চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে স্বপ্নের মনাই ত্রিপুরা পল্লীতে যোগাযোগের একমাত্র রাস্তা, ব্রিজ ভেঙ্গে তছনছ করছে গাছ খেকোরা। নির্বিচারে কাটছে সরকারি গাছ, ভাঙ্গছে রাস্তা। দুর্ভোগ পোহাচ্ছে ত্রিপুরা পল্লী আদিবাসীরা। বন উজাড় করে গাড়ি চলাচলের রাস্তা তৈরি করছেন উপজেলার ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের তিন নং মেম্বার ইমরান চৌধুরীর চাচা মান্নান চৌধুরী, ভাই সেলিম চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন ও বদিউল আলম। এলাকাটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ভূমি অফিস ও বন বিটের অধীনে। জরাজীর্ণ পাহাড়ি এলাকাটি ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ স্লোগানটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে হাটহাজারী উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন মনাই ত্রিপুরা আদিবাসিদের পূর্ণবাসন করেছিলেন। তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য তৈরি করেন ব্রিজ কালভার্ট ও রাস্তা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ত্রিপুরা পল্লীতে প্রতিদিন চাঁদ্দের গাড়ি করে হাটহাজারী রেঞ্জ ফরেস্ট বিট কার্যালয়ের সামনে দিয়ে এসব গাছ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বন বিভাগ কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। সরেজমিনে দেখা গেছে, মনাই ত্রিপুরা পল্লীর পাহাড়ের গাঁ ঘেঁষে ভেতর থেকে কাটা গাছ পরিবহন করতে রাস্তা করা হয়েছে। এই রাস্তা তৈরি করতে কাটা হচ্ছিল শত শত গাছ ও পাহাড়ি লতা-গুল্মের ঝোপঝাড়। রাস্তার আশপাশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে গাছের টুকরো। কাটা পাহাড়ের শেষ মাথায় হাজারো গাছ কেটে ন্যাড়া করে করে ফেলা হয়েছে। দিন-রাত পাহাড়ের গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছেন ওই এলাকার প্রভাবশালী নেতা মান্নান চৌধুরী, সেলিম চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন ও বদিউল আলম। বন বিভাগ কিছু করছে না। জানতে চাইলে মান্নান চৌধুরী বলেন, ‘এটি তো আমার নিজের বাগান। এক ব্যক্তির কাছ থেকে মালিকানা কিনে নিয়েছি। তাই গাছ কাটতেছি। এবং রাস্তাও আমাদের জায়গায়। রাস্তা করার জন্য আমরা জায়গা দিয়েছি। ওই ওয়ার্ডের মেম্বার ইমরান চৌধুরী বলেন, রাস্তাটি সরকারি জায়গায় কথাটি ঠিক নয়। এটা আমাদের ব্যক্তিগত জায়গা। ব্রিজ ও কালভার্ট সরকার তৈরি করেনি। ফার্মের মালিকরা করেছে। হাটহাজারী রেঞ্জ বিট কর্মকর্তা ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, ‘গাছ কাটতে কেউ আমাদের অনুমতি নেয়নি।’ ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের পশ্চিমে মনাই ত্রিপুরা পল্লীর পাশে সরকারি কিছু খাস জায়গা রয়েছে। এটা দেখভালের দায়িত্ব উপজেলা ভূমি অফিসের, আমাদের নয়। হ্যাঁ তবে ভূমি অফিস যদি চাই আমরা সহযোগিতা করতে পারি। বনবিভাগের জায়গা রয়েছে আরো পশ্চিমে পাহাড়ি এলাকায়। বনবিভাগের গাছ যারা অবৈধভাবে কর্তন করছে ইতিমধ্যে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এ বিষয়ে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিদুল আলম বলেন, মনাই ত্রিপুরা পল্লী এলাকাটি সরকার উন্নয়ন করেছে। এটা খুবই একটি সেনসিটিভ বিষয়। যারা রাস্তা ভেঙ্গে নষ্ট করেছে এবং বনবিভাগ ও সরকারি গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।