সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:৫২ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
উলিপুরে তিস্তা নদীর চরে সবুজের সমারেহ দাগনভূঞা ভূমি ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে চেক বিতরণ খুলনায় মাসব্যাপী একুশে বই মেলা শুরু শেখ হাসিনাকে দেশে এনে গণহত্যার বিচার করা ছাড়া বিএনপি ঘরে ফিরবে না-মামুনুর রশীদ মামুন শাহ এমদাদীয়া অটোমোবাইল ড্রাইভিং ট্রেনিং স্কুলের সনদ বিতরণ গৌরীপুরে ডা. মুকতাদির চক্ষু হাসপাতালে স্মৃতি জাদুঘর উদ্বোধন দুপচাঁচিয়ায় কিশোর ব্যাটমিন্টনে চ্যাম্পিয়ান সজিদ-সীমান্ত ধনবাড়ীতে ব্রোকলি চাষে সাফল্য, আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের জনগণের সেবা নিশ্চিতে নিরলসভাবে কাজ করা একজন ইউএনও “রানীরবন্দরের ইতিহাস” গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন ও দিনব্যাপী সাহিত্য আড্ডা-কবি ও বিশিষ্ট লেখক লুৎফর রহমানের

হারিয়ে যাচ্ছে নদীর ভাসমান ধান-চালের হাট

শামীম আহমেদ বরিশাল প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময় রবিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২১

বরিশাল জেলার বানারীপাড়ায় বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদীর ভাসমান ধান-চালের হাট। এক সময় এ হাটের বিস্তৃতি বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীর মাঝখানে চলে যেত। ক্রেতা এবং ব্যবসায়ীরা নদীর তীর থেকে এক নৌকা থেকে অন্য নৌকায় চড়ে নদীর মাঝে পৌছে যেতো। নদীর পূর্ব পাড়ে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ধান-চাল বেচা কেনায় ব্যস্ত থাকতেন ব্যবসায়ীরা। আর দুপুরের পর পশ্চিম পাড়ে নাজিরপুর বরাবর নদীতে ভাসমান নৌকায় বসতো ধান বিক্রির হাট। বানারীপাড়ায় এখন পূর্বের মতো ধান নিয়ে নৌকার সারি আর কার্গো বা লঞ্চে চাল বোঝাই করতে দেখা যায় না। দিন রাত মিল বাড়ীর ঘরের রাইস মিলের শব্দ এখন আর শোনা যায় না। ধান-চালের ব্যবসায় কুটিয়ালদের ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। বানারীপাড়ার বন্দরের উত্তর পারে শতাধিক আড়তের মধ্যে এখন চালু রয়েছে হাতে গোনা কয়েকটি। এ কারণে সন্ধ্যা নদীতে ভাসমান ধান-চালের হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা নেই বললেই চলে। এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না সেই ঐতিহ্যবাহী মলঙ্গার বালাম, কাজলা চাল। একসময় বানারীপাড়ার বালাম চাল বঙ্গবন্ধুর খুব প্রিয় ছিল। ওই সময় জোরালো কন্ঠে নিজের পরিচয় সরদার, হাওলাদারের বা মৃধার গদির বেপারী বলে। কুটিয়াল, শ্রমিক, কয়ালদের পদচারনায় উত্তরপাড় বাজার বন্দর রাত-দিন জমজমাট থাকত। সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার মূল হাট এবং রবি ও বুধবার গালার হাট বসত। বাকি তিন দিন চাল ওঠানো আর দেশের বিভিন্ন মোকামে পাঠানোর কাজে ব্যস্ত থাকতো ব্যবসায়ীরা। ধান-চালের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উপজেলার শত শত মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন। স্থানীয়রা জানান, অনেকে এলাকা ছেড়ে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন উপজেলায় গিয়ে কুটিয়াল ব্যবসা করছেন। অনেক কুটিয়াল ঢাকার বুড়িগঙ্গায় খেয়া পারা পারের কাজ করছেন। ধান-চালের পুরনো আড়ৎদার আঃ রশিদ সরদার ও আঃ সত্তার জানান, দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুরের বিভিন্ন উপজেলা থেকে ধান কিনে বানারীপাড়ায় এনে বিক্রি করতেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ এক ধরণের নৌকায় করে নিয়ে আসা ধান বানারীপাড়া, স্বরূপকাঠি ও মীরের হাটে বিক্রি করতো। সে ধান কিনে কুটিয়ালরা সিদ্ধ-শুকনা করে ডিজেল রাইস মিলে ছাঁটাই করে চাল তৈরি করতেন। অন্যদিকে, বানারীপাড়ায় প্রাকৃতিক ভাবে চাষ করা ফসল ধান, পরিমাণ মতো সিদ্ধ-শুকনা করে ঢেকি ছাঁটার মতো স্থানীয় মিলে বাজারজাত করতেন ব্যবসায়ীরা। আড়ৎদার আঃ গাফফার সরদার জানান, ধান কেনা থেকে শুরু করে বেপারী, মাঝি-মাল্লা, কয়াল (ওজনকারী) শ্রমিকরা সিদ্ধ, শুকনা করার জন্য নারী শ্রমিক দ্বারা মিলে চাল ঝাড়ুনির কাজ করতেন। এরপর কুটিয়াল তার কোষা নৌকার মধ্যে ডোলায় ১৫ থেকে ২০ মন চাল বোঝাই করে হাটে বা গালায় নিয়ে যেতো। খেজুরবাড়ির কুটিয়াল আনিস ফকির এবং দিদিরের আব্দুল হক জানান, তারা সবাই কুটিয়াল ব্যবসায়ের সাথে জড়িত। এহন আগের হেই জৌলাস (জৌলুস) নাই। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম সালেহ মঞ্জু মোল্লা জানান, বানারীপাড়ার ধান-চালের পুরনো ঐতিহ্যবাহী ব্যবসাকে ফিরিয়ে আনতে হলে দরকার প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠ পোষকতার। তিনি জানান , বঙ্গবন্ধুর প্রিয় বালাম চালের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে ধান গবেষণা কেন্দ্র বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়া বানারীপাড়ায় যেনো একটি ধান গবেষণা কেন্দ্র গড়ে ওঠে। ধান গবেষণা কেন্দ্র হলে বিশেষ ভূমিকায় হয়তো পুরনো ঐতিহ্য ধরে রাখা সম্ভব, আমি আশাবাদী। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রিপন কুমার সাহা বলেন, বানারীপাড়ার ধান চালের হাট একটি ঐতিহ্যবাহী বাজার ছিল। বানারীপাড়ার প্রসিদ্ধ মোকাম ধান-চালের হাট অব্যবস্থাপনার কারণে হয়তো বিলুপ্তির পথে, তবে ব্যবসায়ীরা এলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যা কিছু প্রয়োজন সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com