লালমনিরহাটের পাটগ্রামে শ্রীরামপুর ইউনিয়নে কয়েকটি ভূমিহীন পরিবারকে খাস জমি থেকে উচ্ছেদ করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গত রোববার বেলা সাড়ে ১২ টায় ওই ইউনিয়নের ঝালঙ্গী গ্রামে নিজ বসতবাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে প্রকৃত ভুমিহীন পরিবারের মাঝে খাস জমি বন্দোবস্তর দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। ভূমিহীন খোরশেদ আলীর মেয়ে সাহেরা খাতুন(৩০) অভিযোগ করে বলেন ঝালঙ্গী মৌজার জেএল নং-০১, এসএ খতিয়ান নং-১৭১, বিআরএস খতিয়ান নং-৬১ অনুযায়ী ১১ দশমিক ৩৭ একর জমির এসএ মালিক বানীকান্ত নিয়োগী গং সপরিবারে নিরুদ্দেশ থাকায় এসএ অ্যান্ড অ্যাক্টের ৯২ (ক) ধারা মোতাবেক সরকার জমি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ০১/৯৫-৯৬ মিস কেসের আওতায় ২২ জন ভূমিহীন পরিবারকে প্রথমে একসনা মেয়াদে লিজ প্রদান করেন। বর্তমানে ওই জমিতে ১২ ঘর ভুমিহীন পরিবার ভোগ দখল করে বসবাস করে আসছে। এর মধ্যে ভূমিহীন ৫ পরিবার দীর্ঘ ৩১ বছর থেকে ওই জমিতে পরিবার নিয়ে বসবাস করে কবুলিয়তের জন্য উপজেলা ভূমি কার্যালয়ে একাধিকবার আবেদন করা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে পাঁচ পরিবারের আবেদনপত্র গুলো গায়েব হয়ে যায়। উপায়ন্তর না পেয়ে ওই পাঁচ ভুমিহীন পরিবার একই এলাকার নিজাম উদ্দিনের ছেলে ছক্কর আলীকে সরল বিশ্বাসে ওই খাস জমির কবুলিয়ত দলিল তাদের নামে করে দিতে উপজেলা ভূমি অফিসে যোগাযোগ করার দায়িত্ব দেন। সুযোগ পেয়ে এলাকার প্রভাবশালী চতুর ছক্কর আলী জমির বন্দোবস্ত করে দেয়ার কথা বলে ওই পাঁচ পরিবারের নিকট বিভিন্ন সময়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন। এক পয্যায়ে ছক্কর আলী তাদের নামে কবুলিয়তের ব্যবস্থা না করে কতিপয় ভূমি কর্মকর্তার যোগসাজসে টাকার বিনিময়ে ছক্কর আলীর মা কালীগঞ্জ উপজেলার চাপারহাটের আয়শা বেগম, শ্রীরামপুর ইউনিয়নের বেলেরবাড়ি গ্রামের ভাস্তি জামাই আব্দুর রশিদ, ভগ্নিপতি সুরুজ, ভাগিনা তোতাকে ভুমিহীন দেখিয়ে গোপনে ২০১৮ সালে প্রত্যেকের নামে ৫০ শতক করে জমির কবুলিয়ত দলিল করে নেয়। এভাবে ছক্কর আলী গং প্রায় ৭ একর জমির কবুলিয়ত দলিল করে নেন। এদিকে ছক্কর আলী ওই পাঁচ পরিবারকে বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ এবং ফসলী জমি দখল করার জন্য বিভিন্ন ভাবে তাদের হয়রানী করা হচ্ছে। এমনকি আদালতে হয়রানি মূলক মামলা দেয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয় তাদের ভোগ দখলীয় জমি ছক্কর আলী গং গোপনে কবুলিয়ত করে নেয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে তারা লালমনিরহাট অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নিকট কবুলিয়ত বাতিলের আবেদন করেন। ওই আবেদনপত্রে লালমনিরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য জনাব মোতাহার হোসেন এমপি সুপারিশও করেন। এমনকি ওই খাস জমিতে বসবাসরত খোরশেদ আলী, বিল্লাল হোসেন, আবুল কাশেম, আজিজুল ইসলাম, আলম হোসেন লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের নিকট বিস্তারিত ঘটনা তুলে ধরেন। ভুক্তভোগীরা দাবি করেন ছক্কর আলী ও তাঁর দলবল তাদের বসতবাড়ি, ধান খেত দখলে নিতে তাদের প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে। এ ব্যাপারে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এ বিষয়ে ছক্কর আলীর নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি তার আত্মীয়-স্বজনের নামে জমি কবুলিয়তের সত্যতা স্বীকার করে দম্ভ করে বলেন, ওই পাঁচ পরিবার সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। সরকার আমাদেরকে পক্ষভুক্ত করেছে। আমরা সরকারের পক্ষে থেকে মামলা চালাইছি। এজন্য সরকার আমাদেরকে জমি কবুলিয়ত করে দিয়েছে। পাটগ্রাম উপজেলা সহকারী (ভুমি) কমিশনার আল ইমরান বলেন যে যেখানে বসবাস করতেছেন তাকে সেখানে বন্দোবস্ত দেয়া হবে। তবে যাদের নামে ইতিপূর্বে কবুলিয়ত করে দেয়া হয়েছে এটা তাদের কিভাবে বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হবে।