সোমবার, ২৭ মে ২০২৪, ০৪:৪৩ অপরাহ্ন

প্রসঙ্গ:  ব্যবসায় সুদ বর্জন ও জাকাত

ড. ইকবাল কবীর মোহন:
  • আপডেট সময় রবিবার, ৭ নভেম্বর, ২০২১

ব্যবসায় সুদ বর্জন : ব্যবসায়-বাণিজ্যের মাধ্যমে মুনাফা অর্জিত হয়। এতে সম্পদ বা মূলধনের বৃদ্ধি পায়। এই বৃদ্ধি ইসলামে উৎসাহিত করা হলেও সুদের ভিত্তিতে মূলধনের বৃদ্ধি হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। তাই ইসলামে সুদ বর্জনের আহ্বান জানানো হয়েছে। কুরআন-সুন্নাহতে কঠোর ভাষায় সুদ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর মানুষের ধন-সম্পদের মধ্যে বৃদ্ধি পাবে বলে তোমরা সুদের ভিত্তিতে যা প্রদান করে থাক, তা আল্লাহর নিকট বৃদ্ধি পায় না। আর আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যে জাকাত (দান-সদকা) তোমরা দিয়ে থাকো (তা-ই বৃদ্ধি পায়) এবং তারাই সমৃদ্ধিশালী।’ (সূরা রুম : ৩৯) আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা ব্যবসায়-বাণিজ্যকে বৈধ করেছেন আর সুদকে করেছেন নিষিদ্ধ।’ (সূরা বাকারা : ২৭৫) সুদের ভয়ানক পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সা: বলেছেন, ‘সুদদাতা, সুদগ্রহীতা, সুদের দলিল লেখক, হিসাবরক্ষক ও এর সাক্ষীদের ওপর অভিসম্পাত।’ (সহিহ মুসলিম, বুখারি, তিরমিজি, আবু দাউদ) অন্য এক হাদিসে রাসূল সা: বলেন, ‘সুদখোর জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না’। (মুসতাদরিক হাকিম)
ব্যবসায় পণ্যের জাকাত আদায় করা : উত্তম ও সৎ ব্যবসায়ীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সে তার সম্পদের ওপর নির্ধারিত জাকাত আদায় করে। যারা জাকাত আদায় করে না তাদেরকে কঠিন পরিণাম ভোগের হুঁশিয়ারি দিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যারা সোনা ও রুপা সঞ্চয় করে রাখে এবং তা হতে আল্লাহর পথে ব্যয় করে না তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দিন।’ (সূরা তাওবা : ৩৪) সৎ ব্যবসায়ীরা জাকাত ছাড়াও তার সম্পদ থেকে কিছু দান-সাদাকাহ করে। দান-সাদাকাহ জীবনের গুনাহের মার্জনাকারী হয়। এ বিষয়ে রাসূল করিম সা: বলেছেন, ‘হে ব্যবসায়ী স¤প্রদায়! লেনেদেনের সময় শয়তান ও গুনাহ এসে উপস্থিত হয়। অতএব তোমরা ব্যবসায়ের সাথে দান-সাদাকাহ যুক্ত করো।’(তিরমিজি-১১২৯) রাসূলুল্লাহ সা: অন্যত্র বলেছেন, ‘হে ব্যবসায়ী স¤প্রদায়! কেনাবেচার সময় শপথ ও বেহুদা কথাবার্তা হয়ে যায়, তাই কিছু দান-খয়রাত করে তা ধুয়ে পরিচ্ছন্ন করে নাও।’
