শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:২৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
জব্দ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর রিট আরেক হত্যা মামলায় সাবেক বিচারপতি মানিককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে মানহানির মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান উৎপাদনে ফিরলো কর্ণফুলী পেপার মিল ২০৫০ সালের মধ্যে ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণে দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, দলবল নিয়ে ঘুরছেন পার্কে পিআইবির নতুন ডিজি ফারুক ওয়াসিফ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আবদুল্লাহ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পোশাক শিল্প আইন আপনার হাতে তুলে নেয়ার কারো কোনো অধিকার নেই :স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বললেন মির্জা ফখরুল

সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার হার কমছে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ৭ নভেম্বর, ২০২১

বিদায়ী (২০২০-২১) অর্থবছরের মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু অর্থবছর শেষে প্রকৃতপক্ষে এ খাত থেকে ঋণ নেয়া হয় ৪১ হাজার ৯৫৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। যা সংশোধিত বাজেটে এ লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৩০ হাজার ৩০২ কোটি টাকা করা হয়। চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার হার কমতে থাকে। অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এ সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়া হয়েছে ৮ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা, যেখানে আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১১ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা। তিন মাসে এ খাত থেকে ঋণ নেয়ার পরিমাণ কমেছে তিন হাজার ৪৯ কোটি টাকা, যা শতকরা হিসেবে প্রায় ২৬ ভাগ। গড়ে প্রতি মাসে কমেছে এক হাজার কোটি টাকার ওপরে। এর মধ্যে গত সেপ্টেম্বরেই কমেছে প্রায় ৩২ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার নিট ঋণ নিয়েছে দুই হাজার ৮২৫ কোটি টাকা, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ছিল চার হাজার ১৫২ কোটি টাকা। এক মাসে এ খাত থেকে ঋণ নেয়ার পরিমাণ কমেছে এক হাজার ৩২৭ কোটি টাকা।
সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে মুনাফার হার কমানো হয়েছে। আর ২ লাখ টাকার ওপরে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এক দিকে করোনাভাইরাসের প্রভাবে মানুষের আয় কমে গেছে, এর ওপর নানা শর্তের বেড়াজালে কমে যাচ্ছে সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমেছে প্রায় সাড়ে ২৬ শতাংশ। আর একক মাস হিসেবে সেপ্টেম্বরে কমেছে প্রায় ৩২ শতাংশ। বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমার ধারা অব্যাহত থাকলে বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে সরকারকে ব্যাংক ঋণের ওপর অধিকমাত্রায় নির্ভরশীল হতে হবে। এতে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ চাপে পড়ে যাবে।
জানা গেছে, সরকার আয়ের অতিরিক্ত যে ব্যয় করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় তাই বাজেট ঘাটতি। আর এই বাজেট ঘাটতি অর্থায়নের জন্য মোটা দাগে দুইটি খাত থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। একটি অভ্যন্তরীণ খাত, অপরটি বিদেশী ঋণ। অভ্যন্তরীণ খাতের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বড় একটি অংশ ঋণ নেয়া হয়। ব্যাংকের পরেই বেশি মাত্রায় ঋণ নেয়া হয় সঞ্চয়পত্র থেকে।
সঞ্চয়পত্রে জনগণের বিনিয়োগ কমে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দুই বছর ধরে করোনাভাইরাসের প্রভাবে অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। বেসরকারি খাতে যাদের চাকরি আছে তাদের মধ্যে অনেকেরই বেতনভাতা কমে গেছে। সবমিলে মানুষের সঞ্চয় সক্ষমতা কমে গেছে। যাদের এ খাতে সঞ্চয় ছিল তাদের অনেকেই সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ মেয়াদ পূর্তির আগেই ভেঙে ফেলছে। এর ফলে নতুন বিনিয়োগের হার যেমন কমছে, তেমনি পুরনো বিনিয়োগ ভাঙার হার বাড়ছে। এর প্রভাব পড়েছে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে। দ্বিতীয়ত, গত কয়েক বছর ব্যাংক ঋণের সুদহার কমছিল। ফলে বেশির ভাগ মানুষ বেশি মুনাফার আসায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেছিল। এর ফলে গত কয়েক বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি বিনিয়োগ হয়েছে সঞ্চয়পত্রে।
সরকার সুদ ব্যয় কমাতে গত বছর সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নানা শর্ত আরোপ করেছিল। যেমন- দুই লাখ টাকার ওপরে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে চাইলে গ্রাহককে বাধ্যতামূলকভাবে কর শনাক্তকারী নম্বর বা টিআইএন বাধ্যতামূলকভাবে জমা দিতে হবে। এসব শর্তের কারণে নতুন বিনিয়োগে অনেকেই নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েন। তৃতীয়ত মুনাফার হার কমানো। গত ২১ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে সঞ্চয়পত্রে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ থাকলে মুনাফা কমিয়ে আনার কথা বলা হয়। ওই প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এখন সঞ্চয়পত্রে যাদের ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ আছে, তাদের মুনাফার হার দুই শতাংশ পর্যন্ত কমানো হয়েছে। তবে ১৫ লাখ টাকার নিচে মুনাফার হার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। আগের নিয়মেই তারা মুনাফা পাবেন। বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ, পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ২০১৫ সালের ২৩ মের পর থেকে এ হার কার্যকর রয়েছে। এর আগে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ছিল ১৩ শতাংশেরও বেশি। তবে নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী এখন যারা ১৫ লাখের বেশি টাকা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করবেন, তাদের দুই-শতাংশ কম মুনাফা দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ১৫ লাখ টাকা থেকে ৩০ লাখ টাকার মধ্যে বিনিয়োগ হলে ১ শতাংশ কম এবং ৩০ লাখ টাকার ওপরে হলে ২ শতাংশ কম মুনাফা দেয়া হচ্ছে। মুনাফার হার কমে যাওয়ায় সঞ্চয়পত্রে নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com