সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:২৩ অপরাহ্ন

বিজয়নগরে ড্রাগন ফল বাগানে, ফলের ভারে নুয়ে পড়েছে গাছ

বিজয়নগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৯ নভেম্বর, ২০২১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায়, ডালে ডালে ঝুলছে ড্রাগন ফল, ফলের ভারে নুয়ে পড়েছে গাছে শাখাগুলো, ড্রাগন এখন আর বিদেশী ফল নয়, চোখ জোরানো ড্রাগন বাগানে ফুলের পর ফলের ভারে নুয়ে পড়েছে গাছে শাখাগুলো। ক্যাকটাস গোত্রের এই গাছ, তাই বছরের যে কোনো সময়ই ড্রাগন লাগানো যায়, ড্রাগন একটি সুস্বাদু গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল, এটি চমৎকার স্বাদযুক্ত এবং প্রয়োজনীয় বিবিধ পুষ্টিগুণে ভরপুর সুস্বাদু ফল। এ এলাকার আবহাওয়ায় ড্রাগন ফল চাষের জন্য খুবই উপযোগী, ড্রাগন ফল পুষ্টিগুণে ভরপুর, ফলের ভেতর দেখিতে লাল ছোট ছোট কাল বিচি যুক্ত, খেতে খুব সুস্বাদু। ড্রাগন মূলত দক্ষিণ আমেরিকায় গভীর অরণ্যে এর প্রথম দেখামেলে, পরবর্তীতে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ভিয়েতনাম চীন সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রে এর বাণিজ্যিক ভাবে আবাদ শুরু হয়। ড্রাগন এখন আর বিদেশী ফল নয়, এ উপজেলায় ২০১৯ সাল থেকে এর বাণিজ্যিক ভাবে আবাদ শুরু হয়, এ উপজেলায় বর্তমানে ১০ হেক্টর ভূমিতে ড্রাগনের আবাদ করা হয়েছে শুধু পাহাড়পুর ইউপিতে ৫ হেক্টর। মাটি:- পাহাড়ি লাল বেলে মাটি, ড্রাগন চাষের জন্য খুবই উপযোগী। বাগানের প্রস্তুতি, সারা বছরই বাগান তৈরী করা যায় তবে এপ্রিল-সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে লাগানো ভাল হয়, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ও উঁচু ভূমিতে এর আবাদ ভাল হয়, বাগানের চতুরপাশের্^ বেষ্টনি প্রয়েজন, ৬/৭ ফুট উচ্চতার সিমেন্টের পিলার/খুঁটি ২/৩ ফুট পরিমাণ মাটিতে পুতে, প্রতিটি খুঁটির মাথায় একটি অকেজো গাড়ির বড় টায়ার, তার দিয়ে বেধে দিতে হবে, ড্রাগন ফলের চারা রোপণের জন্য প্রতি গর্তে ১ মণ পচা গোবর, ৫০ গ্রাম ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি ১০০ গ্রাম করে এবং জিপসাম, বোরন ও জিংক সালফেট ১০ গ্রাম করে দিয়ে, গর্তের মাটি ভালোভাবে মিশিয়ে রেখে দিতে হবে ২০-৩০ দিন পর্যন্ত, এর পর পিলার গোড়ায় চারা রোপন করতে হবে, একটি পিলার গোড়ায় ৪ টি চারা লাগানো যায়, ড্রাগনের চারা বা কাটিং রোপণের ১০ থেকে ১৫ মাসের মধ্যেই ফল সংগ্রহ করা যায়, ১ বিঘা জমিতে ১০০টি পিলার স্থাপন করা যায়, একবার রোপণ ৩০ থেকে ৩৫ বছর ফল খাওয়া ও বাজারজাত করা যায়। ফুল:- ড্রাগনের ফুল রাতে ফুটে, দিনের আলোতে চুপসে যায়, পুষ্টি গুণ:- পুষ্টিকর ফল ড্রাগনের পুষ্টিগুণ অনেক, বহুমুখী পুষ্টি গুণে সমৃদ্ধ ফলের নাম ড্রাগন ফাইবার, ভিটামিন সি ও খনিজ পদার্থে ভরপুর। চারা:- শাখা প্রশাখা থেকে নতুন চারা তৈরী করা যায়। প্রতিটি চারার বাজার মূল্য ৫০ থেকে ২০০ টাকা। ফল:- চারা রোপনের প্রায় ১ বছর থেকে ফল আসতে শুরু করে, ১২ থেকে ১৮ মাস বয়সী গাছ হতে একটি পিলার হতে ৫ থেকে ২০টি ফল উঠানো যায়। তবে প্রাপ্ত বয়স্ক ১টি পিলার থেকে বছরে দেড় শতাদিক ফল পওয়া যায়. প্রতিটি ফল ২শত গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজন হয়, ফল আসা