ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে শনিবার থেকে (১৬ মে) থেকে শুরু হচ্ছে প্লাজমা থেরাপি। একই সঙ্গে ভবন-২ এ শুরু হচ্ছে করোনা রোগীদের চিকিৎসা। আর এই প্লাজমা থেরাপি ঠিকঠাক কার্যকর হলে উন্নত দেশগুলোর মতো দেশের করোনা রোগীদের চিকিৎসায় এটি হবে নতুন দিগন্ত। এমনটা মনে করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
জানা গেছে, আপতত এখানে ভর্তি থাকা রোগীদেরকেই এ থেরাপি দেয়া হবে। পরে কুর্মিটোলা বা কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল আগ্রহী হলে সেখানেও এ থেরাপি দেয়া হবে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশে প্লাজমা থেরাপির মাধ্যমে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
চিকিৎসকরা মনে করছেন, ভাইরাস আক্রান্ত কোনো রোগী সুস্থ হওয়ার পর তার দেহে তৈরি হয় ওই ভাইরাসেরই অ্যান্টিবডি। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটে। এজন্য প্লাজমা থেরাপির এই উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ। দাতা হিসেবে এগিয়ে এসেছেন তিনজন স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসক।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান ও প্লাজমা থেরাপি সাব-কমিটির প্রধান প্রফেসর ডাক্তার এম এ খান গণমাধ্যমকে বলেন, বিশ্বের কয়েকটি দেশ করোনা আক্রান্তদের এই প্লাজমা থেরাপি চিকিৎসা দিয়ে ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ সফলতা পেয়েছে। চীনে ১০ জন করোনা রোগীর উপর এই প্লাজমার থেরাপি চিকিৎসা দেয়া হয়। এদের মধ্যে তিনজন রোগী ভেন্টিলেটরে ছিলেন। চিকিৎসকদের স্ট্যাডি থেকে জানা যায়, ওই থেরাপির কারণে সবাই সুস্থ হন।
এছাড়াও আমেরিকার একটি হাসপাতালের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তারা ২৩ জন করোনা রোগীকে প্লাজমা থেরাপি চিকিৎসা দিয়েছে। তাদের মধ্যে ২১ জনই সুস্থ হয়েছেন।
এর পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, করোনা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ রোগীর শরীর থেকে হলুদ রঙের প্লাজমা সংগ্রহ করা হবে। সেক্ষেত্রে করোনা থেকে যেসব ব্যক্তি সুস্থ হচ্ছেন তাদের এগিয়ে আসতে হবে। সারা বিশ্বে এই চিকিৎসায় সুস্থতার হার বেশি হওয়ায় বাংলাদেশের চিকিৎসকরাও প্লাজমা থেরাপিতে আশার আলো দেখছেন।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই সুস্থ হয়েছেন। ওইসব ব্যক্তির শরীরে এন্টিবডি তৈরি হয়েছে। তাদের কাছ থেকে মেশিনের মাধ্যমে হলুদ রঙের প্লাজমা সংগ্রহ করা হবে। বাকি রক্তগুলো ওই মেশিন মাধ্যমে প্লাজমাদাতার শরীরে চলে যাবে। এতে প্লাজমা দাতাদের কোনো সমস্যা হবে না। এসব প্লাজমাদাতাদের করোনা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম মেনে আনুমানিক চারশ থেকে ছয়শো এমএল প্লাজমা সংগ্রহ করা হবে।
তিনি আরো বলেন, শনিবার দুই থেকে তিনজনের কাছ থেকে প্লাজমা সংগ্রহ করা হবে। পরে আরো কয়েকজনের কাছ থেকেও সংগ্রহ করার কথা রয়েছে। পরে প্লাজমা পরীক্ষা করে দেখা হবে এন্টিবডি কতটুকু আছে। তারপর করোনা রোগীদের প্লাজমা থেরাপি চিকিৎসা শুরু করা হবে।
ঢামেক (নতুন ভবন) ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগে করোনাজয়ী ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্লাজমা সংগ্রহ করা হবে বলেও জানান তিনি।
এমআর/প্রিন্স