ডিজেল-কেরোসিনের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বাস চলানো বন্ধ রাখায় গত দুইদিন ধরে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। ৪৮ ঘন্টা পরিবহণ ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে সিলেটের বিভিন্ন সড়কে বাস না পেয়ে সড়কে অসহায় অবস্থায় মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির ডাকা এ ধর্মঘটে শুধু সিএনজিচালিত অটোরিকশা ছাড়া বন্ধ আছে সব ধরনের গণপরিবহন। ট্রেন তার স্বাভাবিক নিয়মে চললেও আগেই শেষ হয়ে যায় ট্রেনের টিকিট। তাছাড়া শনিবার সকালের দিকে বিআরটিসির বাস চলাচল শুরু করলেও পরিবহণ শ্রমিকদের চাপের মুখে তা নিয়মিত করতে পারেনি। এমন বাস্তবতায় বড় ধরণের ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ যাত্রীরা। সকালে সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায় শহর থেকে নিজে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য বের হওয়া যাত্রী সাধারণের ভিড়। শত শত যাত্রী দাঁড়িয়ে আছেন তবে কোনো বাস নেই। অনেকই অপেক্ষা করছেন বাস কিংবা অন্যান্য পরিবহণের। তবে কোন বাস না পেয়ে পার্শ্ববর্তী গন্তব্যের যাত্রীরা পিকআপ, মোটরসাইকেল কিংবা কাউকে হেঁটেই রওয়ানা হতে দেখা যায়। আবার অনেকে মোটরসাইকেল বা অটোরিকশায় করে তিনগুন ভাড়া দিয়ে তাদের গন্তব্যে পৌঁছান। এছাড়া দীর্ঘসময় বাসের অপেক্ষায় থেকে অনেকে ফিরে আসেন। এসময় ভুক্তভোগী যাত্রীরা ছুটির দিনে ডাকা এমন ধর্মঘটের নিন্দা জানান এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সিলেটের গোয়ালাবাজারের একটি অফিসে চাকরি করেন ফয়ছল আহমদ। তিনি বলেন, ‘অফিস খোলা যেভাবেই হোক অফিসে যেতে হবে। সিএনজি অটোরিকশায় ৫০০ টাকা চাইছে, ভাড়া ২০০ টাকাও না। বাস ধর্মঘট এদের ঈদ নামিয়ে দিয়েছে।’ সিলেটের কদমতলীর ফল মার্কেটের বিক্রয়কর্মী আশিক মিয়া। তিনি বলেন, ‘অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়াইয়া আছি। বাস ধর্মঘট কিন্তু অফিস-মার্কেট সবই তো খোলা। মানুষের কষ্টের শেষ নাই। ঝুঁকি নিয়া কয়েকবার পিকআপে ওঠার চেষ্টা করছি, পারি নাই। বাড়িতে কেমনে যামু জানি না।’ জিন্দাবাজারের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আরমান সাদিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কেউ চাইলো আর বাস বন্ধ করে বসে থাকল। এটা কোনো কথা? এ দেশে কি সরকার বা কোন নিয়ম-কানুন আছে? থাকলে হয়তো এভাবে অরাজকতা হতো না। এত মানুষের ভোগান্তি কেউ দেখছে না!’ ধর্মঘটের ব্যাপারে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. জিয়াউল কবির পলাশ জানান- তাদের দাবী একটাই। হয়তো ভাড়া বাড়বে অথবা ডিজেলের দাম কমবে। দাবী মানা না হলে ধর্মঘট চলবে। তিনি বলেন- হঠাৎ করে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশের পরিবহন খাতে নতুন সংকটের সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। জ্বালানী তেলের দাম বাড়লে গাড়ী ভাড়াসহ পরিবহন খরচ বাড়বে। এর প্রভাব সকল স্তরে পড়বে। তাই সরকারকে জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পরিহার করতে হবে। তিনি আরো বলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ডিজেলের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার করা না হলে পরর্বতীত করণীয় সম্পর্কে আগামীকাল রোববার সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় পর্যায়ে মিটিং হবে। তাতে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তা সিলেটে বাস্তবায়ন করবে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। তাই কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এর আগে বৃহস্পতিবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে শুক্রবার সকাল থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস ও ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা। যাত্রী পরিবহণ সংগঠনগুলোর নেতারা তাদের অনানুষ্ঠানিক এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। এদিকে গণপরিবহনের পাশাপাশি সিলেটের বিভিন্ন ব্রিজে ‘অতিরিক্ত টোল আদায়’ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ট্যাংকলরি প্রাইম মুভার মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের উদ্যোগে শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে পণ্যপরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। ফলে সিলেটে কোনো ট্রাক চলাচল করছে না। পণ্যপরিবহন ধর্মঘটের সমর্থনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। তবে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সকাল থেকে দক্ষিণ সুরমা কদমতলী বাস টার্মিনালসহ আশপাশ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।