মজুতদারি নিষিদ্ধ : ইসলামে বাজারব্যবস্থা উন্মুক্ত এবং তা চাহিদা ও জোগান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু কোনো অসৎ ব্যবসায়ী যদি মজুতদারিতে লিপ্ত হয় এবং কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে তা হলে গ্রাহকের সমস্যা তৈরি হয় এবং ক্রেতা জুলুমের শিকার হয়। তাই ইসলাম মজুতদারি, খাদ্যদ্রব্য বাজার থেকে তুলে নিয়ে দাম বাড়ানো এবং অধিক মুনাফার প্রত্যাশা করাকে অবৈধ করেছে। কেননা, এ ধরনের কাজ মানুষের দুঃখ-কষ্ট বাড়িয়ে দেয়। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে ব্যবসায়ী পণ্য আবদ্ধ ও স্তূপ করে সে গুনাহগার।’ (সহিহ মুসলিম-১৬০৫) তিনি আরো বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পণ্য গুদামজাত করে সে পাপী’। (সহিহ মুসলিম-৪২০৭)
হারাম খাওয়ার পরিণতি : ইসলামী শরিয়তে যা নিষেধ, যা করলে পরকালে জাহান্নামের আজাবের ঘোষণা রয়েছে; এমনকি যার কারণে অনেক সময় দুনিয়াতেও দ- ভোগ করতে হয় তা-ই হলো হারাম। হারাম মানেই ঘৃণিত, পরিত্যাজ্য। ইসলাম যাকে হারাম বলেছে তা সর্বদা পরিহার করে চলা সব মুমিনের কর্তব্য। হারাম ব্যবসায়, হারাম লেনদেন, হারাম খাদ্য, হারাম পোশাক, হারাম বিনোদন বর্জন করে চলতে হবে। কারণ মানবতার জন্য যা কিছু কল্যাণকর তা আল্লাহ তায়ালা হালাল করে দিয়েছেন। সুতরাং হারামের মধ্যে কোনো কল্যাণ বা সুফল নেই। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, এক ব্যক্তি দীর্ঘ সফরে থাকা অবস্থায় এলোমেলো চুল ও ধূলিধূসরিত দেহ নিয়ে আকাশের দিকে হাত তুলে ‘ইয়া রব, ইয়া রব’ দোয়া করে, অথচ সে যা খায় তা হারাম, যা পান করে তা হারাম, যা পরিধান করে তা হারাম এবং হারামের দ্বারাই সে পুষ্টি অর্জন করে। তার দোয়া কিভাবে কবুল হবে?’ (সহিহ মুসলিম-২৩৯৩)। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে শরীর হারাম খেয়ে হৃষ্টপুষ্ট হয়েছে তা জান্নাতে যাবে না। বরং হারাম দ্বারা গঠিত গোশত বা ব্যক্তির জন্য জাহান্নামই হলো উত্তম ঠিকানা।’ (মুসনাদে আহমাদ, বায়হাকি) রাসূলুল্লাহ সা: আরো বলেন, ‘কিয়ামতের দিন কিছু লোক পাহাড় সমান সৎ আমল নিয়ে উপস্থিত হবে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা সাথে সাথেই ধূলিকণার মতো বানিয়ে উড়িয়ে দেবেন। জিজ্ঞেস করা হলো, হে রাসূল, এটি কিভাবে সম্ভব? রাসূল সা: বললেন, ‘এই লোকগুলো নামাজ পড়ত, রোজা রাখত, জাকাত দিত ও হজ করত। কিন্তু যখনই কোনো হারামের সংস্পর্শে আসত, ওমনি তাতে লিপ্ত হয়ে পড়ত। তাই আল্লাহ তাদের নেক আমল বাতিল করে দিয়েছেন।’ (তাবরানি)
অতএব, ব্যবসায়-বাণিজ্যে আমাদের অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে, যা কিছু বৈধ বা হালাল তা-ই আমাদের মেনে চলতে হবে। হারাম বা দোষণীয় সব কিছু বর্জন করতে হবে। ব্যবসায় সততা বজায় রাখার পুরস্কার হলো জান্নাত আর অসততার পরিণাম হলো জাহান্নাম। আল্লাহ তায়ালা জান্নাতের পথে সবাইকে পরিচালিত হওয়ার সুযোগ দিন। আমিন। লেখক : প্রাবন্ধিক, গবেষক ও শিশুসাহিত্যিক। সাবেক ডিএমডি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। বর্তমানে কো-অর্ডিনেটর, স্ট্যান্ডার্ড (ইসলামী) ব্যাংক লিমিটেড।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com