মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০১ পূর্বাহ্ন

স্বচ্ছ নির্বাচনের প্রত্যাশা পূরণে দরকার সব দলের সম্মতিতে নিদর্লীয় সরকার

বিশেষ প্রতিনিধি:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২১

বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী বছর। নির্বাচন কমিশনকেন্দ্রিক আলোচনা নিয়ে রাজনীতি সরব হয়ে উঠেছে। এ সরবতার মধ্যে সরকারের বাইরে থাকা দলগুলোর সক্রিয়তা লক্ষ করা যাচ্ছে। এসব দলের ঘরোয়া সমাবেশ ছাড়াও সব দলের মধ্যেই দলীয় সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির চেষ্টা দৃশ্যমান। কোনো দল করছে সিরিজ মিটিং, আবার কোনো দল নানা রকম অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজ নিজ দলীয় বক্তব্য নিয়ে নাগরিক সমাজকে রাজনীতিতে সক্রিয় করতে সচেষ্ট। সরকারি দলের নেতা-মন্ত্রীরাও থেমে নেই। প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন, বিদেশী মিত্ররাও।
বিদেশী নাগরিক হিসেবে এ নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য প্রকাশে অনীহা জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন। তবে এ নির্বাচন সংবিধান সমুন্নত রেখে স্বচ্ছভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। তার ভাষ্যমতে, নির্বাচন সম্পর্কে বাংলাদেশের সংবিধানেই পরিষ্কার বলা আছে। প্রতিযোগিতা ও সবার ভোটাধিকার প্রয়োগের স্বার্থে এ নির্বাচন প্রক্রিয়া সুষ্ঠু হওয়া উচিত।ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (ডিক্যাব) গত বুধবার আয়োজিত ‘ডিক্যাব টক’ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার। জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের আসন্ন জলবায়ুবিষয়ক সম্মেলন থেকে শুরু করে রোহিঙ্গা সংকট, দ্বিপক্ষীয় লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স চুক্তি, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উত্তরণসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি। জাতিসংঘের আসন্ন জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সম্মেলন প্রসঙ্গে ডিকসন বলেন, এ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন এড়াতে যে চারটি লক্ষ্য রয়েছে, আমার প্রত্যাশা তা অর্জনে বিশ্বনেতারা ইতিবাচক সিদ্ধান্তে পৌঁছাবেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর প্রাপ্য সহায়তা পাওয়া উচিত বলেও এ সময় তিনি মন্তব্য করেন। রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিকসন জানান, এ ইস্যুতে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের পাশে আছে। মিয়ানমারকে তাদের জনগণকে ফিরিয়ে নিতে হবে। সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারে সরকার পরিবর্তনের ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আলোচনা বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
তবে তার পরামর্শ হলো মিয়ানমারের বর্তমান সরকারের সঙ্গেও কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে যুক্তরাজ্য আশাবাদী। এ সময় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান হাইকমিশনার ডিকসন। যুক্তরাজ্যে বসে সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা চালানো কয়েক বাংলাদেশীকে ফেরত আনতে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স চুক্তি করতে চায় বাংলাদেশ। এ প্রসঙ্গে হাইকমিশনার বলেন, যুক্তরাজ্যে বসে বাংলাদেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা চালাচ্ছে কিছু বাংলাদেশী। তাদের ফেরত আনার জন্য মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স চুক্তি করতে চায় সরকার। কিন্তু সেখান থেকে কোনো ব্যক্তিকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি পুরোপুরি আদালতের ওপর নির্ভর করছে। ডিকসন বলেন, কার কার প্রত্যাবর্তন চাওয়া হয়েছে, সেই বিষয়ে কিছু বলব না। কারণ তা ঠিক হবে না। প্রত্যাবর্তন একটি আইনি প্রক্রিয়া। অনেক ব্যক্তির প্রত্যাবর্তন হয়তো দেশের জনগণ চায়, কিন্তু সেটা ব্রিটিশ সরকারের ওপর নির্ভর করে না, করে আদালতের ওপর। সরকারের ওপর নির্ভর করে আদালত রায় দেন না। এছাড়া এ ধরনের প্রত্যাবর্তনের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো বেশ শক্তভাবেই লড়াই চালিয়ে থাকে।
ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, আদালত অনেক কিছু বিবেচনা করেন। যেমন কী কী অভিযোগ আছে বা ব্যক্তিটিকে ফেরত পাঠানো হলে তার কী শাস্তি হতে পারে ইত্যাদি। কাউকে ফেরত পাঠানোর কিছু মেকানিজম আছে। যেমন মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স। নেতিবাচক প্রচারণার বিষয়ে যুক্তরাজ্যে পরিষ্কার নিয়ম আছে। কেউ যদি ঘৃণা বা উসকানিমূলক মন্তব্য করে, তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হয়। যখন কেউ রেড লাইন অতিক্রম করে এবং তা আমাদের জানানো হয়, তখন আমরা বিষয়টি তদন্ত করি।
তিনি বলেন, গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব উন্নতি করেছে এবং স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। এ উন্নতির পথ মসৃণ করার জন্য স্বল্পোন্নতের তালিকা থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরবর্তী তিন বছর পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত থাকবে। যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে গিয়েছে। ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য নীতি কী হবে, সেটি স্বাধীনভাবে বিবেচনা করার সুযোগ পেয়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য বিনিয়োগ সংলাপ হয়েছে। এইচএসবিসি, ইউনিলিভারসহ যুক্তরাজ্যের অনেক বড় কোম্পানি এখানে ব্যবসা করছে। বাজার সুবিধা পেলে আরো অনেকে ব্যবসা করতে পারে। রবার্ট ডিকসন বলেন, আগামী দশকে আমরা বাণিজ্য, নিরাপত্তা, সমুদ্র নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সম্পৃক্ত হব। বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে আমি বিভিন্ন সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করছি।
রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করেন, স্বচ্ছ নির্বাচন করতে হলে বাতিলকৃত তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃবহাল না করে ভিন্ন কোনো নামে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন করে সে সরকারের অধীনে অবাধ সংসদ নির্বাচন করা সম্ভব। এমন সরকারের নাম ‘অন্তর্র্বতীকালীন সরকার’, ‘তদারকি সরকার’, ‘নির্দলীয় সরকার’, ‘নির্বাচন দেখভালকারী সরকার’ বা অন্য কোনো কিছু হতে পারে। কাজেই স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে যারা নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে মাতামাতি করছেন, তাদের ভুলে গেলে হবে না, ইসি যতই ভালো বা শক্তিশালী হোক না কেন, সরকার ও সংসদ না ভেঙে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। সব দলের সম্মতিতে গঠিত স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য নিদর্লীয় সরকারের বিকল্প নেই।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com