বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৭:০৭ পূর্বাহ্ন

দুর্গাপুরে সোমেশ্বরী নদীতে পাথর কুড়িয়ে চলে তাদের জীবন

তোবারক হোসেন খোকন দুর্গাপুর (নেত্রকোনা)
  • আপডেট সময় রবিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২১

সকাল থেকেই সোমেশ্বরী নদীর পানিতে নেমে চলে পাথর সংগ্রহের কাজ। নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার সোমেশ্বরী নদীর স্বচ্ছ পানিতে নেমে পাথর সংগ্রহ করে চলে ওই এলাকার কিছু মানুষের জীবন। হয়তো এটাই কারো কারো জীবনের প্রধান জীবিকা। ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত এভাবে পাথর কুড়িয়ে বিক্রি করে ঘোরে তাদের সংসারের চাকা। যেনো পাথর কুড়ানোটাই তাদের জীবন। রোববার সোমেশ্বরী নদীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমনটাই দেখা গেছে। প্রতিদিন ভোরে সূয্যিমামা উঁকি দেওয়ার আগে ২৫-৩০ ফুট লম্বা নৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন পাথর কুড়ানো মানুষগুলো। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অবস্থিত ওই নদী থেকে ডুব দিয়ে পাথর তুলে তা নৌকায় করে তীরে আনা হয়। পরে সে গুলো ধৌত করে বিক্রি করা হয় স্থানীয় পাথর ক্রয়ের বিভিন্ন ব্যবসায়িদের কাছে। প্রতি ছোট নৌকা পাথর বিক্রি হয় দুই হাজার টাকা থেকে তিন হাজার টাকা দরে। পাথর কুড়িয়ে তাদের দৈনিক আয় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এ টাকা দিয়েই চলে সংসার। ছেলে-মেয়ের পড়াশোনাসহ আনুষঙ্গিক খরচ। দিনভর পাথর সংগ্রহ আর বোঝাইয়ের পরও তাদের চোখে-মুখে কোনো ক্লান্তির ছাপ নেই। পাথর কুড়ানো শ্রমিক হাফিজুর রহমানের(২৬) বলেন, নদী থেকে ছোট-বড় পাথর সংগ্রহ করে নৌকায় ভরে মহাজনের কাছে বিক্রি করা হয়। বিভিন্ন সাইজের পাথর নৌকায় করে বিক্রি করলে দামের কিছুটা তারতম্য হয়ে থাকে। মাঝে মধ্যে মহাজনরাও ঠকিয়ে দেয় আমাদের। কখনও দুই হাজার টাকা দরে আবার কোনো এক সময়ে এক হাজার বা ১২০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। সারাবছর এ কাজই করি আমরা। অত্র এলাকায় ঘুরতে আসা পর্যটক জাহিদুল ইসলাম বলেন, নৌকায় করে ঘুরে বেড়ানোর সময় আশপাশের শ্রমজীবীদের যেসব কর্মকান্ড চোখে পড়ে, পুরোটাই পাথরকে ঘিরে। নৌকাভ্রমণ শেষে ফিরে যাচ্ছে পর্যটকের দল। পর্যটক দলে থাকা এক শিশুর কথায় কানটা খাড়া হয়ে গেল। নাম না জানা শিশুটি তার বাবার কাছে প্রশ্ন করল, ‘বাবা, এখানে যারা কাজ করছে, তারা কি সবাই স্টোনম্যান?’ আসলেই এসব শ্রমজীবী মানুষের জীবন পাথরকে ঘিরে। পাথরের মাঝেই লুকিয়ে আছে ওদের স্বপ্ন। সকালে উঠে পাথর তোলার কাজ শুরু, এখানেই গোসল-খাওয়া-বিশ্রাম, সন্ধ্যায় কাজ শেষে আবার ছোট কুড়ো ঘরে ফিরে যাওয়া। হোসেন, করিম, লোকমান সহ এখানকার শ্রমজীবীদের কাছে জীবন মানেই পাথর। যত বেশি পাথর তুলতে পারবেন, তত বেশি টাকা, আর একটু ভালো থাকার সম্ভাবনা। নিজেরা তেমন পড়াশোনা করতে পারেনি, এই কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে পড়াশোনা করাচ্ছেন তাদের সন্তানদের। হয়তো তারা একদিন বড় হবে, ঘুঁচাবে তাদের দুঃখ, একটু ভালোমন্দ খেতে পারবে এমন স্বপ্নই দেখছেন প্রতিনিয়ত।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com