সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৬ পূর্বাহ্ন

বিজয়ের মাস ডিসেম্বর

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১

আজ ১৫ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে আত্মসমর্পণের নির্দেশ পান পাকিস্তানী জেনারেল নিয়াজী। রাত ২টার মধ্যে বাংলাদেশের সব জায়গায় অবস্থানরত সেনাবাহিনীকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়ে তারবার্তা পাঠান। এ দিনটি মূলত শত্রুবাহিনীর চূড়ান্ত আত্মসমর্পণের দিন-ক্ষণ নির্ধারণের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। আনুষ্ঠানিক বিজয় লাভের আগেরদিন দখলমুক্ত হয় বগুড়াসহ বেশ কয়েকটি জনপদ।
এদিকে গোটা জাতি এক মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায়। ঐতিহাসিক মুহূর্তের জন্য কেবল রাতের প্রতীক্ষা। আত্মসমর্পণের বিস্তারিত আয়োজনের জন্য এদিন বিকেল ৫টা থেকে পরদিন ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টা এবং পরে বিকেল ৩টা পর্যন্ত উভয়পক্ষ যুদ্ধ বিরতি কার্যকর করেছিলেন। সে সময় যৌথবাহিনীর পক্ষে জেনারেল নিয়াজীর সাথে প্রথম যোগাযোগ করেছিলেন টাঙ্গাইলের পথে আগত ভারতীয় মেজর জেনারেল নাগরা। নিয়াজীর সদর দফতরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মুক্তিবাহিনীর একমাত্র প্রতিনিধি ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধে কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান, বর্তমান কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম। সেদিনই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যাপারে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে যৌথবাহিনীর অধিনায়ক হিসেবে যোগ দিতে বিকেল সাড়ে ৫টায় হেলিকপ্টারযোগে সস্ত্রীক ঢাকায় আসেন ভারতের সেনা কর্মকর্তা লে. জে. জগজিৎ সিং অরোরা।
এ দিন ঢাকার বাসাবোতে ‘এস ফোর্স’-এর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানী বাহিনীর ওপর তীব্র আক্রমণ চালায়। জয়দেবপুরেও মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক আক্রমণে পর্যুদস্ত হয় তারা। টঙ্গী, ডেমরা, গোদনাইল ও নারায়ণগঞ্জে মিত্রবাহিনীর আর্টিলারি আক্রমণে বিপর্যস্ত হয় দখলদার বাহিনী। এছাড়া এ দিন সাভার পেরিয়ে গাবতলীর কাছাকাছি নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নেয় মিত্রবাহিনীর একটি ইউনিট। ভারতীয় ফৌজের একটি প্যারাট্রুপার দল পাঠিয়ে ঢাকার মিরপুর ব্রিজের পাকিস্তানী ডিফেন্স লাইন পরখ করে নেয়া হয়।
রাতে যৌথবাহিনী সাভার থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। পথে কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে কাদিরীয়া বাহিনী ভারতীয় ও বাংলাদেশ বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয়। রাত ২টার দিকে যৌথবাহিনী পাক সৈন্যের মুখোমুখি হয়। যৌথবাহিনী ব্রিজ দখলের জন্য প্রথমে কমান্ডো পদ্ধতিতে আক্রমণ শুরু করে। ব্রিজের ওপাশ থেকে পাকবাহিনী মুহুর্মুহু গোলাবর্ষণ করতে থাকে। এ সময় যৌথবাহিনীর আরেকটি দল এসে পশ্চিম পাড় দিয়ে আক্রমণ চালায়। সারারাত তুমুল যুদ্ধ চলে।
পাকিস্তানীরা তাদের নিশ্চিত পরাজয় জেনেও আঘাত করেছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর। এদিনও অনেক বুদ্ধিজীবী শহীদ হন ঘাতকদের হাতে। ডা. আলীম চৌধুরী, ড. আবুল কালাম আজাদকে হত্যা করা হয় ১৫ ডিসেম্বর। দুইদিন পর ১৭ ডিসেম্বর বধ্যভূমি থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয় অসংখ্য বুদ্ধিজীবীর ছিন্নভিন্ন লাশের সঙ্গে।
অন্যদিকে বারবার আত্মসমর্পণের ঘোষণা দেয়া সত্ত্বেও পাকিস্তানী সেনারা আত্মসমর্পণ না করে লড়াই করতে থাকে। এদিন চট্টগ্রামের দিকে অগ্রসরমান মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ভাটিয়ারীতে ঘাতকরা বাধা দান করে। ফৌজদারহাট এবং কুমিরায়ও তারা প্রচ- চাপ সৃষ্টি করে। খাদেমনগরে ছিলো পাকিস্তানী সেনাদের সবচেয়ে মজবুত ঘাঁটি। মুক্তিযোদ্ধা এবং ভারতীয় গুর্খা বাহিনী রাস্তার দুই দিক থেকে অগ্রসর হতে থাকে। পরাজয়ের চরম পরিণতি এবং ভয়ে দিশেহারা হয়ে বগুড়া শহরের পাক সেনারা শহর ছেড়ে পালাতে থাকে। পালাবার সময়ও তারা চারদিকে এলোপাতাড়ি গুলীবর্ষণ করেছিল। সেখানে নিহত হন দুই জন মুক্তিযোদ্ধা। একাত্তরের এই দিনে ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর শহীদ হন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তিনি পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিবাহিনীর ৭ নম্বর সেক্টরে যোগ দেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ দখলের যুদ্ধে তিনি সরাসরি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। মহানন্দা নদী পেরিয়ে তিনি একের পর এক শত্রু বাংকার দখল করে যখন প্রবল বিপদ উপেক্ষা করে এগুচ্ছিলেন তখন হঠাৎ মাথায় গুলী লাগে তার। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ( গ্রন্থনা: ইবরাহীম খলিল )




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com