শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৫ অপরাহ্ন

ইসলামে পবিত্রতার গুরুত্ব ও ফজিলত

শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী:
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২১

আল্লাহ তাআলা পবিত্র। তিনি সব আবিলতা ও পঙ্কিলতামুক্ত। তাঁর পবিত্র নামগুলোর অন্যতম হচ্ছে ‘সুব্বুহুন’ (পবিত্রতম), ‘কুদ্দুসুন’ (অতি পবিত্র ও মহা পবিত্রকারী)। আল্লাহ চান মানবের পূতপবিত্র জীবনযাপন। তিনি বলেন, ‘হে নবী পরিবার! আল্লাহ তো শুধু চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদের সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।’ (সুরা-৩৩ আহজাব, আয়াত: ৩৩)। তিনি আরও বলেন, ‘বরং তিনি তোমাদের পবিত্র করতে চান।’ (সুরা-৫ মায়িদা, আয়াত: ৬)। ইসলামের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্যই হলো পবিত্রতা। পবিত্রতা মানে জীবনব্যাপী পবিত্রতা। বিশ্বাসের পবিত্রতা, কর্মের পবিত্রতা, শারীরিক পবিত্রতা, মানসিক পবিত্রতা, আর্থিক পবিত্রতা, বাহ্যিক পবিত্রতা, অভ্যন্তরীণ পবিত্রতা; ভাষা তথা বাক্য ও শব্দের পবিত্রতা, রুচির পবিত্রতা, দৃষ্টি ও দৃষ্টিভঙ্গির পবিত্রতা এবং পরিবেশ–প্রতিবেশের পবিত্রতা। শ্রবণে পবিত্রতা, দর্শনে পবিত্রতা ও চিন্তায় পবিত্রতা পবিত্র জীবনযাপনের পূর্বশর্ত ও সহায়ক বটে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘পবিত্রতা ইমানের অঙ্গ।’ অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘পবিত্রতা ইমানের অর্ধেক।’ (মুসলিম, মিশকাত, পৃষ্ঠা: ৩৮)। ইসলামের শুরু হয় পবিত্রতা দিয়ে। ইসলামে ইমান বা বিশ্বাসের মূল কথা হলো ‘কালিমা তাইয়েবা’। কালিমা তাইয়েবা নামের মানে হলো ‘পবিত্র বাক্য’ বা ‘পবিত্রকারী বাণী’। এই ঘোষণা দ্বারা বিশ্বাস পবিত্র হয়; মানুষ পাপপঙ্কিলতা, কুফর, শিরকসহ সব ধরনের অন্যায়–অত্যাচার বা পাপাচার থেকে মুক্ত হয়, তাই এর নাম কালিমা তাইয়েবা তথা ‘পবিত্র কথা’ বা ‘পবিত্রকারী বাক্য’।
ইসলামি বিধানমতে, আত্মিক পবিত্রতার পাশাপাশি শারীরিক পবিত্রতাও জরুরি। সঙ্গে সঙ্গে ইসলাম সার্বক্ষণিক পবিত্রতা রক্ষায় গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি ইবাদতে পবিত্রতার শর্তারোপ করেছে। নামাজ পড়া, কোরআন মাজিদ স্পর্শ করা ও কাবা শরিফ তাওয়াফ করা এই তিন ইবাদত সম্পাদনের জন্য পবিত্রতাকে পূর্বশর্ত হিসেবে ফরজ করা হয়েছে। নামাজের ১৩টি অপরিহার্য ফরজের প্রথম পর্বের বাধ্যতামূলক সাতটি শর্তের প্রথম তিনটিই হলো পবিত্রতা বিষয়ক শরীর পাক, কাপড় পাক ও নামাজের জায়গা পাক। নামাজভঙ্গের ১৯টি কারণের একটি হলো ‘নাপাক জায়গায় সিজদা করা’। পবিত্রতা অর্জনের প্রধান দুটি পন্থা হলো অজু ও গোসল। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর বারি বর্ষণ করেন তা দ্বারা তোমাদের পবিত্র করার জন্য।’ (সুরা-৮ আনফাল, আয়াত: ১১)। ‘এবং আমি আকাশ থেকে বিশুদ্ধ পানি বর্ষণ করি।’ (সুরা-২৫ ফুরকান, আয়াত: ৪৮)। অজুর চারটি ফরজ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনেরা! যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হবে, তখন তোমরা তোমাদের মুখম-ল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে এবং তোমাদের মাথা মাসাহ করবে এবং পা টাকনু পর্যন্ত ধৌত করবে; যদি তোমরা অপবিত্র থাকো, তবে বিশেষভাবে পবিত্র হবে। তোমরা যদি পীড়িত হও …অথবা পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করবে।’ (সুরা-৫ মায়িদাহ, আয়াত: ৬)। অজু ও গোসলের প্রয়োজনে পানি ব্যবহারে অপারগতায় পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম সম্পন্ন করা হয় (কুদুরি)।
মন ও স্থানের পবিত্রতা সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ, ‘আমার সঙ্গে কোনো শরিক স্থির কোরো না এবং আমার ঘরকে পবিত্র রেখো।’ (সুরা-২২ হজ, আয়াত: ২৬)। পবিত্র পরিচ্ছদ গ্রহণ বা পোশাক পবিত্রকরণ ও আবিলতামুক্ত হওয়ার বিষয়ে আল্লাহ তাআলার আদেশ, ‘হে বস্ত্রাচ্ছাদিত! উঠুন, সতর্ক করুন এবং আপনার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন। আপনার পরিচ্ছদ পবিত্র রাখুন, অপবিত্রতা পরিহার করে চলুন।’ (সুরা-৭৪ মুদ্দাছছির, আয়াত: ১-৪)। ইবাদতকারীদের জন্য ইবাদতের স্থান আল্লাহর ঘর পবিত্র রাখার নির্দেশনা, ‘এবং ইব্রাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.)–কে আমার গৃহ পবিত্র রাখতে আদেশ দিয়েছিলাম; তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী এবং রুকু ও সিজদাকারীদের জন্য।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১২৫)। পবিত্রতা নবী–রাসুলদের বিশেষ গুণ বা বৈশিষ্ট্য। পবিত্র কোরআনে তাঁদের পরিচয় বিবৃত হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই তারা এমন লোক, যারা অতি পবিত্র হতে চায়।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ৮২; সুরা-২৭ নমল, আয়াত: ৫৬)। অজুর ফজিলত সম্পর্কে হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ভালোভাবে অজু করল, অতঃপর কালিমা শাহাদত পড়ল; তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খোলা থাকবে, সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করবে।’ (মুসলিম: ২৩৪, আবুদাউদ: ১৬৯, নাসায়ি: ১৪৮, তিরমিজি: ৫৫, ইবনে মাজাহ: ৪৭০, মুসনাদে আহমাদ: ১২২)। ●লেখক: মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী। যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম, ইমেইল:smusmangonee@gmail.com




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com