভাই তো তোমার জন্য অস্থির, দেখলাম চেহারা উষ্কখুষ্ক আমি যতক্ষণ তার কাছে বসা ছিলাম ততক্ষণ তোমার কথাই বললেন।’ আবার ভাইকে গিয়ে বলে, ‘আপা তো আপনার চিন্তায় খাওয়াদাওয়া সব বন্ধ করে দিয়েছে, চেহারা একেবারে শেষ হয়ে গেছে।’ এ মিথ্যা মিথ্যা নয়, এটি সওয়াবের কাজ। ঠিক দুই ভাইয়ের বিরোধ মেটানোর ক্ষেত্রেও এমন আচরণ করা যায়। বিরোধ মীমাংসায় ভূমিকা রাখা কত গুরুত্বপূর্ণ, পক্ষান্তরে যারা স্বামী-স্ত্রী বা ভাইয়ে ভাইয়ে বিরোধে উসকানি দেয় তারা শয়তানের দোসর, নিকৃষ্টতম সৃষ্টি ও জাহান্নামের কীট।
আমাদের সামাজিক কালচারটা হলো, নিজের ছেলেমেয়ে ভুলের ঊর্ধ্বে। অন্ধভাবে মা-বাবা তার সন্তানের পক্ষ নেয় এবং এতেই বিপত্তি ঘটে। নিজের সন্তানের প্রতি দুর্বলতা স্বাভাবিক। দোষের কিছু নয়। দোষ তখনই হয় যখন সমাধানের দিকে না গিয়ে প্রশ্রয় দেয়। অবশ্য সব বাবা-মা-ই চান তাদের সন্তানদের সংসার টিকে থাকুক। আমার বড় ছেলের বিয়ে-উত্তর নববধূকে পারিবারিকভাবে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানে আমি স্পষ্ট বলেছিলাম, ভবিষ্যতে যদি ছেলে ও ছেলেবৌর মধ্যে বিরোধ দেখা দেয় আমি পুত্রবধূর পক্ষ নেবো এবং মেয়ে-জামাইয়ের মধ্যে বিরোধ হলে আমি জামাইয়ের পক্ষ নেবো। আমরা যদি এমন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করি তাহলে বিরোধ বেশি দূর এগোবে না ইনশা আল্লাহ। আমি আরো বলি, আমাদের ছেলেরা হোক বৌপাগল এবং মেয়েরা হোক পতিপরায়ণ। এমন সংসারে শান্তি বিরাজমান থাকাই স্বাভাবিক। লেখক : উপাধ্যক্ষ (অব:), কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com