কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় চাঁদা না দেয়ায় বড় ভাইয়ের বসত বাড়ির নির্মাণ কাজ বন্ধ করার অভিযোগ উঠেছে আপন ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে। ঈদগাঁও ইউনিয়নের উত্তর মাইজ পাড়ার চৌধুরী পরিবারে এ ঘটনা ঘটেছে। সহোদর দুই জন হলেন উক্ত এলাকার মরহুম আলহাজ্ব ছৈয়দুল করিম চৌধুরীর পুত্র মনজুরুল হক চৌধুরী ও তার ছোট ভাই মুজিবুর রহমান চৌধুরী। জানা গেছে, মনজুরুল হক চৌধুরী কয়েক মাস আগে উত্তর মাইজ পাড়ায় তার পৈতৃক বসত ভিটায় একটি দ্বিতলা বসত বাড়ির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। এতে তার ছোট ভাই মুজিবুর রহমানের সাথে তার জমি সংক্রান্ত বিরোধের সূত্রপাত হয়। স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়। সমঝোতা চুক্তি মতে, মুজিবুর রহমানের দখলে থাকা মনজুরুল হক চৌধুরীর অংশ বাবদ মুজিবের অংশ হতে মনজুরুল হক চৌধুরীর সাথে লাগোয়া ৩ ফুট প্রস্থ ৪৪ ফুট দৈর্ঘ্য জায়গা মনজুরুল হক চৌধুরীকে ছেড়ে দেবে। এর সাথে লাগোয়া পেছনের মনজুরুল হক চৌধুরী দখলীয় অংশ মুজিবকে ছেড়ে দেবে। টিনের ছাউনি ঘরের মুজিবের করা অংশের পানি চলাচল পাকা সংযোগের মাধ্যমে উভয়েরই নিজ নিজ অংশে পানি চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। কারো পানি কারো ছাউনি বা অংশে ফেলা যাবে না। পিছনে স্থিত বাউন্ডারি দেয়াল মুজিবের দেয়াল হিসাবে গণ্য হবে। এছাড়া মঞ্জুরুল হক চৌধুরীর কাছ থেকে মুজিবকে দশ হাজার টাকা বুঝিয়ে দেয়া হয়। চুক্তিপত্রের সংশ্লিষ্টদের নিকটাত্মীয় মো আবু হেনা চৌধুরী মোঃ শাহজাহান চৌধুরী শামীম শহীদসহ ৮ জন সাক্ষী হিসেবে রয়েছেন। মনজুরুল হক চৌধুরী অভিযোগ করেন, চাঁদার দাবিতে তার ছোট ভাই মুজিব গত ২০ অক্টোবর তার বসত বাড়ির নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। ইতিপূর্বে সে মঞ্জুরুলকে শারীরিকভাবে নাজেহাল সহ বিভিন্নভাবে অপদস্থ করে। তার দাবিকৃত চাঁদা না দেয়ায় বারবার এমন ঘটনার জন্ম দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। এদিকে ঈদগাঁও বাজারের দক্ষিণ দিকে তার ক্রয় কৃত জমির উপর নির্মিত ২০টি সেমিপাকা দোকান ও ১০টি সেমিপাকা গৃহ জোরপূর্বক দখল করার হুমকি দিলে ভুক্তভোগী মঞ্জুরুল অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত, কক্সবাজারে এম আর মামলা (৪৯৬/২০২১) দায়ের করেন। এতে মুজিব ছাড়াও মরহুম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর স্ত্রী মোরশেদা আক্তার এবং পুত্র এসএম মোস্তফা সরোয়ার সাদেককে আসামি করা হয়েছে। মামলার প্রেক্ষিতে আদালত কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে সরেজমিন তদন্ত পূর্বক মতামত সহ রিপোর্ট দেয়ার আদেশ দেন। একই সাথে বিরোধীয় জায়গায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ঈদগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশনা দেন। উক্ত নির্দেশনার প্রেক্ষিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইউনিয়ন ভূমি অফিস, ঈদগাঁওকে সরেজমিন তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন প্রেরণ করতে নির্দেশনা দেন। উক্ত নির্দেশনার আলোকে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আব্দুল করিম গত ২১ অক্টোবর বিবাদমান পক্ষগুলোর প্রতি নোটিশ জারি করেন। নোটিশে ২৫ অক্টোবর বিকেলে সরেজমিন তদন্ত করা হবে বলে উল্লেখ করেন ওই কর্মকর্তা। এদিকে আদালতের নির্দেশের প্রেক্ষিতে ঈদগাঁও থানার এস, আই মোঃ জুয়েল সরকার বিবদমান পক্ষগুলোকে আদালতের নির্দেশনা মতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখাসহ দাঙ্গা-হাঙ্গামা এড়িয়ে চলার জন্য অন্য একটি নোটিশ দেন। আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা উল্লেখ করা হয় ওই নোটিশে। মনজুরুল হক চৌধুরী আরো অভিযোগ করেন জয়নাল হত্যার আসামী সহ নানা অপরাধের সাথে জড়িত তার ছোট ভাই মুজিব স্থানীয় আপোষ মীমাংসার তোয়াক্কা না করে তার ওপর একের পর এক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। অভিযোগের বিষয়ে সত্যাসত্য জানতে একদল সাংবাদিক সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অভিযুক্ত মুজিবসহ তাদের নিকট আত্মীয়দের সাথে কথা বলেন এবং সার্বিক অবস্থা প্রত্যক্ষ করেন। মুজিব জানান, একই দলিলের মালিক তিনি ও তার বড় ভাই মঞ্জুরুল হক। পৈতৃক সম্পত্তিতে তারা সমান অংশীদার। চালের উপর ছাদসহ বাড়ি নির্মাণ করছে মঞ্জুরুল হক। এতে ঘরে বৃষ্টির পানি পড়ায় তাদের বসবাস করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাকে চাঁদাবাজি ও অস্ত্র মামলায় ফাঁসানোর প্রচেষ্টা চলছে। ঈদগাঁও বাজারের সহায়-সম্পত্তি ও বড় ভাই ঠিকভাবে বন্টন না করে জোরপূর্বক দখল করে রেখেছে। বিভিন্ন সময় তাকে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। টাকার জোরে তার ভাই তাকে ওয়ারিশী সম্পত্তি থেকেও বঞ্চিত করার চেষ্টা করছে।