বান্দরবান পাহাড়ি এলাকা। চারপাশে শুধু পাহাড়ের সারি। একটির চেয়ে যেন আরেকটি বেশি উঁচু। যারা ট্রেকিং করতে পছন্দ করেন; তাদের কাছে পাহাড় মানেই ভিন্ন আকর্ষণ। বর্তমানে পাহাড়ি সব দর্শনীয় বিভিন্ন স্থানগুলোর মধ্যে সাজেক, নীলগিরি বা নিলাচল জনপ্রিয় হলেও মারাইথংও কিন্তুু কম যায় না। বান্দরবানের আলীকদমে অবস্থিত মিরিঞ্জা রেঞ্জের একটি পাহাড় মারাইথং। এর উচ্চতা প্রায় ১৬৪০ ফুট। অনেকে এ পাহাড়কে মারায়ন তং বা মারায়ন ডং নামেও ডেকে থাকেন। পাহাড়ের একেবারে চূড়ায় রয়েছে এক বৌদ্ধ মন্দির। এ উপাসনালয় টির চারপাশ খোলা এবং মাথার উপরে চালা দেওয়া। এ বৌদ্ধ মন্দিরে আছে বুদ্ধের এক বিশাল মূর্তি। সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি এ স্থানটি। দর্শনীয় স্থান হিসেবেও স্থানটি মনোরোম এবং দৃষ্টিনন্দন। মারাইথং পাহপাড়ের উপর থেকে যত দূর দৃষ্টি যায়, দেখতে পাবেন শুধু পাহাড় আর পাহাড়। আর এসব পাহাড়ের ফাঁকে রয়েছে আদিবাসীদের ছোট ছোট ঘরবাড়ি, রাস্তা, ফসলের জমি। এ ছাড়াও নিচে সাপের মতো এঁকে-বেঁকে বয়ে চলেছে মাতামুহুরী নদী। সবমিলিয়ে স্থানটি বেশ রোমাঞ্চকর অনুভূতি সৃষ্টি করবে। মারাইথংয়ে যাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হলো আগষ্ট থেকে অক্টোবর মাস। পাহাড়ও দেখতে পারবেন আবার বিভিন্ন উপজাতিদের সঙ্গেও সাক্ষাতের সুযোগ পাবেন মারাইথংয়ে গেলে। প্রকৃতির অপার বিস্ময় লুকিয়ে আছে সেখানে। এ পাহাড়ের বিশেষত্ব হলো, এর চূড়া একেবারেই সমতল স্থানের মতো। এ কারণেই আদিবাসীরা স্থানটি তাদের বসবাসের জন্য বেছে নিয়েছেন। মারাইথং পাহাড়ে বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের বসবাস। এদের মধ্যে ত্রিপুরা, মারমা ও মুরং অন্যতম। পাহাড়ের ঠিক নিচের অংশে বসবাস মারমাদের। পাহাড়ের বিভিন্ন খাঁজে মুরংদের পাড়া। পাহাড়ের ঢালে তারা বাড়ি বানিয়ে বসবাস করেন। মাটি থেকে সামান্য ওপরে এদের টংঘর। এসব ঘরের নিচে থাকে বিভিন্ন গবাদি পশু যেমন-গরু, ছাগল, শূকর, মুরগি। কখনো গবাদি পশুর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় জ্বালানি কাঠও রাখা হয় স্তূপ করে। এ পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে সময় লাগতে পারে ৩ ঘণ্টারও বেশি। তবুও প্রতিদিন আদিবাসীরা প্রতিকূল এ পরিবেশে জীবনধারণ করছে। যা সত্যিই বিস্ময়কর। মারাইথংয়ে গেলে আপনি আদিবাসীদের দৈনন্দিন কাজকর্ম ও তাদের জীবনধারণ পদ্ধতি সম্পর্কেও জানতে পারবেন। পাহাড়িদের পাশাপাশি বাঙালিরাও তাদের নিত্যদিনের আয়-রোজগারের জন্য এই পাহাড়ের ওপর নির্ভরশীল। বাঙালিদের অনেকেই পাহাড়ে জন্মানো মুলি বাঁশ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। এই অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে তামাক চাষ হয়। ধান চাষের চেয়েও সেখানে তামাকের চাষ বেশি।