রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১৭ অপরাহ্ন

মানব মনে কুরআনের বিপ্লব

হাফেজ মাওলানা মো: রিদওয়ান:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২১

হজরত জাফর তায়্যর রহ: একবার মেহমান নিয়ে খেতে বসেছিলেন। তখন তার গোলাম গরম গোশতের পাত্র হাতে রাখতে না পেরে হাত থেকে ফেলে দেয়। দুর্ভাগ্যবশত উত্তপ্ত গোশতের পাত্রটি তার মাথার ওপরই পড়ে। তখন ক্রোধে তার মুখম-ল লাল হয়ে যায়, গোলাম তার ক্রোধ দেখে এ আয়াতখানি পাঠ করতে শুরু করে- ‘ওয়াল কাজিমিনাল গইজা’ অর্থ- যারা ক্রোধকে প্রশমিত করে। তখনই তার মুখম-লের রঙ বদলে যায় এবং ক্রোধ কমে যায়। আর যখন পাঠ করল- ‘ওয়াল আফিনা আনিন নাস’ অর্থ- যারা মানুষকে ক্ষমা করে। তখন সাথে সাথে তিনি বললেন, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। এরপর যখন সে পাঠ করল- ‘ওয়াল্লাহু ইউহিব্বুল মুহসিনিন’ অর্থ- আল্লাহ পাক নেককার লোকদের ভালোবাসেন। তখন তিনি বললেন, আমি তোমাকে মুক্তি দিলাম। (আল্লাহু আকবার)
বিখ্যাত সাহাবি জোরারা ইবনে আওফা রা: নামাজরত ছিলেন। ইমাম সাহেব তিলাওয়াত করলেন ‘শেষ বিচারের দিনে কিয়ামতের ময়দানে হাজির হওয়ার জন্য যখন শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে তখন তোমাদের কী অবস্থা হবে?’ এ আয়াত শ্রবণ করা মাত্রই হজরত জোরারা ইবনে আওফা রা: পড়ে গেলেন এবং মৃত্যুমুখে পতিত হলেন। এ আয়াতের এমনই প্রতিক্রিয়া তার অন্তরে হয়েছিল যা সহ্য করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি।
একবার হজরত ওমর রা: জুমার খুতবায় পাঠ করলেন- ‘প্রত্যেকটি মানুষ জানতে পারবে সে কী আমল নিয়ে হাজির হয়েছে।’ তখন তিনি কাঁদতে কাঁদতে তার নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলো। শুধু তাই নয়, আবদুুল্লাহ ইবনে ঈসা বর্ণনা করেন, একবার খলিফাতুল মুসলিমিন হজরত ফারুকে আজম রা: ফজরের নামাজের উদ্দেশ্যে মসজিদে যাচ্ছিলেন, পথ চলতে চলতে তিনি বেহুঁশ হয়ে পড়লেন। লোকেরা তখন ওই অবস্থায় তাকে বাড়ি পৌঁছালে অনেক্ষণ পর যখন তার হুঁশ ফিরে এলো, তাকে সঙ্গাহীন হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, মসজিদে গমনকালে একটি বাড়ি থেকে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত শ্রবণ করছিলাম। ওই আয়াতের মধ্যে কিয়ামতের দিনের ভয়াবহ অবস্থার বিবরণ ছিল যা শ্রবণ করে আমি চেতনা হারিয়ে ফেলি।
পবিত্র কুরআনের মহান শিক্ষার এমনই প্রতিক্রিয়া হতো তাদের অন্তরে। ইমাম আবু হানিফা রহ: এক রাতে সালাতে পাঠ করলেন- ‘হে পাপিষ্ঠরা আজকের দিনে তোমরা পৃথক হয়ে যাও। সকালে তার খাদেম বিনীতভাবে আরজ করলেন, হুজুর আজ শুধু একখানি আয়াত পাঠ করেই সরা রাত শেষ করে দিলেন, এর কারণ জানতে পারি কি? তখন তিনি বললেন, এ আয়াতের মর্মবাণীর প্রতি লক্ষ্য করো তাহলে তোমার প্রশ্নের জবাব পাবে। এ আয়াতে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন, কিয়ামতের দিন পাপিষ্ঠ ও বদকার লোকদের নির্দেশ দেয়া হবে। তোমরা নেককার লোকদের সাথে থাকতে পারবে না, তোমরা তাদের থেকে পৃথক হয়ে যাও।
আবু হানিফার মতো মহান ব্যক্তি বলেন, তখন আমার ভয় হয়েছে, হায় আমার কী অবস্থা হবে। সেই কঠিন দিনে আল্লাহ পাক আমাকে বদকার লোকদের মধ্যে রাখবেন; না-কি নেককার লোকদের মধ্যে রাখবেন? এ প্রশ্ন আমাকে বিব্রত এবং ভীতসন্ত্রস্ত করে রাখে। তাই আমি এ আয়াতটি সারারাত তিলাওয়াত করতে থাকি। (সুবহান আল্লাহ) পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াত এভাবে যুগে যুগে মানুষের মনোজগতে বিস্ময়কর বিপ্লব সৃষ্টি করেছে যা এখনো চলাম।
শুধু মানুষ নয়, জিন জাতিকেও পরিত্র কুরআন প্রভাবান্বিত করে যেমন- সাহাবি হজরত খালিদ রা: একবার মসজিদে এ আয়াত তিলাওয়াত করছিলেন- ‘কুল্লু নাফসিং জাইকাতুল মাউত’ অর্থ- প্রাণী মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ অবশ্যই ভোগ করতে হবে। তিনি বারবার এ আয়াত তিলাওয়াত করার পর মসজিদের এক কোণ থেকে এ আওয়াজ শ্রুত হলো- তুমি আর কতবার এ আয়াত পাঠ করবে, অথচ এ আয়াতের কারণে এ পর্যন্ত চারজন মারা গেছে। লক্ষণীয় বিষয় হলো-পবিত্র কুরআন যে দারুণভাবে মানব মনে প্রভাব বিস্তার করে। কুরআনের বর্ণনাশৈলী কিভাবে মানুষকে আকৃষ্ট করে এবং মুগ্ধ করে এসব ঘটনা থেকে তা অতি সহজেই অনুমেয়।
বস্তুত পবিত্র কুরআনের শিক্ষায় প্রিয় নবী সা:-এর মহান আদর্শে এমন শক্তি নিহিত রয়েছে যা সাধারণ মানুষকে অসাধারণ করে তুলে এবং মানুষের সব প্রয়োজনের আয়োজনকে সহজতর করে দেয়। মানুষকে জীবন সংগ্রামের প্রতিটি স্তরে পথনির্দেশ করে এমন অবস্থায় সাফল্য তাদের পদচুম্বন করে। ইহকালীন ও পরকালীন জীবন সার্থক সুন্দর এবং সফলকাম হয়। অতএব, মুসলমান মাত্রই পবিত্র কুরআনের মর্মার্থ উপলব্ধি করতে চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন। আমীন। লেখক: ইমাম, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল-২ (মহিলা ও শিশু) সেগুনবাগিচা, ঢাকা




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com