শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৮:২৪ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশে অধিকাংশ ধর্ষণের মামলায় ‘শাস্তি হয় না’ 

খবরপত্র:
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২১

জার্মান বার্তা সংস্থা ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন

ধর্ষণের শাস্তির দাবিতে ঢাকার রাস্তায় মাঝেমাঝেই প্রতিবাদ কর্মসূচি দেখা যায়। বাংলাদেশে অধিকাংশ ধর্ষণের মামলায় কোনো শাস্তি হয় না বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এই অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- হওয়ায় জটিলতা আরো বাড়ছে বলে মনে করছেন তারা। বাংলাদেশে ধর্ষণের ঘটনার অনুপাতে মামলার সংখ্যা কম। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) গত তিনবছরের পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে এই চিত্র। সংস্থাটির হিসেবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে এক হাজার ১৭৮ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪৩ জন নারীকে। আর আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন আট জন। কিন্তু মামলা হয়েছে মাত্র ৮১৩টি। ২০২০ সালে এক হাজার ৬২৭ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৫৩ জনকে। আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ১৪ জন। আর মামলা হয়েছে এক হাজার ১৪৪টি। আর ২০১৯ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক হাজার ৪১৩ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৭৬ জনকে। আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ১০ জন। মামলা হয়েছে ৯৯৩টি। আসক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে পরিসংখ্যান তৈরি করে। তবে অনেক ঘটনা সংবাদমাধ্যমে আসে না। আর যেসব খবর সংবাদমাধ্যমে আসে সেসব ঘটনায় ২০-৩০ ভাগ মামলা হয় না। কারণ সেগুলো স্থানীয়ভাবে মিটমাট করে ফেলা হয় বলে জানিয়েছে আসক। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, ‘‘বাংলাদেশে ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সহিংসতার যত মামলা হয় তার সর্বোচ্চ চার থেকে পাঁচ ভাগ মামলায় আসামিরা শাস্তি পান। আর শুধু ধর্ষণের হিসাব করলে এই হার আরো অনেক কম হবে।” মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী নারী নেত্রী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, ‘‘ধর্ষণ মামলায় সর্বোচ্চ দুই ভাগের বেশি শাস্তি হয় না।’’ তিনি বলেন, ‘‘শাস্তির হার এত কম দেখে কেউ কেউ বলেন অধিকাংশ ধর্ষণ মামলাই মিথ্যা। কিন্তু তারা ঠিক বলছেন না। আদালতে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ না হলে ধর্ষণের ঘটনা মিথ্যা হয়ে যায় না। মামলা দায়ের থেকে শুরু করে মামলার তদন্তসহ নানা কারণে আসামিরা বেনিফিট অব ডাউটের সুযোগে ছাড়া পেয়ে যান।”
আইন বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশে ধর্ষণ মামলায় মেডিকেল প্রতিবেদনকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় আদালত। কিন্তু ধর্ষণের শিকার নারী ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য বা ঘটনা পরম্পরাকে গুরুত্ব দেয়া হয় না। ফলে অনেক আসামিই ছাড়া পেয়ে যান। এলিনা খান বলেন, ‘‘ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদ- করায় বিষয়টি আরো জটিল হয়ে পড়েছে। বিচারকরা এখন আরো বেশি সতর্ক হয়ে গেছেন। যেহেতু মৃত্যুদ-ের বিষয় তাই তারা কোনো ধরনের বেনিফিট অব ডাউট পেলেই খালাস দিয়ে দিচ্ছেন।’’ শাস্তির চেয়ে যেটা আগে বেশি প্রয়োজন তা হলো মামলা, মামলার তদন্ত – এই বিষয়গুলো ঠিকভাবে করা। আমাদের এখানে সব কিছুই যেন ধর্ষকের পক্ষে, বলেন তিনি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com