রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৩ অপরাহ্ন

এ বছর রেকর্ড পরিমাণ ডিম ছেড়েছে ইলিশ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২১

উপকূলীয় এলাকার নদীগুলোতে এ বছর অধিক পরিমাণে ইলিশ মাছ ডিম ছেড়েছে। মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ি এটা রেকর্ড পরিমাণ। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো: আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, চাঁদপুর, শরীয়তপুরসহ ১০টি পয়েন্টে তারা ইলিশের ডিম ছাড়া পর্যবেক্ষণ করেছেন। গত বছর ৫১ দশমিক ২ শতাংশ মা ইলিশ ডিম ছেড়েছিল। এ বছর দেশের নদ-নদী ও মোহনায় ৫১ দশমিক ৭ শতাংশ মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে, যা গত বছরের তুলনায় দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।
এবার অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। অভয়ারণ্যগুলোতে শতভাগ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করতে হবে। এই মৌসুমে ইলিশের উৎপাদন ৬ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে। বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, বরগুনার তিনটি প্রধান নদ-নদী ও মোহনায় এ বছর নির্বিঘেœ ইলিশ ডিম ছেড়েছে। মা ইলিশ সংরক্ষণে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। যার ফলে এবার ডিম ছাড়ার হার বেড়েছে। আশা করছি ইলিশ সুরক্ষায় সফল হবো।
ইলিশ কি ক্যালেন্ডার দেখে ডিম পাড়ে? নদীতে, বাজারে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না এমন অভিযোগ ক্রেতা-বিক্রেতা সবার। মা ইলিশ রক্ষা এবং ইলিশকে স্বাচ্ছন্দে ডিম ছাড়ার সুযোগ করে দিতে সম্প্রতি ২২ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ ছিল। নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে ২৫ অক্টোবর। ওইদিন মধ্যরাত থেকেই জেলেরা ইলিশ ধরতে নদীতে নামে। তবে কাক্সিক্ষত ইলিশ মিলছে না নদীতেÍএমন অভিযোগ জেলেদের। প্রশ্ন উঠেছে, এই যে সময় বেঁধে দেওয়া হয় ডিম পাড়ার জন্য, ইলিশরা কি সেই ক্যালেন্ডার দেখে ডিম পাড়ছে? বছরের পর বছর একটা নির্দিষ্ট সময়ে ইলিশকে ডিম পাড়তে হবেÍএ নিয়ম ইলিশরা মানছে, না কি তারা তাদের মতো ডিম পাড়ার সময় বদলে নিচ্ছে? যারা ইলিশ নিয়ে গবেষণা করছেন তারা বলছেন, যেকোনও বাধা অতিক্রম করে নিজের মতো করে বিকল্প পথ সব প্রাণীই তৈরি করে। কিম্তু এ প্রক্রিয়ায় অনেক বছর সময় লাগে।
২৫ অক্টোবরের পর ক্রেতাদের অভিযোগ ছিল, বাজারে তাজা ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। যা পাওয়া যাচ্ছে তা আগের হিমায়িত ইলিশ। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর সেগুলো বাজারে আনা হয়েছে। যদিও ব্যবসায়ীরা এসব মাছকে সদ্য ধরা বলে প্রচার করছেন। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, নদীতে ইলিশই হয়তো কম। ডিম ছাড়ার জন্য যেসব মাছ সাগর থেকে নদীতে এসেছিল, তারা ডিম ছেড়ে হয়তো আবার সাগরেই ফিরে গেছে।
বাংলাদেশে ইলিশের সবচেয়ে বেশি সমাগম ঘটে মেঘনা ও পদ্মায়। এর পরই আছে ভোলার তেতুলিয়া নদী, বরগুনা, পাথরঘাটা, রাঙাবালির আগুনমুখা নদী। ডিম পাড়ার সময় ইলিশ ধরা বন্ধ রাখার পরও কেন মাছের উৎপাদন বাড়ছে না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে ইলিশের সবচেয়ে বড় শত্রু নদীভাঙন ও বন্যা। এই দুই কারণে প্রতিবছর পদ্মা, মেঘনা, তেতুলিয়া, আগুনমুখায় অসংখ্য চর সৃষ্টি হচ্ছে। কমছে নদীর গভীরতা। নদীর গভীরতা কমলে পানির প্রবাহও কমে। এতে বাধাগ্রস্ত হয় ইলিশের বিচরণ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মিহির কান্তি বিশ্বাস জানিয়েছেন, ‘ক্রমশ ইলিশের বিচরণস্থল সংকুচিত হচ্ছে। যদিও ইলিশের অভয়াশ্রম গড়ে তুলে বিচরণস্থল নিরাপদ করার চেষ্টা করছে সরকার। তাতে শেষ রক্ষা হবে বলে মনে হয় না। যদিও ইলিশের উৎপাদন বাংলাদেশে বেড়েছে, সেগুলো বেশিরভাগই সাগরের। নদীর ইলিশ ক্রমশ কমছে।’
ডিম পাড়ার ক্যালেন্ডার কীসের ভিত্তিতে তৈরি হয় প্রশ্নে মৎস গবেষণা ইন্সটিটিউটের গবেষক আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমরা গবেষণায় দেখেছি, সারা বছরই ইলিশ ডিম পাড়ে। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর, অক্টোবরে বেশি ডিম ছাড়ে। ফলে অক্টোবর মাসটা মাছ ধরা বন্ধ রাখতে পারলে ভালো। আবার এ সময়েই জেলেরা অপেক্ষা করে মাছ ধরার জন্য। এ জন্য এই সময়ের মধ্যে কোন সময়টা ডিম পাড়ার জন্য সবচেয়ে উপযোগী সেটা বের করে দিতে হয়। সেটা নির্ধারণ করা হয় পূর্ণিমা ও অমাবস্যার মাঝামাঝি সময়টা ধরে। এবার অমাবস্যা পড়েছে ৬ অক্টোবর, পূর্ণিমা ২০ অক্টোবর। এজন্য ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর নিষেধাজ্ঞা ছিল। এ সময় ইলিশের ডিমের পরিপক্কতাও বেশি থাকে। ডিমের সক্ষমতাও বেশি থাকে।’ মাছ কম পাওয়া প্রশ্নে তিনি বলছেন, ‘অনেক মাছ মে-জুনে ডিম ছাড়ে। আবার মাঝে মাঝে মাছ না পেয়ে হতাশ হয়ে জেলেরা মাছ নেই বলছে। হয়তো কম ধরা পড়ছে। এদিকে নদীগুলোতে প্রচুর দূষণও হচ্ছে। প্রচুর জাল ফেলা হচ্ছে। যার কারণে ইলিশ নদীতে আসতেই পারছে না। পরিবেশ ভালো হলে তারা আবার আগের অবস্থায় আসবে।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com