শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী এবং শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করা দক্ষিণ আফ্রিকার আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু আর নেই। ৯০ বছর বয়সে তিনি মারা গেছেন বলে গতকাল রোববার ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। এক ঘোষণায় প্রেসিডেন্ট রামাফোসা বলেন, আমাদের দক্ষিণ আফ্রিকানদের জন্য যারা স্বাধীনতা এনেছেন, তার অন্যতম আর্চবিশপ এমিরিটাস ডেসমন্ড টুটুর মৃত্যুতে আরেকটি শোকের অধ্যায় শুরু হলো। আমাদের জাতির অসামান্য এই নেতাকে বিদায় জানাতে হবে। তিনি নিজেকে অসা¤প্রদায়িক হিসেবে অন্যদের থেকে আলাদা করেছেন। সার্বজনীন মানবাধিকারের একজন চ্যাম্পিয়নও তিনি। কয়েক বছর ধরেই অসুস্থ ছিলেন টুটু। তাকে মাঝে মাঝেই দক্ষিণ আফ্রিকার ‘নৈতিক বিবেক’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এ ছাড়া বর্ণবাদী রাজনীতি দ্বারা দশকের পর দশক ধরে বিভক্ত জাতিকে তিনি একত্রিত করেছেন। এ জন্য তিনি মহান হয়ে আছেন। কোনো সহিংসতা ছাড়াই বর্ণবাদের বিরোধিতা করার জন্য ১৯৮৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হন। এর এক দশক পরে তিনি শাসকগোষ্ঠীর পতন প্রত্যক্ষ করেন এবং ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশনের চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিচ্ছিন্নতার সময়কালে সংঘটিত নৃশংসতা অনুসন্ধানে গঠন করা হয়েছিল এই কমিশন। সেইন্ট জর্জেসের সামনের সিঁড়ি থেকে তিনি বর্ণবাদ খতমের জন্য বহু মিছিল ও প্রচারণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। কারণ, সেইন্ট জর্জেস পরিচিত হয়ে উঠেছিল ‘পিপলস ক্যাথেড্রাল’ এবং জনগণের গণতন্ত্রের এক শক্তিশালী প্রতীক হিসেবে। এখানেই শেষ নয়, দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি নেলসন ম্যান্ডেলার দীর্ঘজীবনের বন্ধু ছিলেন ডেসমন্ড টুটু। দীর্ঘদিন তারা দক্ষিণ আফ্রিকার সোয়েতো শহরের ভিলাকাজি স্ট্রিটে বসবাস করতেন। বিশ্বের মধ্যে এটাই একমাত্র স্ট্রিট বা সড়ক, যেখানে শান্তিতে দু’জন নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর অবস্থান ছিল। জোহানেসবার্গ থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক ফাহমিদা মিলার বলছেন, ডেসমন্ড টুটুর মারা যাওয়ার খবরে ভেঙে পড়েছেন বহু নাগরিক। তাদের কাছে এ খবর যেন বড় এক ঝড়। তিনি এমন একজন ব্যক্তি, যার বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আছে বিপুল ভূমিকা। দক্ষিণ আফ্রিকাকে সব সময় তিনি একীভূত রাখার জন্য চেষ্টা করেছেন। বিশেষ করে দেশের উত্তেজনা ও জটিল সময়গুলোতে।