শুরু হয় জুন মাসে এবং নভেম্বর মাস পর্যন্ত সংগ্রহ করা যায়, পাকা ফল ফ্রিজিং বাদেই ১০ দিন ভালো থাকে। রোগ বালাই :- ড্রাগন গাছে তেমন রোগ বালাই না থাকার কারণে বাগানে খরচও কম হয়, বাগানে কোন প্রকার কীটনাশক ব্যবহার না করে জৈব সার ও কম্পোস্ট এবং ছত্রাক নাশক ব্যবহার করেই ভাল ফল আশা করা যায়। বাগান পরিচর্যা:- ড্রাগন ফল চাষে পানি খুব কম লাগে, শুকনো মৌসুমে অবশ্যই সেচ ও বর্ষা মৌসুমে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হয়, ড্রাগন ফলের জন্য ক্ষতিকর পোকামাকড় খুব একটা চোখে পড়ে না, নিয়মিত পরিচর্যা, সেচ ও জৈব সার ব্যবহারে অল্প দিনেই গাছ বেড়ে উঠে। বাজার দর:- প্রতি কেজি ড্রাগন ফল ৩০০- ৩৫০ টাকায় পাইকারী বিক্রি হয়। ড্রাগন ফল চাষী গোয়াল নগর গ্রামের প্রবাসীর স্ত্রী রাবেয়া বেগম বলেন, কৃষি অফিসারের পরামর্শে বিদেশী ফল ড্রাগন চাষ করেছে, আশনুরূপ ফলনে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রিতে ভাল লাভ হয়েছে, যদিও বাগানটি দেখাশোনার জন্য একজন লোক রাখা হয়েছে, তারপর ও সে নিজে বাগানের পরিচর্যা করেন, এলাকাবাসী সহ দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই তার বাগান দেখতে ও পরামর্শ নিতে ছুটে আসেন। ড্রাগন ফল চাষী ভিটিদাউদপুর গ্রামের প্রবাসীর স্ত্রী হুসনা আক্তার ভূইয়া বলেন, পরাগায়নের জন্য সকালে ফুলের পাপড়ি ধরে ঝাঁকি দিলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরাগরেণু বাটিতে জমিয়ে তা এক ফুল থেকে অন্য ফুলে লাগিয়ে পরাগায়নের ফলে নিষিক্ত হয়ে ফল ধরে। সামান্য পরিচর্যায় ফলন ভাল হয়, ভাল দামে এ ফলের কাটিং ( চারা) বিক্রি করে বিক্রি করে ভাল টাকা আয় করা যায়, এ ফল চাষ লাভ জনক। এ বিষয়ে উপজেলা স্ব্যাস্থ ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো: মাছুম বলেন, ড্রাগন বিদেশি ফল হলেও এর আবাদের ফলে দিন দিন আমাদের দেশেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, ড্রাগন ফল আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে সহায়তা করে, কোলেস্ট্রোরেল কমায়, হৃদযন্ত্র ভালো রাখে, ওজন কমাতে সাহায্য করে, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়, ডায়াবেটিস প্রতিরোধে, হজমে সহায়ক, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে ইত্যাদি। উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা মে:আশরাফুল আলম বলেন, এ উপজেলায় ২০১৯ সালে ড্রাগন ফলের আবাদ শুরু হয় পরিত্যক্ত জমিতে ড্রাগন ফল চাষ করে অনেকেই স্বাবলম্বী, তাই ক্রমান্বয়ে ড্রাগন ফলের উৎপাদন বাড়ছে, এতে করে দেশে পুষ্টি যোগানের পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানীর সুযোগ রয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসার ছাব্বির আহমেদ বলেন, আমরা প্রকল্পের আওতায় আগ্রহীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি, বাগানে কোন প্রকার কীটনাশক ব্যবহার না করে জৈব সার ও কম্পোস্ট এবং ছত্রাক নাশক ব্যবহারে গাছে ফুল-ফল কিভাবে বৃদ্ধি পাবে তা উপজেলা কৃষি অফিস পরামর্শ দিয়ে থাকে, তাই এ ফল সম্প্রসারণের মাধ্যমে আমাদের কৃষির উন্নয়ন হবে বলে আমি মনে করি। কৃষকদের সফলতা দেখে আমরা আনন্দিত।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com